১২ বছরের আগে একটি শহরের মৃত্যুর গল্প! আজও শিউরে ওঠে দেশবাসী

বৃহস্পতিবার সেই কালো দিনের ১২ বছর পূর্তি। ক্ষততে মলম পরলেও ঘা শুকোয়নি। সেই ক্ষতকে স্মরণ করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

১২ বছরের আগে একটি শহরের মৃত্যুর গল্প! আজও শিউরে ওঠে দেশবাসী
মুম্বই হামলা ২৬/১১/
Follow Us:
| Updated on: Dec 01, 2020 | 7:17 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল : গোলা বারুদের গন্ধে তখন শ্বাস নিতেও অস্বস্তি। সাইরেনের চিৎকার আর আর্তনাদে কান পাতা দায়। রক্তে ভিজেছে শহর মুম্বইয়ের(Mumbai) মাটি। সাল ২০০৮। ক্যালেন্ডার বলছে দিনটা ২৬ নভেম্বর। ইতিহাসের কালো দিন। গোটা বিশ্বের চোখ তখন মুম্বইয়ের দিকে। স্বপ্নপূরণের শহরে তখন নেমে এসেছে স্বপ্নভাঙার দূত। গোটা মুম্বই পুড়ছে সন্ত্রাসবাদী হামলায়। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন?

নভেম্বরের শীতের ইমেজ তখনও সেভাবে পড়েনি। উচ্ছ্বল মায়ানগরীর নিরাপত্তা বলয়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরব সাগর পেরিয়ে শহরে ঢুকে পড়ে ১০ জনের একটি পাকিস্তানী জঙ্গি দল। সঙ্গে বন্দুক গোলা বারুদের ঝোলা। পরপর তিনদিন। হামলার পর হামলা চলে গোটা মুম্বই জুড়ে। ঠাণ্ডা মাথায় ১৬৪ জন নিবাসীকে খুন করে তারা। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন ভিনদেশী।গুরুতর জখম অবস্থাতেও বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন ৩০০ জন। বেছে বেছে কামা হাসপাতাল,লিওপোল্ড ক্যাফে,সিএসটি মেট্রো স্টেশন, তাজ হোটেল, ওবেরয় রিসর্ট অর্থাৎ শহরের বিগ ব্যাং এলাকাগুলিকেই বেছে নিয়েছিল পাকজঙ্গীরা। পরিকল্পনা মতোই ২৬ নভেম্বরের রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ হামলা চালাতে শুরু করে দলটি। দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টা গুলির লড়াইয়ের পর জঙ্গীদের নিকেশ করতে সক্ষম হয় মুম্বই পুলিস। গ্রেফতার হয় জঙ্গী দলের অন্যতম মূল সদস্য আজমল কাসভ।

আরও পড়ুন:   সোনাগাছিতে লাফিয়ে বাড়ল যৌনকর্মীর সংখ্যা! কেন এমন হল?

২৬/১১-র হামলায় কাসভ ছাড়া আর সকলেরই মৃত্যু হয়েছিল। আর্থার রোল সেন্ট্রাল জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয় কাসভকে। মামলার শুনানির জন্য এমএল তহলওয়ানিকে বিশেষ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীমতি আরতী সওয়ান্ত বাগুলার সামনে অপরাধ কবুল করে আজমল। ২২শে ফেব্রুয়ারি সরকার পক্ষের আইনজীবী হন উজ্জ্বল নিগম। ২৫ শে ফেব্রুয়ারি কাসভ ও আরও দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা পড়ে।

অন্যদিকে,আমেরিকার চিকাগো থেকে গ্রেফতার হয় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ডবল এজেন্ট ডোভিড কোল্ডম্যান হোডলি। ২০১০ সালের ৬ই মে কাসভের ফাঁসির আদেশ শোনায় ট্রায়াল কোর্ট। বম্বে হাইকোর্টও সেই সাজা বহাল রাখে। মার্চ মাসে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয় কাসভ। দীর্ঘ তর্ক বিতর্কের পর ২০১২ সালের ২৯ অগস্ট কাসভের ফাঁসির সাজা বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। সেপ্টেম্বর মাসে মহারাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করে কাসভ। কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। ২১ নভেম্বর তাকে পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়। কবর দেওয়া হয় জেলের মধ্যেই।

নিহত জঙ্গিদের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট, বেশ কিছু ছবি এবং তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কিছু জিনিসপত্র পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয় ভারত সরকার,প্রমাণ হয় হামলাকারীরা পাকিস্তানি নাগরিক ছিল এবং লস্কর চাঁই জাকিউর রহমান লকভি এবং হাফিজ সঈদদের নির্দেশেই এ দেশে এসেছিল তারা। পাকিস্তানে মোট সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে ছিল হামাদ আমিন সাদিক নামের একহোমিওপ্যাথি ওষুধ প্রস্তুতকারকও। জঙ্গিদের ব্যাঙ্ক খোলা এবং জঙ্গিদের রসদ জোগানোর দায়িত্বে ছিল সে। ২০০৯ সালের ৩ অক্টোবর তাদের শুনানি শুরু হয়। কিন্তু সেই মামলা বেশিদূর এগোয়নি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরেই পাকিস্তান সন্ত্রাস দমন আইনে লস্কর জঙ্গি জাকিউর রহমান লকভি গ্রেফতার হয়। দায়ের হয় মামলাও। কিন্তু তাকে ভারতের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে ইসলামাবাদ। পরে জামিনে মুক্তিও পেয়ে যায় সে।

২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ডেভিড হেডলিকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড শোনায় মার্কিন আদালত। হামলার ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য হাতে পেতে ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর তাকে রাজসাক্ষী করতে রাজি হয় মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বম্বে হাইকোর্টে সাক্ষ্য দিতে শুরু করে সে। সরকারি আইনজীবী উজ্জ্বল নিকম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

বৃহস্পতিবার সেই কালো দিনের ১২ বছর পূর্তি(26/11/Mumbai Attack)। ক্ষততে মলম পরলেও ঘা শুকোয়নি। সেই ক্ষতকে স্মরণ করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভার্চুয়াল কনফারেন্সে তিনি বললেন, “২০০৮এর হামলার সকল নিহতদের উদ্দেশে আমার শ্রদ্ধা রইল। ভারত আঘাত ভোলে না। ক্ষত নিরাময় করে। স্মরণ করে।” মুম্বই হামলার উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানালেন মহারাষ্ট্র(Maharashtra) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে সহ অন্যান্য শীর্ষদলীয় নেতারাও।

কোভিড পরিস্থিতিতে জাঁক নেই। কিন্তু স্মৃতি বড় জমক! কাসভের শেষ কথা ছিল, ‘একটুখানি দুধের জন্য জন্নত কেন,বেহশতে যেতেও রাজি আমি।’ জীবনের বাজিতে রক্তক্ষয়ী  জীবনের গল্প লিখেছে আজমলেরা। সাক্ষী থেকেছে একটি শহর।