Sandip Roy On Feluda: ‘এবারের ফেলুদা দেখে অনেকেই হয়তো অপছন্দ করবেন…’, সন্দীপ রায়

Feluda: মোবাইলটাকে বিন্দুমাত্রও হাইলাইট করা হয়নি। কয়েকটা ফোন এসেছে আর গিয়েছে মাত্র।

Sandip Roy On Feluda: 'এবারের ফেলুদা দেখে অনেকেই হয়তো অপছন্দ করবেন...', সন্দীপ রায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 22, 2022 | 2:52 PM

জয়িতা চন্দ্র

“বুঝে দেখ জটায়ুর কলমের জোর
ঘুরে গেছে রহস্য কাহিনীর মোড়
থোড় বড়ি খাড়া
লিখে তাড়াতাড়া
এইবারে লিখেছেন খাড়া বড়ি থোড়।”

-হত্যাপুরী

ফেলুদার মুখে জনপ্রিয় সংলাপ। গল্প ‘হত্যাপুরী’। এবার বড়পর্দায় এই সংলাপই শোনা যাবে অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত মুখে। সন্দীপ রায়ের ফ্রেমে এবার নতুন ফেলুদা। অতীতে মানিকপুত্রের হাত ধরে ফেলুদা হিসেবে ছোট ও বড়পর্দা মিলিয়ে এসেছেন সব্য়সাচী চক্রবর্তী ও আবির চট্টোপাধ্যায়। ফেলুদা বাছাই থেকে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা—ইন্দ্রনীলকে নিয়ে TV9 বাংলায় মুখ খুললেন পরিচালক সন্দীপ রায়।

কীভাবে বাছলেন এবারের নতুন ফেলুদা?

আমি তো বাছিনি। ইন্দ্রনীল বহুবার আমার কাছে এসে জানিয়েছিল, ও ফেলুদা করতে চায় ঠিক যেমন এক সময় বেণু (সব্যসাচী চক্রবর্তী) ফেলুদা করতে চেয়েছিল। চরিত্রটা ওর (সব্যসাচী ) উপর যেমন চাপিয়ে দেওয়া হয়নি, এবারও ঠিক তেমনই ঘটেছে ইন্দ্রনীলের ক্ষেত্রে। আমি ডেকে বলিনি যে, ‘তুমি ফেলুদা হবে?’ ও এসে বলেছিল, ‘আমি ফেলুদা হতে চাই, আপনি ভেবে দেখুন’। তা-ই আমি এগিয়েছি। এই খিদেটার খোঁজেই আমি ছিলাম।

ফেলুদা হিসেবে ক্যামেরার সামনে ইন্দ্রনীল প্রথমবার আসার আগে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন ওকে?

প্রথমেই বলেছিলাম, কাউকে অনুসরণ করবে না। কারও মতো হওয়ার চেষ্টা করবে না। নিজের মতো অভিনয় করবে। চিত্রনাট্য পড়, গল্পগুলো পড়। গল্পের মধ্যেই সমস্ত লেখা আছে। কারণ মজার বিষয় হল, বাবা যখন ফেলুদা লিখতে শুরু করেছিলেন (ফেলুদার প্রথম গল্প ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে), তখন কিন্তু নিছকই একটা গোয়েন্দা গল্প লিখবেন বলে লিখেছিলেন। ওটা নিয়ে যে পরবর্তীতে ধারাবহিকভাবে বাবা আরও লিখবেন, তেমন কোনও পরিকল্পনা তো ছিল না। কোনও ছক ছিল না, কোনও খসড়া ছিল না। পরে বাবা অনেককিছু যোগ করেছিলেন। তাই শুধু ফেলুদাই নয়, যিনি তোপসে হবেন, যিনি জটায়ু হবেন, সবার ক্ষেত্রেই আমি চাই অভিনয়ের আগে সবাই যেন গল্পটা ভাল করে পড়েন। ওখানেই সব লেখা আছে, আমায় কিছুই বলে দিতে হবে না।

পর্দায় ফেলুদার কোনও বদল  ঘটল? 

দেখুন বই আর ছবি, দু’টো আলাদা মাধ্যম। তাই উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছুটা তো ফারাক থাকবেই। আবার এটাও ভুললে চলবে না যে, গল্পটা এমন একজন লিখেছেন, যিনি বিশ্ববিখ্যাত একজন চিত্রনাট্যকার, ছবি নির্মাতা। ফলে গল্পগুলোকে তিনি সেভাবেই লিখেছেন। যাঁরা একটু বুদ্ধি ধরেন বা কল্পনা করতে পারেন, তাঁরা কিন্তু মন দিয়ে পড়লে, চোখের সামনে গল্পটা ঘটতে দেখতে পাবেন। আমিও চেষ্টা করেছি সেই ছবিটা যতটা সম্ভব এক রাখার। আবার আরও একটা বিষয় আমায় নজর রাখতে হয়েছিল, পুরনো কলকাতা, ফেলুদা যে কলকাতার মানুষ, তা পর্দায় ফুটিয়ে তোলাটা বেশ খরচসাপেক্ষ।

তখনকার কলকাতা দেখানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এত দ্রুত শহরের ট্রোপোগ্রাফিটার পরিবর্তন হয়েছে, যে সেটা দেখানো খুব কঠিন। তাই আমরা গল্পটাকে একটু এগিয়ে এনেছি। তবে আগে থেকেই বলে দিচ্ছি, অনেকেই হয়তো এটা অপছন্দ করবেন যে, আমি শেষমেশ ফেলুকে মোবাইল দিয়েছি। আগে যেটা হতো, ফেলুর হাতে মোবাইল ছিল না। কিন্তু ফেলু জানে মোবাইল কী। এবার তার হাতে একটা মোবাইল দেখা যাবে। তবে মোবাইলটাকে বিন্দুমাত্রও হাইলাইট করা হয়নি। কয়েকটা ফোন এসেছে আর গিয়েছে মাত্র। আমার ফেলু সোশ্যাল মিডিয়া করে না (এর সঙ্গে হেসে তাঁর সংযোজন, “হয়তো কোনও সময় করে, আমি তা দেখাচ্ছি না”)। তবে এই সিদ্ধান্তটুকু নিয়েছি, যাতে নতুন প্রজন্ম গল্পটা ধরতে পারে। কানেক্ট করতে পারে.।

আবির চট্টোপাধ্যায় ফিরলেন না কেন? 

কারণ ও ব্যোমকেশ করল। ও যদি কিরীটি করত, তা-ও আমি নিতাম না। এ তো খুব সোজা হিসেব। চরিত্র হিসেবে আবির কখনও ফেলু হিসেবেও গোয়েন্দা, আবার কখনও ব্যোমকেশ হিসেবেও গোয়েন্দা, তা কী করে হয়? বেণু (সব্যসাচী)  এটা ভীষণ মেনে চলত। গোয়েন্দার অন্যান্য় চরিত্র ও ফিরিয়ে দিত। আমি এখনও মানব না যে, ইন্দ্রনীল এখন ফেলুদা করছে, পরবর্তীতে আবার অন্য গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করবে। তাহলে ভীষণ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস হয়ে যায়। তুমি আগে করেছ, কেছ। ঠিক আছে। একবার ফেলুদা হয়ে গেলে আর নয়, এটাই আমার শর্ত।

ইন্দ্রনীল করতে চাইলেন, আপনি রাজিও হলেন। এরপর যখন ক্যামেরা রোল হল, ফ্রেমের জন্য ইন্দ্রনীল ঠিক কতটা তৈরি হয়ে এসেছিল? 

খুব ভাল। আমি চট করে ছাড়ি না। বদনাম বা সুনাম যাই-ই হোক, এটা আমার আছে। আমি চাই যে, আমি যেভাবে হোমওয়ার্ক করেছি, যাঁরা অভিনয় করছেন, তাঁরাও যাতে নিজের হোমওয়ার্কটা করেন। সেক্ষেত্রে আমার ভাল লেগেছে। ও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছে। আমার কাছে তো বাধ্য ছেলে। অন্যক্ষেত্রে কোথায় কেমন জানি না, তবে আমার ফ্রেমে ও ফেলু মিত্তির। ইন্দ্রনীলের সঙ্গে তো আমি আগে কাজ করিনি। আমার তো বেশ লাগল। সব মিলিয়ে ‘হত্যাপুরী’র এই পরিবারটা বেশ জমজমাট।

ফেলুদার গল্পের একটা বড় অঙ্গ থ্রি মাস্কেটিয়ার্স (ফেলুদা, তোপসে, জটায়ু)। এই নতুন ত্রয়ীর তালমিল শুটিং-এ কতটা দানা বেঁধেছে?

এই বিষয়টাতে আমি ভীষণ খেয়াল রেখেছিলাম। এদের প্রত্যেকের সম্পর্কের অভ্যন্তরীণ সমীকরণটা যাতে ঠিক হয়… খুব জোরদার বোঝাপড়া প্রয়োজন। গল্পে বারে বারে এদের সম্পর্কের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কাজেই এটা আমি ভীষণভাবে খেয়াল রেখেছিলাম: এদের যেন আলাদা করে অভিনয় করতে না হয়। যাতে খুব সহজেই অভিনয়টা ওদের মধ্যে চলে আসে। সে দিক থেকে আমার মনে হয়, আমি সন্তুষ্ট। তিনজনই খুব জমিয়ে কাজ করেছে। আমি এই কাস্টিং-এ ভীষণ খুশি। যদি দর্শকেরা নেয়, ফেলুভক্তরা নেয়, তাহলেই আমরা সব থেকে বেশি আনন্দ পাব। আমি এই কাস্টিং-এ আবার কাজ করতে চাই। ছবির শেষেও ইঙ্গিত রয়েছে, ফেলুদা ফিরবে, আমরা একই টিমে আবার ফিরব।