উত্তম কুমার এই রোলটা করবেন শুনেই উপহাসের হাসি উৎপল দত্তের মুখে, এরপর মহানায়ক যা করলেন তাতে সব হাসি মিলিয়ে গিয়েছিল উৎপলের
এ যেন ওয়ার অফ টাইটান্স। সহজ কথায় বললে শেয়ানে শেয়ানে যুদ্ধ। একদিকে উৎপল দত্তর মতো দাপুটে অভিনয়, অন্যদিকে মহানায়ক ম্যাজিক। দুই কিংবদন্তি অভিনেতা যে সামনা সামনি এলে অল্প বিস্তর খুটখাট লাগবে, তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন পরিচালক।

এ যেন ওয়ার অফ টাইটান্স। সহজ কথায় বললে শেয়ানে শেয়ানে যুদ্ধ। একদিকে উৎপল দত্তর মতো দাপুটে অভিনয়, অন্যদিকে মহানায়ক ম্যাজিক। দুই কিংবদন্তি অভিনেতা যে সামনা সামনি এলে অল্প বিস্তর খুটখাট লাগবে, তা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন সপ্তপদী ছবির পরিচালক অজয় কর। তবুও ছবির প্রয়োজনে এটুকু ঝুঁকি তো নিতেই হয়েছিল। ভাগ্যিস নিয়েছিলেন, এই ঝুঁকির জেরেই তৈরি হয় টলিউডের এক ইতিহাস।
সালটা ১৯৬১ সাল। মুক্তি পায় উত্তম-সুচিত্রার কালজয়ী ছবি সপ্তপদী। এই ছবি বাংলা ছবির সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। এই ছবিতে সুচিত্রার রিনা ব্রাউন এবং উত্তমের কৃষেন্দু চরিত্র আজও দর্শকদের নাড়া দেয়। সপ্তপদীর এই পথ যদি না শেষ হয় গানটি তো আজও সেরা প্রেমের গান। তবে এই ছবির এক দৃশ্য হইচই ফেলে দিয়েছিল সিনে দুনিয়ায়। যেখানে মঞ্চে ওথেলো উত্তম এবং ডেস্টিমোনা সুচিত্রা। এই দৃ্শ্য পরিচালক অজয় বুঝেছিলেন, ওথলো চরিত্রে উত্তমের কণ্ঠ ঠিক মিলমিশ খাবে না। তাই অজয় গেলেন উৎপল দত্তর কাছে। উৎপল সংলাপটি বলবেন, আর লিপ দেবেন উত্তম। অজয় করের প্ল্যান ছিল তেমনই। কিন্তু ওথলো করবে উত্তম! পরিচালক অজয় করের মুখে এমন কথা শুনে হেসে উঠেছিলেন উৎপল। সেই সময়কার এক বিনোদনমূলক ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উৎপল দত্ত জানিয়ে ছিলেন, উত্তমরের, ওথেলো করার কথা তাঁর কাছে বেশ হাস্যকর মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে উত্তম যেটা করেছিলেন, তা দেখে রীতিমতো বোমকে গিয়েছিলেন।
ঠিক কী ঘটেছিল?
এই খবরটিও পড়ুন
উৎপল দত্তর মনে হয়েছিল, শেক্সপিয়রের নাটকে অভিনয় করাটা অতটাও সহজ নয়। কেননা, সেই নাটকের সংলাপ বলার ক্ষেত্রে তার নির্দিষ্ট তাল, ছন্দ ও সুর রয়েছে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঠিক অভিব্যক্তিও প্রয়োজন। উৎপল প্রথমে ভেবেছিলেন উত্তমের দ্বারা একাজ হবে না। আর সেই ধারনাটা অজয় করকে স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন উৎপল দত্ত।
উৎপল দত্তর এই ধারনার কথা জানতে পারেন মহানায়ক। তিনি সুযোগ করে উৎপল দত্তর সঙ্গে দেখা করতে যান। উৎপলকে জানান, পুরো সংলাপটি তিনি যেন রেকর্ড করে উত্তমকে দেন। সেটা প্র্যাকটিস করে, উৎপলের সামনেই গোটা দৃশ্য অভিনয় করবেন। বিষয়টি অবাক লাগলেও, উত্তমের এই কথায় রাজি হন তিনি। মহানায়ক মাত্র দুটো দিন সময় নিয়েছিলেন। এরপর পুরো দৃশ্যটি অভিনয় করেও দেখিয়ে ছিলেন। উৎপল সেদিন অপলক দেখেছিলেন উত্তমের অভিনয়। কুর্ণিশ জানিয়ে ছিলেন মহানায়কের অভিনয় প্রতিভাকে। এরপরের ঘটনা তো ইতিহাস। আজও সপ্তপদীর সেই দৃশ্য মুগ্ধ করে সিনেপ্রেমীদের। যে দৃশ্যে দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন উত্তম এবং কণ্ঠ ছিল উৎপল দত্তর।





