Menopause & Depression: মেনোপজ়ের সঙ্গে ডিপ্রেশনের সম্পর্ক ঠিক কেমন, মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল যা বললেন…
Menopause and your mental wellbeing: নতুন কোনও কিছুই ভাল লাগছে না, সবেতেই অনীহা-বিরক্তি, খাওয়া কম, ঘুম কম, অল্পেই তিতিবিরক্ত হয়ে যাওয়া, অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করা, একা থাকা, সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা... এসব হল ডিপ্রেশনের লক্ষণ
রেশমী প্রামাণিক
‘ডিপ্রেশনের বাংলা নাকি নিম্নচাপ?/বৃষ্টি এল। সঙ্গে কফি এক-দু’ কাপ/নামছে বিকেল, অল্প ভিজে রাস্তাঘাট/ছাতার নীচে মিইয়ে গেল পাপড়ি চাট’…. কবি শ্রীজাতর লাইনগুলোর রোম্যান্টিসিজ়ম অলস অবসরের সঙ্গী হলেও মনোচিকিৎসক এবং মনস্তাত্ত্বিকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য এক্ষেত্রে অত্যন্ত নির্মোহ: মন খারাপ আর ডিপ্রেশনের ফারাক বোঝাটা জরুরি। মনোবিদ্যায় এই মন খারাপ আর ডিপ্রেশন একেবারেই আলাদা বিষয়। মন খারাপ নিয়ে আমরা যতটা সহজে কথা বলতে পারি, ডিপ্রেশন নিয়ে পারি না। এবং একজন মানুষ যদি ডিপ্রেশনে থাকেন, তাহলেও অনেকেই চট করে বুঝতে পারেন না। পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ডিপ্রেশনে ভোগেন অনেক বেশি। American Psychiatric Association (APA)-র তথ্য বলছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা প্রায় ১.৫-৩ গুণ বেশি ডিপ্রেশনের শিকার হন। একটা বয়সের পর সেই সমস্যা প্রকট হয়। মনের মধ্যে জমতে থাকে অনেক প্রশ্ন। সেই সব প্রশ্ন নিয়েই TV9-বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে TV9 বাংলার কথোপকথন তুলে ধরা হল আপনাদের জন্য।
প্রশ্ন: কেন পুরুষদের তুলনায় ডিপ্রেশনে বেশি ভোগেন মহিলারা?
নীলাঞ্জনা: আমাদের সমাজে ছেলে-মেয়েদের বড় করে তোলার মধ্যে পদ্ধতিগত ফারাক রয়েছে। মেয়ে মানেই আমরা ধরে নিই যে, সে নরম স্বভাবের হবে। তার কথার মধ্যে একটা শ্রী থাকবে, সব সময় বাড়ির পরামর্শ মেনে চলবে, স্কুল থেকে টিউশন—কোথাও গেলে বাবা ছেড়ে দিয়ে আসবে আর দাদা বাড়ি নিয়ে আসবে। মোট কথা, একা বাইরে বেরনো চলবে না। মেয়ে উদ্ধত হলেই বলা হবে হাজারো কথা, ব্যক্তিত্বের কোনও প্রকাশ চলবে না। সব সময় একটা ঘেরাটোপেই থাকতে হবে। এখান থেকেই মেয়েদের পরনির্ভরশীলতা তৈরি হয়। মেয়েদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। শিক্ষিত হয়েও মেয়েরা এমন সঙ্গীর খোঁজ করে যে তাকে আগলে রাখবে। এখান থেকেই মেয়েদের ডিপ্রেশন আসে।
প্রশ্ন: কোন বয়সে এই সমস্যা বাড়ে?
নীলাঞ্জনা: শিক্ষিত হওয়ার পরও মেয়েরা মনে করেন, তাঁদের গাইড করার জন্য স্বামীর প্রয়োজন। নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কাউকে পাশে চাই। আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকেই মেয়েরা অনেকটা গুটিয়ে থাকেন। যে পরিস্থিতি সওয়ার মতো নয়, ছেলেরা সেখান থেকে ‘যাক গে’ বলে বেরিয়ে আসতে পারলেও মেয়েরা তা পারেন না। বরং তাঁরা অপেক্ষা করেন, সেখানকার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর তখনই তাঁরা ভেঙে পড়েন, ডিপ্রেশন আসে। সাধারণ মধ্যবয়সে এই সমস্যা সবচাইতে বেশি। যেটাকে বলা হয় ‘মিড লাইফ ক্রাইসিস’। যখন ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে বাইরে প্রতিষ্ঠিত, স্বামী ব্যস্ত নিজের মতো, তখন মনে হয় নিজের জন্য কী করলাম। যে সব মহিলা স্বনির্ভর নন, অথচ নিজের চাহিদাকে প্রাধান্য দেন বেশি, তাঁদের মধ্যে ডিপ্রেশনও তত বেশি। এই সময় শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ঘাটতি থাকে, যৌন চাহিদা কমতে থাকে, সব মিলিয়ে ‘empty nest syndrome’ তৈরি হয়।
প্রশ্ন: মেনোপজ়ের সঙ্গে ডিপ্রেশনের কী সম্পর্ক?
নীলাঞ্জনা: মেনোপজ়ের সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়। হরমোনের ঘাটতি থাকে, যে কারণে শরীরে সমতা বজায় থাকে না। এই সময় যৌন চাহিদাও কমতে থাকে। নিজেকে তখন অকেজো মনে হয়। এখান থেকেও কিন্তু ডিপ্রেশন আসে।
প্রশ্ন: ডিপ্রেশন থেকে কী-কী অসুখ জন্ম নেয়?
নীলাঞ্জনা: মেনোপজ়ের পর ডিপ্রেশন এলে বাস্তব থেকে মন সরে যায়। জীবনের গতি অনেক বেশি শ্লথ হয়ে যায়। কোনও কিছুই তখন যেন আর ভাল লাগে না। Illness Anxiety Disorder তৈরি হয়। সর্বক্ষণ মনে হতে থাকে যে আমি অসুস্থ, আমার শরীরে কোনও সমস্যা হয়েছে। খাওয়া-ঘুম ঠিক মতো হয় না। সেখান থেকে হজমের সমস্যা আসে। এছাড়াও মাইগ্রেনের সমস্যা, বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোর অসুখ আসে ডিপ্রেশন থেকে। যাদের OCD থাকে, পরবর্তীতে তাদেরও ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্ন: ডিপ্রেশন থেকে বেরোতে হলে কী করতে হবে?
নীলাঞ্জনা: ডিপ্রেশন মনের এমন একটি অবস্থা, যখন সবকিছু নেতিবাচক মনে হয়। আর তাই প্রথমে পজিটিভ হতে হবে। ওষুধ, কাউন্সেলিং কিছু ক্ষেত্রে কাজ করে। তবে নিজের চেষ্টা থাকতে হবে। খোলা প্রকৃতির মধ্যে হাঁটুন, রোজ সকালে বা বিকেলে যেমন সময় পাবেন। ১০ মিনিট মেডিটেট বা ধ্যান করতে পারেন, এতে ভীষণ ভাল কাজ হয়। মাটির কাছাকাছি থাকলে ডিপ্রেশন কমে। অনেক সময় দেখা গিয়েছে যাঁরা বহুতলের বাসিন্দা, তাঁদের মধ্যে ডিপ্রেশনের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। বাগান করতে পারেন। মোটকথা পছন্দের কাজ করতে হবে।
প্রশ্ন: কোন-কোন লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে ডিপ্রেশন chronic হয়ে উঠছে?
নীলাঞ্জনা: নতুন কোনও কিছুই ভাল লাগছে না, সবেতেই অনীহা-বিরক্তি, খাওয়া কম, ঘুম কম, অল্পেই তিতিবিরক্ত হয়ে যাওয়া, অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করা, একা থাকা, সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা… এসব হল ডিপ্রেশনের লক্ষণ। যদি কেউ অতিরিক্ত মোবাইলে আসক্ত হন, তাহলেও বুঝতে হবে যে তিনি ডিপ্রেশনে ভুগছেন।
প্রশ্ন: মেয়েরা এখন মাল্টিটাস্কার, Work-life balance বজায় রাখতে মেয়েরা কী করবেন?
নীলাঞ্জনা: মাল্টিটাস্কিং থেকে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে, কারণ বিশ্রামের কোনও রকম সুযোগ থাকে না। ক্লান্তি জমতে-জমতে সেখান থেকে ডিপ্রেশন আসে।
তাই, যা কিছু অবশ্যই করবেন:
**মি টাইম (Me Time) খুবই জরুরি। সপ্তাহে ১ ঘণ্টা অন্তত নিজের জন্য সময় রাখুন। সেই সময়টায় কারও ফোন ধরবেন না। এমনকী ওই সময়ে বাড়ির লোকের বিরক্ত করাও চলবে না
**নিয়ম করে পার্লারে যান, স্পা করান। এতে শরীর-মন দুই রিল্যাক্সড থাকে। নিয়ম করে অবশ্যই যাবেন পার্লারে
**বাড়িতে যেন কেউ এমন থাকেন, যাতে তিনি আপনাকে হাতে-হাতে সাহায্য করতে পারেন। মেয়েদের সার্পোট করার মতো মানুষ প্রয়োজন। ভাল সঙ্গী প্রয়োজন।
**বাড়িতে কোনও পোষ্য রাখতে পারেন।
**সঙ্গে নিজের পছন্দের কাজ করুন, বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটান, সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।