সর্দিকাশিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে করোনার তৃতীয় ঢেউ! মানতে হবে টিকাকরণের ৭টি নিয়ম

কেন্দ্রীয় সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের সমস্ত নাগরিককে টিকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য দ্রুত দৈনিক এক কোটি মানুষের টিকাকরণের প্রয়োজন, তবেই কেন্দ্রের কাক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব হবে।

সর্দিকাশিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে করোনার তৃতীয় ঢেউ! মানতে হবে টিকাকরণের ৭টি নিয়ম
টিকাকরণের জন্য পড়ুয়াদের লম্বা লাইন। ছবি:PTI
Follow Us:
| Updated on: Jun 14, 2021 | 2:09 PM

নয়া দিল্লি: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কোনও মতে সামলে উঠেছে দেশ। ধীরে ধীরে কমছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা, উল্টোদিকে বাড়ছে সুস্থতার হার। তবে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে গবেষকদের সতর্কবার্তায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনেকেই। তবে তৃতীয় ঢেউ এড়ানোর উপায় হিসাবে স্বাস্থ্যবিধি, সচেতনার পাশাপাশি টিকাকরণের উপরই জোর দিচ্ছেন সকলে।

কেন্দ্রীয় সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের সমস্ত নাগরিককে টিকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য দ্রুত দৈনিক এক কোটি মানুষের টিকাকরণের প্রয়োজন, তবেই কেন্দ্রের কাক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব হবে। তবে টিকা সঙ্কট সহ একাধিক কারণে টিকাকরণ ধীরগতিতে চলছে। করোনার তৃতীয় ঢেউ আটকানো নিয়ে সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রখ্যাত চিকিৎসক দেবী শেঠি জানান, টিকাকরণের পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন আনলেই তৃতীয় সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তিনি জানান, যদি সঠিক গতিতে টিকাকরণ করা যায়, তবে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়লেও টিকাপ্রাপ্তদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না বললেই চলে। টিকা নেওয়ার পরও যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হন, তবে তা সাধারণ সর্দি-কাশির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

টিকাকরণের নীতিতে যে বিষয়গুলি পরিবর্তনের কথা বলেন ডঃ দেবী শেঠি, সেগুলি হল-

১. দ্রুত ভ্যাকসিনের ঘাটতি মেটানো- দ্রুত ভারতীয় ভ্যাকসিনগুলির উৎপাদন বাড়ানো ও বিদেশী করোনা টিকা আমদানির উপর জোর দেওয়া উচিত কেন্দ্রের, এমনটাই মত কার্ডিয়াক সার্জন দেবী শেঠির। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ভারতীয় টিকা উৎপাদকদের কাছ থেকে ৭৫ শতাংশ টিকা কিনছে। কেন্দ্রের উচিত ১০০ শতাংশ টিকাই নিজেদের অর্থে কিনে নেওয়া এবং পরে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা। এতে রাজ্য সরকার ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি টিকা সংগ্রহে কম সমস্যায় পড়বেন। একইসঙ্গে সরকারের উচিত দ্রুত বিদেশ থেকে ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থা করা। কেবলমাত্র ভারতীয় দুটি ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব নয়।”

২. সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা বিতরণ- দেবী শেঠির মতে, রাজ্য সরকারগুলির উচিত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহ করা এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ক্রয়মূল্যেই টিকা সরবরাহ করা। এতে একদিকে যেমন মধ্যস্থতাকারীর বিষয়টি থাকবে না, তেমনই কম দামে দ্রুত টিকাকরণ সম্ভব হবে।

৩. ১০ দিনের মধ্যে টিকা ব্যবহার- বহু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালেই দীর্ঘদিন ধরে টিকা মজুত থাকছে। ভ্যাকসিন সরবরাহ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে যেন তা সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করা হয়, সেই দিকটিও নিশ্চিত করতে হবে। এরফলে টিকা নষ্ট হবে না, পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার একটি তাগিদও থাকবে হাসপাতালগুলির। ১০ দিনের মধ্যে নিজেদের স্টক খালি না করতে পারলে অন্য হাসপাতাল, যেখানে মজুত টিকা শেষ, সেখানে তা সরবরাহ করতে হবে।

৪. ২৪/৭ টিকাকরণ- টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা টিকাকরণ কর্মসূচি চালানো উচিত। এতে টিকা কেন্দ্রগুলিতে যে উপচে পড়া ভিড় হচ্ছে, তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নিজেদের সুবিধা মতো নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। দেখা গিয়েছে, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত একজন নার্স প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ সাতজনকে টিকা দিতে পারেন। এই গতিতে এগোলে দৈনিক এক কোটি টিকাকরণ অসম্ভব কোনও বিষয় নয়।

৫. বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও বিনামূল্যে টিকাকরণের উদ্যোগ- রাজ্য সরকারগুলি যদি টিকার প্রতি ডোজ় বাবদ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা অনুদান দেয়, তবে বহু বেসরকারি হাসপাতালই বিনামূল্যে টিকাকরণের জন্য এগিয়ে আসবে। এছাড়াও বহু সংস্থা অত্যন্ত কম খরচে সাধারণ মানুষের টিকাকরণের ব্যবস্থা করছে। এইরকমভাবে অন্যান্য বড় সংস্থাগুলিও এগিয়ে এলে টিকাকরণ আরও সহজ হবে। এছাড়া গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকাকরণও প্রয়োজন।

৬. টিকা অনুদান- বিত্তশালী ব্যক্তিরা যদি নিজেদের টিকাকরণের পাশাপাশি গরিব মানুষদের টিকাকরণের জন্য টাকা অনুদান দেন, তবে সরকারের সাহায্য ছাড়াই দেশের নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষদের টিকাকরণ সম্ভব। বহু সংস্থাই যেমন নিজেদের কর্মীদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করেছে, তেমনই বাড়ির গাড়ির চালক বা পরিচারকদের টিকাকরণের ব্যবস্থা করেন, তবেও টিকাকরণে বিশেষ সুবিধা হবে।

৭. বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট- যদি সমস্ত অফিস, অনুষ্ঠান ও গণপরিবহনে টিকা সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়, তবে টিকা নিয়ে যাদের মধ্যে অনীহা রয়েছে, তারাও এগিয়ে আসবেন।

আরও পড়ুন: ১৭ বছরের সম্পর্কে পাকাপাকি ছেদ, বিজেপিতে যোগ দিলেন তেলঙ্গনার প্রাক্তন মন্ত্রী এটালা রাজেন্দর