Opposition Unity: নীতীশ কি দ্বিতীয় জয়প্রকাশ নায়ারণ হয়ে উঠতে পারবেন?
Opposition meet in Patna: অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে বিহারের অন্যতম খ্যাতনামা নেতা, জয়প্রকাশ নারায়ণের কথা। জরুরি অবস্থার সময়, ইন্দিরা গান্ধীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মতের বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করেছিলেন তিনি। সেই অসাধ্য কি সাধন করতে পারবেন নীতীশ?
পটনা: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের বিরোধী দলগুলি কি মহাজোট গঠন করতে পারবে? শুক্রবারই (২৩ জুন), বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দলের (ইউনাইটেড) দলের প্রধান নীতীশ কুমারের ডাকে, পটনায় এক মহাবৈঠকে মিলিত হয়েছেন ১৫টিরও বেশি দলের নেতারা। লক্ষ্য বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোট গঠন। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, শরদ পওয়ারদের মতো বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করেন নীতীশ। তারপরই এই মহাবৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। আর এই আয়োজন দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে বিহারের অন্যতম খ্যাতনামা নেতা, জয়প্রকাশ নারায়ণের কথা। জরুরি অবস্থার সময়, ইন্দিরা গান্ধীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মতের বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করেছিলেন তিনি। সেই অসাধ্য কি সাধন করতে পারবেন নীতীশ?
কয়েক মাস আগে পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ার বিষয়ে অনীহা ছিল বেশ কিছু বিরোধী দলের। বৃহত্তম বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও, কংগ্রেস বা কংগ্রেসের কোনও নেতা ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের দলগুলিকে এক জায়গায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায়, নীতীশ কুমারকেই তারা জোটের হোতার ভূমিকা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা গান্ধীদের থেকে অনেক বেশি। এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ বিরোধী দলকেই এক টেবিলে আনতে পেরেছেন নীতীশ কুমার।
তবে বিরোধী দলগুলির মধ্যে এখন তিক্ততা ও বিভেদ রয়েছে। বৈঠকের একদিন আগেই বেঁকে বসেছিল আপ। কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদকে কংগ্রেস সমর্থন না করলে তারা বৈঠকে যোগ দেবে না বলে জানিয়েছিল। তার উপর রয়েছে আসন ভাগাভাগি, নেতা বাছাইয়ের মতো জটিল প্রশ্ন রয়েছে। তবে, তা যদি তিনি করতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে ভারতীয় রাজনীতিতে নীতীশ কুমার বড় শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারেন। যদি প্রয়োজনীয় নেতৃত্বের দক্ষতা এবং কৌশলগত পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি তা করে দেখাতে পারেন, তবে তাঁর দ্বিতীয় জয়প্রকাশ নারায়ণ হয়ে ওঠার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। নীতীশ কুমারের পরিকল্পনায় কিন্তু, জগনমোহনের ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলও রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকেই কিন্তু, এই দুই দল নিজেদের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান ধরে রেখেছে। এমনকি, বেশ কিছু ইস্যুতে তারা বিজেপি সরকারকে সমর্থনও দিয়েছে। তবে তারা শেষ পর্যন্ত বিরোধী জোটে যোগ দেবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল যথেষ্ট সন্দিহান।
দ্বিতীয় জেপি হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নীতীশের সামনে সবথেকে বড় বাধা অবশ্যই বিভিন্ন দল এবং তাদের নেতাদের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পিছনে সরিয়ে তাদের একটি সাধারণ নীতিকে অগ্রাধিকার দিতে রাজি করানো। রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ বিরোধী শিবিরের অনেক নেতা-নেত্রীই বিরোধী জোটের নেতা হতে চান। নীতীশ ও বিরোধী শিবিরের অন্যান্য নেতারা মুখে বলছেন, নির্বাচনের পরই তাঁরা নেতা ঠিক করবেন। কিন্তু, এই নিয়ে যে বিরোধী শিবিরে চাপা উত্তেজনা রয়েছে, তা গোপন করার উপায় নেই। এদিনই বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘বরযাত্রী তৈরি, কিন্তু বর কই?’ মতের ঐক্য না থাকলে, বিরোধী জোট কিন্তু ধোপে টিকবে না। আরও একটা বড় প্রশ্ন হল, এই জোটের মধ্যে কংগ্রেসের কী ভূমিকা হবে? কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব নয়। সারা দেশেই উপস্থিতি রয়েছে কংগ্রেসের। কংগ্রেস কী তাদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে রাজি হবে? রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, কর্নাটকের মতো রাজ্যে বিরোধী দলগুলিকে আসন ছাড়তে রাজি হবে কংগ্রেস? এই সমস্যারও সমাধান করতে হবে নীতীশকে।
এই বিষয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “জয়প্রকাশ নারায়ণের লড়াই ছিল স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি-পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাঁর রাজনৈতিক উচ্চতা, ব্যক্তিগত সততা, তাঁর স্বচ্ছতা, আপসহীন মনোভাবের কারণে, তাঁর আন্দোলনকে সেই সময়ের ভারতের সমস্ত বিরোধী দল গ্রহণ করেছিল। তাদের পতাকার কথা ভুলে গিয়ে এক জায়গায় জড়ো হয়েছিল। আর আজ সেই জয়প্রকাশ নারায়ণের মাটিতে দাঁড়িয়ে জাতপাতের রাজনীতি করা, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা লড়াই করবেন বিজেপির বিরুদ্ধে। দেশের মানুষ স্বচ্ছতার পক্ষে, সততার পক্ষে, স্থায়িত্বের পক্ষে, নির্ণায়ক সরকারের পক্ষে, জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে। নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলই এক পরিবারের কথা বলে। কিন্তু নির্বাচন যখন খুব কাছে চলে আসে, তখন তারা ছোট পরিবার সুখী পরিবার হয়ে যায়। এটা দেশের মানুষ দেখেছেন।”