Suicide: অবসাদের জেরে আত্মহনন, চিনবেন কী করে আত্মহত্যার লক্ষণগুলো? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ…

Mental Health: মানসিক অবসাদের জেরে আত্মহত্যা নতুন ঘটনা হয়। কিন্তু এমন ঘটনা বার বার কেন ঘটছে সেটা নিয়েই সচেতন হওয়া জরুরি।

Suicide: অবসাদের জেরে আত্মহনন, চিনবেন কী করে আত্মহত্যার লক্ষণগুলো? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ...
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 19, 2022 | 2:45 PM

ফের এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা। এবার মালদহের আরএন রায় গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী শম্পা হালদার। এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে। কয়েক নম্বরের জন্য পাশ করতে পারেনি। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন ধরেই উচ্চমাধ্যমিকে ফেল করার পড়ুয়াদের লাগাতার আন্দোলন দেখা যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। আন্দোলনের আঁচ দেখা যায় মালদহতেও। সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল শম্পাকে। শনিবার বাড়ির ছাদে চিলেকোঠায় ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান মানসিক অবসাদের জেরে আত্মহত্যা করেছেন ওই ছাত্রী।

মানসিক অবসাদের জেরে আত্মহত্যা নতুন ঘটনা হয়। কিন্তু এমন ঘটনা বার বার কেন ঘটছে সেটা নিয়েই সচেতন হওয়া জরুরি। শম্পার বাবা খুশি হালদার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “পাশ করানোর দাবিতে ওরা বেশ কয়েকদিন আন্দোলন করছিল। ১-২ নম্বরের জন্য কেন ফেল করানো হবে, সেই দাবিকে সামনে রেখেই চলছিল ওদের আন্দোলন। কিন্তু কোনও কাজ না হওয়াতেই অবসাদে ভুগছিল।”

এই অবসাদের জেরে আত্মহত্যার ঘটনার প্রসঙ্গে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি (আইপিও)-র শিক্ষক-চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি-র সুইসাইড প্রিভেনশন সেল-এর কো-অর্ডিনেটর সুজিত সরখেলের সঙ্গে।

গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মহত্যার চুলচেরা বিশ্লেষণ কি আদৌ কোনও প্রভাব ফেলে হতাশাগ্রস্ত বা বিষাদগ্রস্ত মানুষের মধ্যে?

অবশ্যই, আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের উপর এই ধরনের বিষয় প্রভাব ফেলে। চিকিৎসার ভাষায় একে বলে সোশ্যাল লার্নিং থিওরি। অর্থাৎ এমন কোনও ব্যক্তি যাকে আমি শ্রদ্ধা করি বা যার দ্বারা আমি প্রভাবিত (এটা কোনও বিখ্যাত ব্যক্তিও হতে পারে), সেই ব্যক্তি যদি কোনও বিশেষ কাজ করে তাহলে চেষ্টা করি সেটা অনুকরণ করতে। বহু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গণমাধ্যমে যদি কোনও আত্মহত্যার ঘটনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে এগুলো আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষদের উপর প্রভাব ফেলে।

কেউ যদি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে কোন-কোন লক্ষণকে নজরে রাখতে হবে?

কেউ যদি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠেন, তার ক্ষেত্রে অবশ্যই কয়েকটা জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন ধরুন, সে যদি হঠাৎ করে কারও সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় বা কমিয়ে দেয়। নিজেকে গুটিয়ে নেয়, মানুষের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দেয়। ধরুন খুব কাছের জিনিস কাউকে দান করে, কিংবা কারও নামে লিখে দিচ্ছে- এই ধরনের বিষয়গুলো আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও মানসিক অবসাদ, খুব বেশি নেশা করা (যে নেশা করত না, সে তার হঠাৎ করে প্রচণ্ড বেশি নেশা শুরু করেছে), ডায়েরি কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মহত্যার কথা বলা, নিজের যত্ন না নেওয়া, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া এই ধরনের লক্ষণগুলো অবহেলা করা উচিত নয়। পাশাপাশি কেউ যদি বলে ‘বেঁচে থেকে আর লাভ নেই’, তাহলে সতর্ক থাকুন। এই ধরনের লক্ষণগুলো অবশ্যই নজরে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে।

এক্ষেত্রে কোনও বিশেষ লক্ষণ আছে কি?

দুটো বিশেষ লক্ষণকে খেয়াল রাখতে হবে। এক, নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে গুটিয়ে নেওয়া, কারও সঙ্গে কথা না বলা, ঘরের দরজা বন্ধ করে আলাদা থাকা, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেওয়া- এটা খুব ভয়ঙ্কর লক্ষণ। আরেকটি লক্ষণ হল, ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেউ যদি একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কিন্তু কালক্রমে বেঁচে যান তাহলে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে সে আবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে। এটাকে খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটা বিশেষ লক্ষণ হল, যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে অবসাদে ভোগে এবং হঠাৎ করে সে সব কিছু ভুলে গিয়ে হাসি-খেলায় মেতে ওঠে, যেন সে জীবনের সব সমস্যার সমাধান পেয়ে গেছে। এই ধরনের লক্ষণকে নজরে রাখতে হবে।

ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভে ২০১৬ অনুযায়ী, কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেশের বাকি অংশের তুলনায় অনেক বেশি। এর পিছনে কী কারণ রয়েছে?

কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গের সমীকরণটা একটু আলাদা। সংখ্যার নিরিখে দেখলে ১ থেকে ৪-এর মধ্যেই চলে আসবে। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিচার করলে পশ্চিমবঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতা মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে। সেই দিক থেকে কেরালাতে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। বরং উত্তর ও পূর্বের রাজ্যগুলোর তুলনায় দক্ষিণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যদিও এর মূল কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।