Tulsi Chakraborty Birthday: বাসে যেতে যেতে নিজেকে আমার বাবা বলেছিলেন তুলসীদা: লিলি চক্রবর্তী
Tulsi Chakraborty-Lily Chakraborty: আজ অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীর ১২৩তম জন্মদিন। তাঁর স্মৃতিতে TV9 বাংলার জন্য কলম ধরলেন অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী।
আমি তুলসীদার সঙ্গে কাজ করেছি। অনেক ছবিতে কাজ করেছি। আমার জীবনের প্রথম নাটক ‘শ্রেয়সী’তে তুলসী চক্রবর্তীও ছিলেন। স্টার থিয়েটারে শো হত সেই নাটকের। একটি ছোট্ট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তুলসীদা। সেই ছোট্ট চরিত্রই কী সুন্দর করেছিলেন, আমার আজও মনে আছে। গান-টান দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিলেন।
আমার মনে পড়ে, তিনি আমাকে একবার বলেছিলেন, ‘আমি তো বাসে করে আসি, বাসে করেই বাড়ি ফিরি। থিয়েটার করার সময়ও বাসে চেপেই বাড়ি যাই। আমার তো গাড়ি চড়ার মতো টাকা নেই। বাসে করে আসতে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, নতুন মেয়ে এসেছে লিলি চক্রবর্তী, সে কি আপনার মেয়ে? আমি বলেছি, হ্যাঁ আমার মেয়ে। তুমি রাগ করলে না তো?’ আমি বলেছিলাম, ‘রাগ করার কী আছে। আপনি আমার বাবার মতোই তো। বলেছিলেন খুব ভাল করেছেন।’ এরকমই অনেক সুন্দর স্মৃতি আমার রয়েছে। খুব গল্প-টল্প করতেন তুলসীদা। অফ টাইমে ওঁর মুখে অনেক গল্প আমি শুনতাম।
তুলসী চক্রবর্তীকে অনেকেই বলতেন তিনি রান্নাঘরের হলুদ। তাঁকে ছাড়া কোনও ছবিই সম্পূর্ণ নয়। ওঁকে না নিলে সেই সিনেমা বিবর্ণ। যে কোনও চরিত্রেই তিনি অসামান্য ছিলেন। চেহারাই পালটে দিতেন গোটা ছবির। কত সুন্দর ছিল তাঁর অভিনয়। আমাকে জ্ঞানেশদা (জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়) বলেছিলেন, তুলসীদার গাড়ি চড়ার ক্ষমতা ছিল না। একটু রাত হয়ে গিয়েছিল। আর তখনকার দিনে রাতে কলকাতা শহরে বাস চলত না। চলত ট্যাক্সি। জ্ঞানেশদাকে ট্যাক্সি ডেকে দেওয়া হয়েছিল। টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে শুটিং চলছিল আমাদের। স্টুডিয়ো থেকে বেরিয়ে একটু এগোতেই দেখেন তুলসীদা হাঁটছেন। তিনি থাকতেন হাওড়া। টালিগঞ্জ থেকে হাওড়া যাচ্ছিলেন হেঁটে। ভাবুন একবার। কতখানি কষ্টকর বিষয়!
জ্ঞানেশদা থাকতেন ভবানীপুরে। বললেন, ‘তুলসীদা গাড়িতে উঠুন। আমি নামিয়ে দিচ্ছি।’ তুলসীদাকে জোর করে গাড়িতে তুলেছিলেন তিনি। দু’পা যেতেই তিনি বলেছিলেন, ‘জ্ঞানেশ আমাকে নামিয়ে দাও।’ কিন্তু জ্ঞানেশদা কিছুতেই নামাননি। শেষ পর্যন্ত হাওড়া ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে তুলসীদাকে নামিয়ে দিয়েছিলেন জ্ঞানেশদা। বলেছিলেন, এবার আপনি হেঁটে যান বাড়ি। হাওড়া রোডেরই ছোট্টখাট্ট বাড়িতে থাকতেন। এরকম অনেক গল্প শুনেছি তুলসীদার।
অনেক ভাল সময় কাটিয়েছি তুলসীদার সঙ্গে। খুব মজা করতেন। সুন্দর-সুন্দর গল্প শোনাতেন। সেগুলো আমরা গালে হাত দিয়ে বসে শুনতাম। বিশেষ করে থিয়েটারের অনেক গল্প বলতেন তুলসীদা। খুব মজা পেতাম আমি। রিহার্সালে যা অভিনয় করার, তাই করতেন। কিন্তু শোয়ের সময় কত ভ্যারাইটি দিয়ে যে বুঝিয়ে দিতেন, কী বলব!
আমার মনে আছে, একবার একটি বাচ্চাকে প্যারামবুলেটারে করে ঘুরিয়ে আনার সিন ছিল। কিন্তু ইচ্ছে করে ঘুরিয়ে, গান গেয়ে সিনটা করেছিলেন তিনি। পরিচালকও তুলসীদাকে বলে দেননি গান করুন। কিন্তু তুলসীদা তাঁর অভিনয়ে সেই সংযোজনগুলো করেছিলেন।
আগেরকার দিনে গ্রামের লোকেরা যাত্রা-থিয়েটারের শিল্পীদের তেমন পছন্দ করতেন না। তাঁরা মনে করতেন, শিল্পীরা তাঁদের পুকুরে স্নান করলে সেই জল অশুদ্ধ হয়ে যাবে। তুলসীদা বলতেন, ‘আমাদের কত কষ্ট জানো, এরকমভাবে আমাদের বাঁচতে হয়েছে’। এখন তো শিল্পীদের সকলে ভালবাসেন। একঝলক দেখার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন। কিন্তু তখন এরকমভাবেই তুলসীদাদের দিন কাটাতে হয়েছে।
(অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত)
গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ
আরও পড়ুন: Unmesh Ganguly: ‘আশিতে আসিও না’র ধাঁচে ইউটিউবার উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায় অভিনীত ওয়েব সিরিজ় ‘উলট পুরাণ’!
আরও পড়ুন: Kumar Sanu: প্রেমে প্রত্যাখ্যান, মাথা নিচু করে চলে এসেছিলেন শানু, শুনতে হয়েছিল অনেক কটু কথাও