Aindrila Sharma: ‘ওদের ভালবাসার মতো ভালবাসা আমি আমার এই জীবনে দেখিনি’: ঐন্দ্রিলা শর্মার মা শিখাদেবী

Aindrila's Mother Speaks: ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মার সঙ্গে কথা বলেছে TV9 বাংলা। ছোটবেলা থেকে ঐন্দ্রিলা কেমন ছিলেন, কীভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের মেরুদণ্ড... সবটাই শেয়ার করছেন শিখাদেবী।

Aindrila Sharma: 'ওদের ভালবাসার মতো ভালবাসা আমি আমার এই জীবনে দেখিনি': ঐন্দ্রিলা শর্মার মা শিখাদেবী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 30, 2022 | 4:12 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

২০ নভেম্বর তারিখটা বহরমপুরের শর্মা পরিবারের কাছে বড্ড বেদনার। ২০২২ সাল, অর্থাৎ এ বছর, এই মাসেই, ঠিক ১০ দিন আগে তাঁরা হারিয়েছেন পরিবারের মেরুদণ্ডকে। দস্যি, সদা হাস্যময়ী, ডাকাবুকো মেয়ে ঐন্দ্রিলা শর্মাকে। যে ঐন্দ্রিলা দু’-দু’বার ক্যান্সারকে জয় করেছিলেন। নতুন করে বলার কিছু নেই। সকলেই জানেন, ঐন্দ্রিলা বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ‘জিয়নকাঠি’, ‘ভাগাড়’-এর মতো বেশ কিছু সিরিয়াল এবং ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন তিনি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সকলকে ভালবাসা দিয়ে গিয়েছেন। যন্ত্রণা সহ্য করে সারাক্ষণ হাসি মুখে থাকা ঐন্দ্রিলা ভালবাসা পেয়েওছেন সকলের। তবে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা যে কী, তা যিনি হারিয়েছেন, তিনিই জানেন… ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মার সঙ্গে কথা বলেছে TV9 বাংলা। ছোটবেলা থেকে ঐন্দ্রিলা কেমন ছিলেন, কীভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পরিবারের মেরুদণ্ড… সবটাই শেয়ার করছেন শিখাদেবী।

প্রেমিক সব্যসাচীর আদর্শ সঙ্গী… প্রেমের পরশ পেলেই মনের মধ্যে থেকে প্রেয়সীর জন্য স্নেহ, ভালবাসা এবং যত্নের জন্ম হতে পারে। প্রমাণ করেছিলেন ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচী। কিছুদিন আগে ফেসবুকে সদ্য হারানো কনিষ্ঠ-কন্যা এবং তাঁর প্রেমিকের একটি ভিডিয়ো শেয়ার করে শিখাদেবী লিখেছিলেন, “আমার সব্যর ঐন্দ্রিলা…”। মেয়ে ও তাঁর প্রেমের বন্ধন কেমন ছিল, তাই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শিখাদেবী এমন একটি ছবি তুলে ধরলেন, যা এতদিন সকলের কাছে অধরাই ছিল। গোটা দুনিয়া সব্য়র প্রেম দেখেছে এতকাল। আড়ালে ছিল ঐন্দ্রিলার প্রেম। শিখাদেবীর বর্ণিত টুকরো-টুকরো ঘটনা বলে গেলে সেই সবই। তিনি বললেন, “সব্যর শরীর খারাপ। খুব বড়সড় কিছু হয়নি যদিও। জানতে পারল ঐন্দ্রিলা। শুটিংয়ে ছিল। সব্যর অসুস্থতার কথা জেনেই একছুট্টে চলে এল মেয়েটা। খোঁজ করতে থাকে, সবচেয়ে ভাল ডাক্তার কে আছেন। তারপর সব্যকে নিজের স্কুটির পিছনে বসাল। নিজেই স্কুটি চালিয়ে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিল আমার ডাকাবুকো মেয়েটা। এগুলোই আমাদের সামনেই ঘটেছে। আজ ক্ষণে-ক্ষণে মনে পড়ে যাচ্ছে…”

সব্যকে দিয়ে লেখানো… বাংলা সিরিয়ালের অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরীর লেখালিখির হাত। এবং এই লেখালিখির পিছনে অনুপ্রেরণাও ঐন্দ্রিলাই। এ বারের বইমেলায় বই প্রকাশিত হয় ‘দলছুটের কলম’। এ দিকে ঐন্দ্রিলা বই পড়েন না। প্রথম লিখেই তাঁকে পড়ে শোনাতেন সব্যসাচী। শিখাদেবী বলেছেন, “সারারাত জেগে বই পড়ে শোনাত সব্য়সাচী। না শোনালে আমার মেয়েটাও গোঁ ধরত… বলত, ‘কী গো শোনালে না তো’…”। ফেসবুকে অনেক লেখা লিখেছিলেন সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলাই তাঁকে বলে-বলে লেখাতেন। শিখাদেবী বলেছেন, “সব্য বলছে, ও আর লিখবে না…বলেছে, যাঁর জন্য এত লেখা, সে-ই তো নেই…”। বইয়ের গল্প থেকে সিনেমা তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল হয়তো সব্যসাচীর। শিখাদেবী বলেছেন, “সেই সিনেমায় হয়তো ঐন্দ্রিলাই নায়িকা হত… জানি না… তবে ওদের ভালবাসার মতো ভালবাসা আমি আমার এই জীবনে দেখিনি…”

বহরমপুরের দিনগুলি… উত্তম শর্মা এবং শিখা শর্মার দুই কন্য়া ঐশ্বর্য এবং ঐন্দ্রিলা। দু’জনেই বড় হয়েছেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। সেখানেই লেখাপড়া করেছেন। স্কুলে ঐশ্বর্য ছিলেন চিরকালের শান্ত, লেখাপড়ায় মনোযোগী। ঐন্দ্রিলা ছিল স্কুলের জান। দুষ্টুমিও করতেন তিনি। শিখাদেবী বলেছেন, “আমার বড় মেয়েটা পড়ুয়া। ছোটটা ছিল দস্যি। প্রায়দিনই স্কুল থেকে গার্ডিয়ান কল হত ঐন্দ্রিলার জন্য। মারামারিও করেছে। কিন্তু ওকে ছাড়া কিছুই সম্পূর্ণ হতে না স্কুলে। এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে আমার ছোটটা ছিল চ্যাম্পিয়ন… নাচে, গানে, আবৃত্তিতে প্রথম… আজ সবই অতীত…” (ফোনের ওপারে দীর্ঘশ্বাস ধ্বনিত হল)

মায়ের প্রিয় শাল করলেন দান… বলে চলেন শিখাদেবী…। মানুষের যে কোনও বিপদে ঐন্দ্রিলাকে সবসময় পাশে পেতেন সকলে। কারও বিপদ শুনলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। শিখাদেবীর কথায়, “এমন একটা মেয়েকে ধরে রাখতে পারলাম না নিজের কাছে… একবার শীতকালে জানতে পারল কার-কার গায়ের শাল নেই। আমার প্রিয় শালটা নিয়ে গিয়ে একজনের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিল। আমি একটু রাগ করে বলেছিলাম, ‘কী রে, আর শাল পেলি না, ওটাই তোকে দিয়ে দিতে হল?’ ওর বাবা বলেছিল, ‘কী হয়েছে তাতে… আর একটা কিনে নাও’, আসলে আমরাও ওকে বাধা দিতাম না কোনও কিছুতে।”

দুর্গাপুজোয় নির্জলা উপোস… এবারের দুর্গাপুজোর সময়, এমনকী লক্ষ্মীপুজোর সময়ও নিজে হাতে পুজো করেছেন ঐন্দ্রিলা। তখন কে জানত আর কিছুদিন পরই তিনি থাকবেন না? দুর্গাপুজোয় নির্জলা উপোস করেছিলেন। মায়ের ভোগ নিয়ে আসতে পারে সেই যিনি সারাদিন জলটাও খাননি। নিজে হাতে ভোগ নিয়ে এসেছিলেন ঐন্দ্রিলাই। শিখাদেবী বলেন, “আমার মেয়েটা যখন কিছু মন দিয়ে করত, একেবারে গোটা মনটাই তাতে দিয়ে দিত। পুজোয় নির্জলা উপোস করেছিল। তারপরেও ঠাকুরের কী ওকে এভাবে নিয়ে নেওয়া ঠিক হল?”