পয়লা বৈশাখে জলসা বসত বসুশ্রীতে, উত্তম ঢুকতেন সিনেমা হলের পিছনের দরজা দিয়ে! জানেন কেন?
ছবি মহরতের পাশাপাশি, টলিউডের তারকাদের সঙ্গে নিয়ে বিশাল জলসার আয়োজন হত। আর এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতেন বসুশ্রী সিনেমা হলের মালিক মন্টু বসু। তাঁর তত্ত্বাবধানেই পয়লার জলসায় জমে উঠত টলিউড।

পাঁচের দশকে টলিউড ইন্ডাস্ট্রির পয়লা বৈশাখ ছিল দেখার মতো। ছবি মহরতের পাশাপাশি, টলিউডের তারকাদের সঙ্গে নিয়ে বিশাল জলসার আয়োজন হত। আর এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতেন বসুশ্রী সিনেমা হলের মালিক মন্টু বসু। তাঁর তত্ত্বাবধানেই পয়লার জলসায় জমে উঠত টলিউড। কিন্তু এই জলসাতেই উত্তম একটা কাণ্ড করতেন। আর মহানায়কের সেই কাণ্ড দেখে হতবাক হতেন টলিউডের অন্যান্য তারকারা।
ব্য়াপারটা একটু খোলসা করে বলা যাক। সালটা ১৯৫০। একদিন সন্ধ্যাবেলায় আড্ডায় বসেছেন শ্যামল মিত্র, ভানু বন্দ্যোপাধ্য়ায়, অজিত চট্টোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। সেই আড্ডাতেই ঠিক হল, টলিউডের লোকজনকে নিয়ে একটা জলসার প্ল্যান। পয়লা বৈশাখেই হবে সেই জলসা। মন্টু বসুও রাজি হয়ে গেলেন। ব্যস, বসুশ্রীর গায়ে নতুন রঙের প্রলেপ পড়তে শুরু করল। নববর্ষকে মাথায় রেখে সেজে উঠল গোটা বসুশ্রী। কলকাতা শহরে ছড়িয়ে পড়ল সেই জলসার কথা। যে জলসায় মঞ্চে থাকবে বাংলা সিনেমার সব কিংবদন্তিরা। আর দর্শকরা বিনা টিকিটেই তা সেই জলসা দেখতে পাবেন।
অনুরাগীদের জন্য এই সুযোগই ছিল পয়লা বৈশাখের বাড়তি পাওনা। কাছ থেকে প্রিয় অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দেখতে পাওয়ার সুযোগ মানে হাতে চাঁদ পাওয়া। তাই তো সকাল থেকে বসুশ্রীর সামনে পড়ত লম্বা লাইন। সিনেমা হলের দরজা খুলতেই হাউজফুল। যাঁরা হলে ঢোকার সুযোগ পেতেন না, তাঁদের জন্য়ও থাকত বিশেষ ব্যবস্থা। হলের সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে মাইকের বন্দোবস্ত করা হত। সেই মাইকেই শোনা যেত, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের কণ্ঠ।
এই খবরটিও পড়ুন
জানা যায়, এই অনুষ্ঠানে উত্তম কুমারও গলা ছেড়ে গান গাইতেন। কিন্তু এই জলসাতে তাঁর এন্ট্রিটাই ছিল অভিনব। সেই সময় বিনোদন মূলক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় উত্তমের সেই কাণ্ড। অনুরাগীদের ভিড় থেকে বাঁচতে চুপচাপ বসুশ্রীর পিছনের দরজায় হাজির হতেন নাকি উত্তম। বসুশ্রী হলের সামনে যখন মহানায়কের এক ঝলক পেতে অনুরাগীরা মত্ত, ঠিক সেই সময়ই বসুশ্রীর পিছন দরজা দিয়ে চুপি চুপি হলে ঢুকে পড়তেন তিনি। জানা যায় অনুরাগীদের ভিড় থেকে বাঁচতেই উত্তম এমনটি করতেন। তবে হলের ভিতরে ঢুকে, মঞ্চে উঠেই মাইক হাতে নিয়ে সবাইকে জানাতেন নতুন বছরের শুভেচ্ছা। সিনেমা হল ও তার বাইরে দর্শকরা তখন উত্তমের নামে হইচই ফেলে দিতেন। দর্শকদের কাছে উত্তমের সেই ঝলক, সেই কণ্ঠ ছিল পয়লা বৈশাখের সবচেয়ে বড় উপহার।





