AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Hikikomori: এক বিরল রোগের শিকার জাপানের ১৫ লক্ষ মানুষ, অন্ধকারে দেশের ভবিষ্যৎ

Hikikomori in Japan: সমীক্ষায় আক্রান্তদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণেই মূলত তাঁরা সমাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।

Hikikomori: এক বিরল রোগের শিকার জাপানের ১৫ লক্ষ মানুষ, অন্ধকারে দেশের ভবিষ্যৎ
এক বিরল রোগের শিকার জাপানের ১৫ লক্ষ মানুষ, অন্ধকারে দেশের ভবিষ্যৎImage Credit: প্রতিকী ছবি: অভিজিৎ বিশ্বাস
| Edited By: | Updated on: Apr 09, 2023 | 9:41 AM
Share

১৯৯৮ সালে জাপানি মনস্তত্ত্ববিদ তামাকি সাইতো তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘সোশ্যাল উইথড্রয়াল—অ্যাডোলেসেন্স উইদাউট এন্ড’ বইয়ে যে শব্দবন্ধের কথা প্রথম উল্লেখ করেছিলেন, ২৫ বছর পর রোগ হয়ে বাস্তবে ফিরে এল তা-ই। শব্দবন্ধটি ছিল ‘হিকিকোমোরি (Hikikomori)‘, যার অর্থ সোশ্যাল উইথড্রয়াল। অর্থাৎ সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ধীরে-ধীরে সকলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একপ্রকার ‘আইসোলেশন’-এ থাকা। যে জাপানের ওকিনাওয়া (Okinawa) দ্বীপের বাসিন্দাদের লাইফস্টাইলকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে বিখ্যাত বই ‘ইকিগাই’ (Ikigai: The Japanese Secret to a Long and Happy Life), সেই জাপানেরই ১৫ লক্ষ মানুষ এই মুহূর্তে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। আর সেই রোগই হল ‘হিকিকোমোরি’, অর্থাৎ সোশ্যাল উইথড্রয়াল।

দেশের একটা বড় অংশকে গ্রাস করেছে সোশ্যাল উইথড্রয়াল। সমাজ থেকে মুখ ফিরিয়েছেন তাঁরা। বদ্ধ চার দেওয়ালে নিজেদের একপ্রকার বন্দি করে রেখেছেন। সমাজের আলোয় তাঁরা আর ফিরতে চান না। ক্রমে অবসাদে ডুবে যাচ্ছেন। উৎকণ্ঠা, ভয়ে তিলে-তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছেন। কোভিড (Covid 19)-এর জেরে সামাজিক দূরত্ব, কাজ হারানো, ব্য়ক্তিগত জীবনে আঘাত ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়কে রোগের কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। ইতিমধ্য়েই জাপান সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ করেছে। চলছে একাধিক সমীক্ষা। লক্ষ্য একটাই: এই রোগের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করা।

কী এই বিশেষ রোগ হিকিকোমোরি ? বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগে মূলত অবসাদের শিকার হন মানুষজন। কারণে-অকারণে উৎকন্ঠা, ভয়, সমাজের প্রতি ঘৃণা, বিষণ্ণতা দেখা দেয়। বছরের পর বছর, সমাজের মূল স্রোত থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেন আক্রান্তরা। অবসাদ ধীরে-ধীরে শেষ করে দেয় মানুষকে। সংক্রমণের মতো হু-হু করে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে জাপানে। ২০২২ সালে ১০-৬৯ বছর বয়সী মোট ৩০,০০০ মানুষের উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল জাপান সরকার। যার রিপোর্ট সম্প্রতি হাতে এসেছে। সমীক্ষায় আক্রান্তদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কারণেই মূলত তাঁরা সমাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। কেউ-কেউ আবার কোভিড অতিমারীর কারণে কাজ হারিয়েছেন। চাপ সামলাতে না পেরে কাজ ছেড়েছেন, এমন মানুষও রয়েছেন। সমীক্ষা বলছে, আক্রান্তদের ৪৪.৫ শতাংশ কাজ না থাকায় অবসাদে ভুগছেন। আক্রান্তদের ২০.৬ অংশ আবার দায়ী করেছেন কোভিডের সময় মৃত্যু মিছিলকেই। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেননি তাঁরা। কারও মুখে আবার উঠে এসেছে লকডাউনে সামাজিক দূরত্বের কথাও। কোভিড অতিমারীর কারণে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং কোথাও গিয়ে মনের দূরত্বও তৈরি করেছিল। এটা শুধু জাপান বলে নয়, বিশ্বব্য়াপী সব দেশের মানুষই কমবেশি এই সমস্যার শিকার হয়েছেন। বেড়েছে অবসাদ, ভয়, আতঙ্ক। তবে তার পরিণাম যে এত প্রবল হতে পারে, তা আঁচ করতে পারেননি হয়তো কেউ।

হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। যেমন ৪০-৬৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৪.৫ শতাংশের বক্তব্য: তাঁদের এই অবস্থার জন্য দায়ী কাজ চলে যাওয়া অথবা ছেড়ে দেওয়া। ২০.৬ শতাংশ মানুষ দায়ী করেছেন কোভিডের সময় দিনের পর দিন কাছের মানুষদের মৃত্যু সংবাদ এবং সেই মৃত্যু মিছিলের সঙ্গে কিছুতেই মানিয়ে নিতে না-পারা।

হিকিকোমোরির প্রকোপ সাম্প্রতিক হলেও জাপান সরকার ২০২১ সালেই মন্ত্রিসভায় ‘একাকিত্ব মন্ত্রী’ নামে একটি পদ তৈরি করে। তবে কি জাপান সরকার আশঙ্কা করতে পেরেছিল, এই ধরনের কোনও রোগ থাবা বসাতে পারে দেশের বুকে? দানা বাঁধছে প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই অবশ্য জাপান সরকার আক্রান্তদের মূলস্রোতে ফেরানোর জন্য সচেষ্ট হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাস থেকে রাজধানী টোকিও-র এডোগাওয়া ওয়ার্ডে, হিকিকোমোরি আক্রান্তদের জন্য় মেটাভার্স ইভেন্টের ব্যবস্থা করেছে সরকার। এই ওয়ার্ডের ৯০০০ মানুষ এই রোগের শিকার। তাই প্রথম এই ওয়ার্ডকেই বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সমীক্ষায় উঠে এসেছে আরও একটি দিক। এই ওয়ার্ড-সহ জাপানের বেশ কিছু এলাকার স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ কোভিড অতিমারী শেষ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলও, আর প্রতিষ্ঠানমুখী হননি। এই স্কুল-কলেজছুট পড়ুয়াদের কীভাবে ফের পড়াশোনায় বৃত্তে ফেরানো যায়, সেই বিষয়েও ভাবছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে বেশ আতঙ্কে জাপান সরকার। কারণ এই  গোটা বিষয়টির প্রভাব দেশের অর্থনীতিকে বিধ্বস্ত করে তোলার পাশাপাশি ভেঙে দিতে পারে সামাজিক কাঠামোকেও। তবে দেশের ভবিষ্য়ত কী? বাড়ছে চিন্তার পারদ।

কী বলছে তথ্য?

‘হিকিকোমোরি’তে আক্রান্তদের প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জন সমাজের থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন এবং এমনটা করা হয়েছে মূলত করোনার কারণে।

এই ‘সোশ্যাল উইথড্রয়াল’-এর জন্য দায়ী জাপানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং চাকরির অভাবও। ভাল পড়াশোনা, ডিগ্রিলাভের পরও বেকারত্বের শিকার যুব সম্প্রদায়ের এক বড় অংশ।

দিনের পর দিন কার্যত কোনও কাজকর্ম না-করে ঘরে বসে থাকতে-থাকতে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন ‘হিকিকোমোরি’ আক্রান্তরা। অবসাদ এতটাই চরমে পৌঁছয় যে, তাঁদের চাকরি দেওয়া হলেও পেশাদার জীবনযাপন করার ক্ষেত্রেও তাঁদের মধ্যে তৈরি হয় অনীহা।

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলছে, কেউ ‘হিকিকোমোরি’ আক্রান্ত হয়েছেন কি না তা বোঝা যায়, যদি সেই ব্যক্তি অন্ততপক্ষে টানা ছ’মাস ধরে নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আইসোলেশন-এ রেখে দেন। এবং এর জেরে যদি ওই ব্যক্তি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন।

গবেষণা অনুযায়ী, জাপানের ১৫ থেকে ৬২ বছর বয়সীদের মধ্যে ‘হিকিকোমোরি’তে আক্রান্ত ২ শতাংশ মানুষ।

শুধুমাত্র টোকিয়োতেই খুব কম করেও ‘হিকিকোমোরি’ আক্রান্ত ৯ হাজার মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী।