Social Detox: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরাতে চান? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ থেকে ইনফ্লুয়েন্সার…

সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)। ২৪x৭ ডিজিটাল ডেমোক্রেসির পৃথিবীতে সিটিজ়েনশিপের (citizenship) পাশাপাশি নেটিজ়েনশিপ (netizenship)-ও আমাদের প্রাত্যহিকতার অপরিহার্য অঙ্গ। এই সোশ্যাল মিডিয়ায় 'কানেক্টেড' (connected) থাকতে-থাকতে মাঝেমধ্যেই মনে হয় এ বার ডিটক্স (detox) প্রয়োজন। কেমন হবে এই সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স (Social Media Detox)?

Social Detox: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দূরে সরাতে চান? কী বলছেন বিশেষজ্ঞ থেকে ইনফ্লুয়েন্সার...
‘সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স’, বাস্তবে সত্যিই এর প্রয়োজনীয়তা কতটা, সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তির ফলে ঠিক কী কী সমস্যা তৈরি হয়েছে, কী করলে উপকার পাবেন আপনি…
Follow Us:
| Updated on: Apr 25, 2022 | 3:17 PM

ফেসবুক (Facebook), ইনস্টাগ্রাম (Instagram), টুইটার (Twitter)… আরও কত কী! সোশ্যাল মিডিয়াই (social media) এখন আমাদের জীবনের সিংহভাগ জুড়ে। বলা যায় অবিচ্ছেদ্য অংশ। ৬-৭ ইঞ্চির স্ক্রিনেই দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটাই আমরা। করোনা আর লকডাউনের প্রভাবে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সোশ্যাল মিডিয়া এবং গ্যাজেটের প্রতি আসক্তি আরও বেড়েছে।

আর তাই-ই এ বার বোধহয় সময় এসেছে ডিটক্সিফিকেশনের। বাচ্চা হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক, ‘সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স’ (social media detox) এখন প্রয়োজন সকলের। কিন্তু বাস্তবে সত্যিই এর প্রয়োজনীয়তা কতটা, সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তির ফলে ঠিক কী-কী সমস্যা তৈরি হয়েছে, কী করলে উপকার পাবেন আপনি… এইসব নিয়েই TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল মনোবিদ ডক্টর জয়রঞ্জন রাম, কল্যাণী জওহরলাল নেহরু হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রধান তথা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর কৌস্তুভ চক্রবর্তী, রেড এফএম-এর আরজে তথা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার (social media influencer) প্রবীণ এবং পাঠভবন স্কুলের অধ্যক্ষ শুভা গুপ্তর সঙ্গে।

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স বলতে ঠিক কী বোঝায়?

মনোবিদ ডক্টর জয়রঞ্জন রামের মতে, সোশ্যাল ডিটক্স মানে কিন্তু সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নয়। বরং গ্যাজেট থেকে আমরা কীভাবে দূরে থাকতে পারি, সেই চেষ্টা করা। কিন্তু গ্যাজেট ব্যবহার করব না, এটা ভাবলেই শুধু হবে না। কারণ আজকাল প্রায় সব ব্যাপারেই আমরা গ্যাজেট-নির্ভর। অতএব গ্যাজেট সরিয়ে দেব, তার আগে এটা ভাবা উচিত যে, তাহলে সেই সময়টা কী করব।

একই কথা বলেছেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর কৌস্তুভ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, বিনোদন মানেই সোশ্যাল মিডিয়া নয়। বিনোদনের জন্য একটু অন্য মাধ্যম বেছে নিন।

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আকর্ষণ নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু গত এক বছরে গ্যাজেট, ফোন, ভিডিয়ো গেম, ইউটিউব… এইসবের প্রতি মারাত্মক আকর্ষণ শিশু-কিশোরদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকছে কৈশোর পেরিয়ে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া তরুণ প্রজন্ম।

এই প্রসঙ্গে ডক্টর কৌস্তুভ চক্রবর্তী বলেছেন, “করোনা, লকডাউন এবং অনলাইন ক্লাসের ফলে যেটা হয়েছে, সেটা হল যে বাচ্চারা হয়তো আগে হাতে ফোনই পেত না, তারা এখন ফোন পাচ্ছে। আর যারা ফোন ঘাঁটত, তারা তো পাচ্ছেই। দু’ক্ষেত্রেই স্ক্রিন টাইম বেড়ে গিয়েছে। ফোনে পড়াশোনার ফলে যেটা হয় তা হল, স্ক্রিন খুব তাড়াতাড়ি মুভ করে বা সরে যায়। এ বার যখন ওই বাচ্চাটি বই পড়তে বসছে, সে চাইছে বইয়ের পাতাও ওভাবে মুভ করুক। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এক্ষেত্রে বাচ্চাদের অনেকসময়ই মনোযোগে অর্থাৎ কনসেনট্রেশনে বা ফোকাস করতে সমস্যা হচ্ছে। আর যে পরিবারে মা-বাবা দু’জনেই কর্মরত, তাঁরা খানিকটা বাধ্য হয়েই বাচ্চার হাতে ফোন দিয়ে যান। এবার অনলাইন ক্লাসের (online class) ফাঁকে বাচ্চারা হয়তো গেম খেলছে বা ইউটিউব (YouTube) দেখছে।”

আরও পড়ুন: হয়তো নিজে থেকে পুরনো অভ্যাস ফেরাতে না চাইলে কেউ নতুন করে আর চিঠি লিখবেন না: মীর আফসার আলি

সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স-ঠিক কতটা প্রয়োজন? একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে প্রবীণ বলেছেন:

“ভীষণভাবে প্রয়োজন। আমি হোয়াটসঅ্যাপ থেকে দূরে থাকতে পারি না। কাজের সূত্রেই সেখানে সবসময় সজাগ থাকতে হয়। তবে ইনস্টাগ্রাম কিংবা ইউটিউবের ক্ষেত্রে আমি আমার পেজের অ্যাকসেস সহকর্মীদেরও দিয়ে রাখি। দেখুন এটাও তো ঠিক যে, যাঁদের জন্য ভিডিয়ো বানাচ্ছি, তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা উচিত। তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেওয়াটাও আমার দায়িত্ব-কর্তব্য। তাই অনেকসময় দর্শকদের প্রশ্নের জবাব আমি নিজে দিই। কখনও আমার সহকর্মীরাও দেন। আসল ব্যাপারটা হল আমি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমের জন্য সময় ভাগ করে নিয়েছি। ফেসবুকে আমার প্রোফাইল আছে বটে, তবে আমি খুব একটা অ্যাকটিভ নই সেখানে। আসলে অনেকেই ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট (FOMO)’-এই সমস্যায় ভোগেন। আমি সবাইকে একটাই কথা বলব, এ জগতে কোনও কিছু যদি আমরা মিস করি, সেটা হল ‘দ্য রিয়েল ওয়ার্ল্ড’। অন্য কিচ্ছু নয়।”

আমরা অনেকেই কি আজকাল ভীষণভাবে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার আর ইমোজিতে (emoji) অবসেসড হয়ে পড়ছি?

“একদমই তাই। লোকে প্রচুর লাইক-শেয়ার-কমেন্ট পাওয়ার জন্য সাংঘাতিক সব ভিডিয়ো বানায়। আমি নিজেও একসময় এমনটাই ছিলাম। বলা ভাল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিক্ট ছিলাম। একটা ভিডিয়ো কত শেয়ার হল, ক’টা লাইক এল, কী কমেন্ট পড়ল—সেইসব নিয়ে আলোচনা করতাম। ঘনঘন মোবাইল চেক করতাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন লোকের অ্যাটেনশন পাওয়া শুরু করেছিলাম, তখন একটা ‘ক্রেজ়ি’ ফিলিং হত। আচমকাই লোকে পাত্তা দিলে, নজর দিলে সকলেই বোধহয় নিজের জায়গা থেকে একটু নড়ে যান। আমিও গিয়েছিলাম। তবে হ্যাঁ, আমি সেখান থেকে ফিরে এসেছি। সময় লেগেছে অনেক। তবে সম্ভব হয়েছে। এখন ভিডিয়োর শেয়ার-লাইক-কমেন্ট নিয়ে না ভেবে বরং কনটেন্ট কোয়ালিটি নিয়ে মাথা ঘামাই।”

বাচ্চাদের এই আসক্তি দূর করার জন্য ঠিক কী কী করা প্রয়োজন? মা-বাবাদের ভূমিকাই বা কেমন হওয়া উচিত?

এই প্রসঙ্গে পাঠভবন স্কুলের অধ্যাক্ষ শুভা গুপ্ত বলেছেন, “এখন আসলে এমন পরিস্থিতি অনলাইন ক্লাস তো করতেই হবে। কিছু করার নেই এক্ষেত্রে। তাই বাড়িতে একটু নজর রাখা প্রয়োজন। এখন অনেক পরিবারের মা-বাবা দু’জনেই হয়তো চাকরি করেন। বাচ্চা হয়তো বেশিরভাগ সময় দাদু-দিদা, ঠাকুর্দা-ঠাকুমা কিংবা আয়া বা পরিচারিকার কাছে থাকে। সেই সময় মোবাইল নিয়ে গেম খেললে তাদের বারণ করলেও হয়তো শুনতে চায় না। তাই যতক্ষণ মা-বাবা বাড়িতে থাকবে, ততক্ষণ সম্ভব হলে বাচ্চাকে সময় দিন। বেশি মোবাইল ঘাঁটলে, গেম খেললে যে চোখের ক্ষতি হয় বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে সেটা বোঝান। বাচ্চারা যদিও বুঝতে চায় না, তাও অভিভাবকদের ধৈর্য নিয়ে চেষ্টা করতে হবে। আর ক্লাস করার সময় যাঁদের ক্ষেত্রে সম্ভব তাঁরা বাচ্চাকে মোবাইলের পরিবর্তে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে ক্লাস করান।”

ডক্টর জয়রঞ্জন রামের মতে, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গ্যাজেট নির্ভরতা বা আসক্তি কমাতে চাইলে প্রথমে পরিবর্ত বিনোদনের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আর এটা সবসময়ই ধীরে-ধীরে হওয়া ভাল। এক ধাক্কায় সমস্ত গ্যাজেটের ব্যবহার বন্ধ করে দিলে, সেটাই দীর্ঘমেয়াদি স্তরে ফলপ্রসূ হবে না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গল্পের বই পড়া, আঁকা, ফোন ছেড়ে খাতা-বই নিয়ে একটু পড়াশোনার অভ্যাস করা, মাঝেমাঝে সতর্কতা নিয়ে একটু বাইরে যাওয়া—এই অভ্যাসগুলোই ধীরে-ধীরে ফিরিয়ে আনতে হবে।

অন্য দিকে, ডক্টর কৌস্তুভ চক্রবর্তী বলছেন, “বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে স্ক্রিন টাইমের সময় বেঁধে দেওয়া এবং পর্যবেক্ষণে রাখা। বাচ্চাদের উইকেন্ডে স্ক্রিন ব্যবহার করতে দিন। মানে গেম খেলতে দিন বা ইউটিউব দেখতে দিন। অনলাইন ক্লাস ছাড়া বাকিদিন দেবেনই না। তবে ১২ বা ১৩ বছরের ছেলে-মেয়ের ক্ষেত্রে এটা করা যায়। কিন্তু ১৮ বছরের একজনকে আপনি এভাবে শাসন করতে পারবেন না।” তাঁর মতে, আজকাল ১২ বা ১৩-র বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এটা বেশ সমস্যার। কারণ কর্মসূত্রে বেশিরভাগ পরিবারেই কর্মসূত্রে মা-বাবা দু’জনকেই বেরোতে হয়। ফলে নজরে রাখাটাই বেশ চাপের। তবুও চেষ্টা করুন। কাজের শেষে বা ছুটির দিনে মা-বাবারা বাচ্চাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান। তাদের গল্প শোনান। গল্পের বই পড়তে দিন। অনলাইনে নতুন ভাষা শেখাতে পারেন বাচ্চাদের। আরও অনেক সৃজনশীল কাজ আজকাল অনলাইনে হচ্ছে। সেখানে যুক্ত করুন নিজের সন্তানকে। তবে চাপ দেবেন না কোনও ব্যাপারে।

এই কঠিন পরিস্থিতিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বার্তাও দিয়েছেন শিক্ষিকা শুভা গুপ্ত। তাঁর কথায়, “সকলকে বলব পড়াশোনাটা মন দিয়ে করো। কারণ পরিস্থিতি তো চিরকাল এমন থাকবে না। বদল হবেই।

তখন কিন্তু নিজেদের মানিয়ে গুছিয়ে খাপ খাইয়ে নিতে অসুবিধা হবে। তাই পড়াশোনার অভ্যাসটা রাখো। আর অনলাইন ক্লাস ছাড়া অবসর সময়ে ফোন না ঘেঁটে বরং ভাল গল্পের বই পড়ো, গান শোনো, সিনেমা দেখো, সৃজনশীল কাজে মন দাও। মা-বাবার সঙ্গে গল্প করো, বন্ধুদের সঙ্গেও সময় কাটাও। তাহলে ধীরে-ধীরে সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিয়ো গেম এসবের প্রতি আকর্ষণ কমবে। মা-বাবাদেরও বলব, কাজের ফাঁকে বা অবসরে ছেলেমেয়ের সঙ্গে সময় কাটান, গল্প করুন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রাপ্তবয়স্কদের অতিরিক্ত আসক্তির ফলে ঠিক কী-কী সমস্যা হচ্ছে আমাদের?

ডক্টর কৌস্তুভ চক্রবর্তীর মতে, বড়দের ক্ষেত্রে সমস্যাটা একটু অন্যরকম। ঘুমোতে যাওয়ার আগে সকলেই ফোন থুড়ি সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটেন। এবার কোনও নেতিবাচক পোস্ট দেখলে একটা নেগেটিভ ভাইব নিয়েই ঘুমাতে যাওয়া হয়। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এমনিতেও আজকাল আমরা ভীষণ অসহিষ্ণু। সামান্য সমালোচনাও সহ্য করতে পারি না। সবসময় নেমে পড়ি প্রতিবাদ করতে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যমে আজকাল সূক্ষ্ম কারণে দীর্ঘদিনের বন্ধুদের মধ্যে মারাত্মক বিবাদ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাই ঘুমনোর আগে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিংয়ের পরিবর্তে একটু গান শোনা বা টিভি দেখা ভাল। এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাতটা কম হয়।

অনেকের ক্ষেত্রেই, দেখা দিচ্ছে ‘ডিলেইড স্লিপ ফেজ় সিনড্রোম’। এটা এমন অসুখ, যার ফলে স্লিপ সাইকেলে ব্যাঘাত ঘটে, পিছিয়ে যায়। এই রোগ ইনসমনিয়ার থেকে আলাদা। এক্ষেত্রে হয়তো একজন সাত বা আট ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময়ই ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু শুতে যাচ্ছেন রাত দু’টোয়। আর উঠছেন সকাল ১০টা বা ১১টায়। এটা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। তবে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের জেরে এখন এটাই বেশিরভাগ লোকের দৈনিক রুটিন হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য সবার আগে স্লিপ সাইকেল অর্থাৎ ঘুমের সময় ঠিক রাখুন। রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা। আর ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে ফোন ঘাঁটা একেবারেই বন্ধ করে দিন।

কারণ আমাদের শরীরে মেলাটোনিন বলে একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। অন্ধকারে এই হরমোনের সিক্রেশন বাড়ে। তার ফলে আমাদের ঘুম পায়। কিন্তু শোয়ার পর নাগাড়ে ফোন ঘাঁটলে চোখে একটা আলো পড়ে। ফলে মেলোটনিন সিক্রেশন সঠিক ভাবে হয় না। আর তার ফলে ঘুমও আসতে চায় না।

ডক্টর জয়রঞ্জন রামও বলেছেন, ঘুমের এক ঘণ্টা বা আধঘণ্টা আগে ক্রমাগত ফোন ঘাঁটলে ঘুমের সমস্যা তো হয়েই থাকে। বরং টিভি দেখলে কিন্তু অত সমস্যা হয় না। কিন্তু বিছানায় শুয়ে ঘুমের আগে ফোন ঘাঁটতে থাকলে অনেকেরই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে গেলে ঠিক কী কী করা উচিত? এ ব্যাপারে সহজ কিছু টিপস দিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার প্রবীণ। তিনি বলেছেন…

১। বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। দেখা করুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজে কথা না বলে মাঝে মাঝে ফোন করুন। আমি তো সপ্তাহে দু-তিনদিন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিই। সোশ্যাল মিডিয়া অফ করে রাখলে দেখবেন অনেক ‘ফ্রি টাইম’ পাবেন। সেটা কাজে লাগান। আমাদের মনে রাখা উচিত, টাকা-পয়সারও আগে সময় বাঁচানো উচিত। অকাজ করে সময় নষ্ট করা যাবে না একেবারেই।

২। আজকাল ফোন খুব উন্নত প্রযুক্তি সম্পন্ন। সেখানেই দেখতে পাবেন আপনি কোন সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে কতটা সময় কাটিয়েছেন। নোটিফিকেশন দেখে নিজে রুটিন বানিয়ে ফেলুন যে কীভাবে কতক্ষণ কোন অ্যাপ ব্যবহার করবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দিতে থাকলে আপনার মূল্যবান সময়ই শেষ হয়ে যাবে। আসক্তি কমবে না। নিজের সময়কে মূল্য দিতে শিখতে হবে আমাদের। ঠিক করে বুঝতে হবে যে কোন কাজে কতটা সময় দেব।

মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম বলছেন পরিকল্পনা মাফিক ধাপে ধাপে সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে হবে। এর জন্য…

১। সচেতন ভাবে চেষ্টাটা করতে হবে। সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটার ফলে আমার ঠিক কী কী অসুবিধা হচ্ছে, সেটা আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে। এটা না হলে, কেউ আপনার উপর নিয়ম চাপিয়ে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনাকে দূরে রাখতে পারবেন না।

২। সোশ্যাল মিডিয়া বা ফোন থেকে যখন দূরে থাকব, সেই সময়টাই কী কী করব বা করতে পারে তার একটা তালিকা তৈরি করে নিতে হবে। এর জন্য একটা সূক্ষ্ম পরিকল্পনা প্রয়োজন।

৩। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বেরিয়ে আসা সাংঘাতিক কিছু কঠিন কাজ নয়। অনেকেই সহজে বেরিয়ে এসেছেন। তবে হ্যাঁ বিষয়টা ধাপে-ধাপে হওয়া প্রয়োজন। এক ধাক্কায় এটা সম্ভব নয়।

৪। বড়দের ক্ষেত্রে অত্য়ন্ত সচেতনভাবে সময় বেঁধে নেওয়া উচিত যে এইসময় ফোন ঘাঁটব না। যেমন ধরুন খাবার টেবিলে বসে কিংবা রবিবার সকালটা আমি ফোন ঘাঁটব না। পরিবর্তে সেই সময়ে আমি বাড়ির লোকের সঙ্গে গল্প করব। ভাল বই পড়ব। কারও কোনও বিশেষ শখ থাকলে সে দিকেও মনোনিবেশ করতে পারেন। সতর্কতা মেনে মাঝেমাঝে বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করাও যেতে পারে।

অনেকটা একই মত ডক্টর কৌস্তুভ চক্রবর্তীর। তিনি বলেছেন…

১। বাড়িতে মোবাইল ফ্রি জ়োন রাখুন। যেমন খাবার টেবিলে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে না। বড় হোক বা বাচ্চা, নিয়ম সকলের জন্য সমান হতে হবে।

২। সম্ভব হলে কাজের আর বিনোদনের জন্য আলাদা মোবাইল রাখুন। আর বিনোদনের মোবাইলে নোটিফিকেশন অফ রাখুন। বারবার অ্যাপে নোটিফিকেশন না এলে ঘনঘন ফোন দেখার প্রবণতা কমবে।

গ্র্যাফিক্স ও অলংকরণ: অভীক দেবনাথ