TB Diagnosis: কোভিডকালে দেশের ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষের যক্ষ্মার চিকিত্সাই হয়নি! সতর্কবার্তা গবেষকদের
TB diagnosis in 2020: কোভিড অতিমারির কারণে যক্ষ্মা নির্ণয় করতে দেরি হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমানে এই রোগ নির্ণয় করতে ও নিরাময়ের দিকে জোর দেওয়া উচিত।
সমীক্ষা বলছে, কোভিড অতিমারির (COVID 19 Pandemic) কারণে ২০২০ সালে ভারতে প্রায় পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ যক্ষ্মা নির্ণয় (TB Diagnosis) করতে দেরি হয়েছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা অনুসারে, কোভিড অতিমারির জেরে ২০২০ সালে ভারত-সহ আরও ৪৫টি দেশে প্রায় ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের যক্ষ্মা নির্ণয় করতেই বিলম্ব (TB Diagnosis Delay) হয়ে গিয়েছে। বিএমসি মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে, দেশের অর্ধেকেরও বেশি শিশুদের মধ্যে এর অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এও বলা হয়েছে, মারণরোগের কারণে দেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ, যার মধ্য়ে যাদের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি, তাদের এই রোগের ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্য়াল মেডিসিন-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, সারা বিশ্বের ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশগুলিতে যক্ষ্মার ঝুঁকি সবচেয়ে প্রবল। কোভিড অতিমারির কারণে যক্ষ্মা নির্ণয় করতে দেরি হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমানে এই রোগ নির্ণয় করতে ও নিরাময়ের দিকে জোর দেওয়া উচিত। কোভিডের দৌরাত্ম্য় তুলনামূলকভাবে হ্রাস পাওয়ায় যক্ষ্মা সনাক্তকরণের প্রচেষ্টায় অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যেই টিবি বা যক্ষ্মা রোগ সনাক্ত ও তার নির্দিষ্ট চিকিত্সা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অতিমারি সামলা দেওয়ার সময় যে অব্যবস্থা ও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল, যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে এর থেকেও বাজে অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
গবেষণার প্রধান লেখক ফিন ম্যাককুয়েড জানিয়েছেন, আমরা যদি টিবি বা যক্ষ্মায় আক্রান্তদের উপর কোভিড ১৯-এর প্রভাবকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি না সেদিকেই নজর রাখা হচ্ছে। এটা গুরুত্বপূর্ণও বটে। কিন্তু আক্রান্তদের দিকে সবচেয়ে বেশি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। শুধু রোগের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করলেই চলবে না, যক্ষ্মার মত অসুখ যাতে নির্মূল হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশগুলিতে কতগুলি যক্ষ্মায় আক্রান্তরা রয়েছেন, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালান। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও। সমীক্ষা অনুসারে পরিসংখ্য়ান বলছে, গোটা বিশ্বে, কোভিড অতিমারির জেরে প্রায় ৫,১১,৫৪৬ মহিলা ও ৮৬৩,৯১৬ পুরুষের যক্ষ্মা সনাক্ত করা গিয়েছে অনেক পরে।
প্রসঙ্গত, এই সমীক্ষায় বয়স বা লিঙ্গেপ ভিত্তিতে আশঙ্কার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই সমীক্ষায় আরও একটি তথ্য় প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, দেশে অর্ধেকেরও বেশি (৫১.১ শতাংশ) গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা সবচেয়ে বেশি এই কঠিন রোগ নির্ণয় বা সনাক্ত করতে দেরি হয়েছে। তাতে শিশুদের জীবনের উপরও প্রভাব তৈরি হয়েছে।
গবেষণার রিপোর্ট অনুসারে, অতিমারির জেরে দীর্ঘমেয়াদী জনস্বাস্থ্যের প্রভাব-সহ বহু সংখ্যক যক্ষ্মা আক্রান্তদের সঠিক চিকিত্সা না করা ও অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ হল যৌনতা। বিশ্বব্যাপী এই সংক্রমক রোগে মৃত্যু দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যার জন্য দায়ী । তা সত্ত্বেও যক্ষ্মা সনাক্তকরণের হার কম, যত্নের অভাব, অসচেতনতার জন্য এই রোগের প্রকোপ ফের বাড়তে চলেছে। বিশেষ করে পুরুষ, প্রবীণ ও শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।