Diabetes: রেড ওয়াইনের গুণেই হবে জব্দ! ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ তো বটেই, কমবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও

Health Benefits of Red Wine: জার্নাল অব ফুড বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে যদৃচ্ছভাবে নির্বাচিত হোয়াইট ওয়াইনের তুলনায় রেড ওয়াইনে উল্লেখযোগ্যভাবে আলফা গ্লুকোসাইডেজ-এর সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে।

Diabetes: রেড ওয়াইনের গুণেই হবে জব্দ! ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ তো বটেই, কমবে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 22, 2022 | 7:41 AM

ডায়াবেটিসের (Diabetes) রোগী যে একটু শখ করে প্রিয় পানীয়ে দু’চুমুক দেবেন তার উপায় কোথায়! মদ্যপানের কুফল সম্পর্কে সকলেই অবহিত। ফলে মদ্যপান (Alcohol) করতে গেলেই একদিকে বিবেকের দংশন যেমন থাকে তেমনই থাকে স্বজনের সতর্কবাণীর খোঁচা। তবে মাঝেমধ্যে যাঁরা পানপাত্রে ঠোঁট ছোঁয়াতে চান তাঁদের জন্য কয়েকটি সমীক্ষা কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছে। গবেষণা অনুসারে, জটিল শারীরিক সমস্যা নিয়ে যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁরা চাইলে একটি নির্দিষ্ট পানীয় দিয়ে খানিক নিশ্চিন্তে গলা ভেজাতে পারেন। এমনিতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস ( Type 2 Diabetes) হলে রোগীকে জীবনযাত্রা আমূল পাল্টে ফেলতে হয়। না হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রশ্ন হল, ডায়াবেটিস হয় কেন? সাধারণভাবে বললে, প্যাংক্রিয়াসের বিটা সেল ইনসুলিন নামে বিশেষ একটি হর্মোন উৎপাদন করে। ইনসুলিন হর্মোন কোষে কোষে গ্লুকোজ পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। কোনওভাবে বিটা সেল পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারলে তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা গিয়েছে, বিটা সেল ইনসুলিন তৈরি করতে পারলেও তা সঠিকভাবে শরীরে কাজ করতে পারে না। এই সমস্যাকে বলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এই কারণেও রক্তে বেড়ে যায় শর্করার মাত্রা। ডায়াবেটিস হতে পারে এভাবেও।

হাই ব্লাডসুগার অথবা হাইপারগ্লাইসিমিয়ার চিকিৎসা না হলে শরীরে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পা, চোখ ও শরীরের বিভিন্ন রক্তবাহী নালিকার ভয়ঙ্কর ক্ষতিসাধন করে রক্তের অতিরিক্ত শর্করা। ফলে বৃদ্ধি পায় স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা। এমতাবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগীকে একাধিক নিয়ম মেনে জীবনযাপন করতে হয়। ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় এবং ডায়াবেটিস.কো. ইউকে-এর রেফারেন্সে দেখা গিয়েছে, অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণ কমিয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে রেড ওয়াইন!গবেষকরা জানাচ্ছেন, কিছু উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রস্তুত খাদ্যবস্তুতে আলফা অ্যামাইলেজ এবং আলফা গ্লকোসাইডেস ইনহিবিটরস-এর সন্ধান মিলেছে যা কার্যকরভাবে শর্করা ভাঙার প্রক্রিয়ায় বাধা দান করে অন্ত্রে গ্লুকোজের শোষণ রোধ করছে।

বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাঁরা চার ধরনের রেড ওয়াইন এবং হোয়াইট ওয়াইন ব্যবহার করেছেন। সেইসঙ্গে তাঁরা চারটি ভিন্ন ধরনের চা নিয়েও গবেষণা করেছেন। এরপর গবেষণাগারে নমুনাগুলি পরীক্ষাও করা হয়েছে। জার্নাল অব ফুড বায়োকেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে যদৃচ্ছভাবে নির্বাচিত হোয়াইট ওয়াইনের তুলনায় রেড ওয়াইনে উল্লেখযোগ্যভাবে আলফা গ্লুকোসাইডেজ-এর সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে।

চা এবং ওয়াইনের নির্যাসে আলফা গ্লুকোসাইডেস ইনহিবিটরের কার্যকলাপ এবং ফেনোলিক উপাদানের (উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া বিশেষ উপাদান যার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর মতো কার্যকারিতা রয়েছে) কার্যকলাপ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকলাপ এবং ফেনোলিক প্রোফাইল পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখানেই শেষ নয়, ওই নির্যাসে আলফা অ্যামাইলেজ ইনহিবিটরের কার্যকলাপ ছিল সামান্য বা প্রায় ছিল না বললেই চলে। ফলে অপাচ্য স্টার্চ থেকে শরীরে বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানোর সম্ভাবনাও লক্ষ করা গিয়েছে। হাইপারগ্লাইসিমিয়া এবং শরীরে অক্সিডেশনসম্পর্কিত ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া হ্রাস সহ অপাচ্য স্টার্চ থেকে হওয়া অজীর্ণজনিত সমস্যা কমানোর কারণে এই গবেষণা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

গবেষণার সারমর্ম এই যে— টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া খাদ্য এবং উদ্ভিজ্জ দ্রব্যজাত খাদ্যবস্তু অনেক বেশি কার্যকরী। কারণ শরীরে এই ধরনের খাদ্য সহজেই পাচিত হয় ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও কম থাকে। এখানেই শেষ নয়। চা এবং ওয়াইনে একাধিক জৈব সক্রিয় উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলির টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং অক্সিডেটিভ জটিলতার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ডায়াবেটিস.কো.ইউকে জানাচ্ছে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে তবেই খাবারের সঙ্গে বা পরে সংযম রেখে অ্যালকোহল পান করার কথা ভাবা যেতে পারে। তবে বহু বিশেষজ্ঞরা বলছেন গবেষণার পর্যায়ে থাকা কোনও বিষয় নিয়ে এখনই নিশ্চিত মতামত দেওয়া উচিত নয়। সংযম না থাকলে অ্যালকোহল পান না করাই উচিত। বরং একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই ভালো থাকার একমাত্র উপায়। এছাড়া যে কোনও সুস্থ মানুষের উচিত ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া। ডায়াবেটিসে ঝুঁকি বাড়ায় যেসব বিষয়—

• বয়স যদি ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে হয়। দক্ষিণ-এশিয়ার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির বয়স কিন্তু ২৫!

• বাবা-মা, ভাই, বোনের ডায়াবেটিস থাকলে ওই পরিবারের সুস্থ সদস্যটিরও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

• মাত্রাতিরিক্ত ওজন থাকলে বা স্থূলত্বের সমস্যায় ভুগলে।

• এশিয়ান, আফ্রিকান-ক্যারাবিয়ান অথবা কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের এই অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

মনে রাখবেন

ডায়াবেটিসকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। কারণ এই রোগ খুব ধীরে ধীরে শরীরে প্রভাব বিস্তার করে। তাই চট করে উপসর্গ বোঝা যায় না। ফলে রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা নিয়ে রোগীর অসুখ ধরা পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

রোগ লক্ষণ

• স্বাভাবিকের থেকে বেশিমাত্রায় ঘনঘন ইউরিনের বেগ আসা। বিশেষ করে রাতে প্রায় প্রতিদিনই ঘুম থেকে উঠে বারবার টয়লেট যেতে হচ্ছে কি না খেয়াল করুন।

• সবসময় তৃষ্ণার্ত বোধ করা।

• শরীরে সবসময় একটা ক্লান্তিভাব।

• দ্রুত ওজন কমতে থাকা।

• গোপনাঙ্গের চারপাশে চুলকানি।

• শরীরের কোনও অংশে ক্ষত তৈরি হলে তা সহজে সারতে চায় না।

• ঘোলাটে দৃষ্টি।

উপরিউক্ত উপসর্গগুলির মধ্যে যে কোনও একটি শরীরে প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।