In Depth on Sargodha Surgical Strike: পাকিস্তানের পেটে নয় বুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ভারতের! জানুন ‘মহাবীর’ দেবাইয়ার মরণ-কামড় লড়াই
Sargodha Surgical Strike: বীর সেনার সাহসিকতা ও কৃতিত্ব চিনতে ভারত সরকারের ২৩ বছর সময় লেগেছিল এখন চর্চায় এবি দেবাইয়া। কে তিনি? ১৯৬৫ সালে সারগোধায় এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছিল আইএএফ মিস্টিরিস। ধ্বংস করে দেওয়া হয় পাক যুদ্ধবিমান, হ্যাঙ্গার সহ প্রায় গোটা এয়ারবেসই।
“ইটস নট দ্য প্লেন বাট দ্য পাইলট” – আকাশে রোজ উড়ান যাদের, তাদের কাছে এই শব্দবন্ধটা পরিচিত। কিন্তু কেন হঠাৎ আজ এই প্রসঙ্গ? আজ প্রজাতন্ত্র দিবস। দেশ মুড়েছে তিরঙ্গায়। তবে দেশের এই স্বাধীনতার লড়াইয়ের পথটা যে মসৃণ ছিল না, তা অনেকেরই জানা। স্বাধীনতার পরও ভারতীয় সেনা একাধিকবার নিজের বীরত্ব প্রমাণ করেছে। শত্রুকে তাদের ঘরে ঢুকে জবাব দিয়ে এসেছে। এখন সকলের মুখেই পরিচিত সার্জিকাল স্ট্রাইক। শত্রুর ঘরে ঢুকে মেরে আসার কথা উঠলেই উরির কথা মনে পড়ে। তবে ভারতীয় সেনা বরাবরই বলেছে, তাদের কাছে সার্জিকাল স্ট্রাইক নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে এই কাজ করেছে সেনা। এখন হয়তো তা প্রচার পাচ্ছে, কিন্তু বীরত্ব সেনা বহুদিন আগে থেকেই দেখিয়েছে। আজ সেই বীরত্বের কাহিনিই তুলে ধরা এই প্রতিবেদনে।
দুই দিন আগে, ২৪ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে অক্ষয় কুমার ও নবাগত বীর পাহাড়িয়া অভিনীত ‘স্কাই ফোর্স‘। ১৯৬৫ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার দুঃসাহসিক অভিযান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং সেনার স্কোয়াড্রন লিডার আজ্জামাদা বোপায়া দেবাইয়ার বীরত্বের সত্যি কাহিনির উপরেই ভিত্তি করে স্কাই ফোর্স তৈরি। রিলের পর্দায় কতটা বাস্তব ফুটিয়ে তোলা হল, তা নিয়ে আলোচনা পরে হবে। আগে জানা দরকার কেন ১৯৬৫ সালে এই অভিযান চালিয়েছিল বায়ুসেনা? কেনই বা এটিকে দেশের প্রথম সার্জিকাল স্ট্রাইক বলে গণ্য করা হয়?
সালটা ১৯৬৫। দেশ উত্তাল। চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে কাশ্মীর। তখন আবার পাকিস্তানের মাথায় আমেরিকার স্নেহের হাত। সামরিক অস্ত্র থেকে শুরু করে সাঁজোয়া গাড়ি, অর্থ সাহায্য- কোনও কিছুর অভাব নেই। সেখানেই ভারতীয় সেনার হাতে ক্ষমতা সীমিত। ক্ষমতা, গতি- যেকোনও ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের বিমান হারানোর ক্ষমতা রাখত ভারতীয় বায়ুসেনাকে। তখন আমাদের সেনার হাতে ভরসা বলতে মিগ বিমান, যার দুর্ঘটনার ইতিহাস লম্বা। আর এখানেই আবার আসে “ইটস নট দ্য প্লেন, বাট পাইলট”।
কী হয়েছিল ১৯৬৫ সালে?
৬ সেপ্টেম্বরের রাতে পাকিস্তানি বায়ুসেনা সি-১৩০ হারকিউলিস বিমান দিয়ে ভারতের পাঠানকোট, হালওয়াড়া ও আদমপুরে হামলা করে। ১৮০ জন প্য়ারাট্রুপারকে নামায়। এর মধ্যে ২২ জনকে খতম করে ভারতীয় সেনা। বাকিরা পালিয়ে যায় পাকিস্তানে। ভারতীয় সেনাও জবাব দিচ্ছিল, তবে পাকিস্তানের যেমন স্বভাব, রাতের অন্ধকারে ঢুকে ভারতীয় সেনার উপরে হামলা চালায়। পাল্টা জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় সেনাও। লাহোর ও কাসুরে শুরু হয় অপারেশন রিডল। তবে আসল টুইস্ট আসে পরে। এখানে ভারতীয় সেনার উপরে লাগাতার হাউৎজার মিসাইল দিয়ে হামলা করছিল পাকিস্তান। আক্রমণ থামাতে আকাশপথেও পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বায়ুসেনা।
কোথায় হামলা চালানো হবে? নাহ সীমান্ত লাগোয়া কোনও পাকিস্তানি বেস বা ঘাঁটিকে বাছেনি বায়ুসেনা। একেবারে পাকিস্তানের বুকে অবস্থিত সারগোধা এয়ারবেসে এয়ারস্ট্রাইক চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন উইং কম্যান্ডার ওপি তানেজা। সেই সময় রাশিয়ার পর এই সারগোধা এয়ারবেসই সবথেকে সুরক্ষিত বিমানঘাঁটি ছিল। সেখানে হামলা চালানো কি মুখের কথা? কিন্তু সেই অসাধ্যকেই সম্ভব করেছিল বায়ুসেনা। পাকিস্তানের ঘরে ঢুকে হামলা চালায়। ধ্বংস করে দেওয়া হয় পাকিস্তানের স্টারফাইটার সেবার, সি-১৩০ সহ কমপক্ষে ১০টি সামরিক বিমান।
এই অভিযানের পর একদিকে যেখানে ভারতীয় বায়ুসেনার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল, সেখানেই পাকিস্তানের মুখ কালো হয়ে গিয়েছিল। ১৯৬৫ সালের এই ধাক্কার পর তারা আর ভারতের বিমানঘাঁটিতে সরাসরি হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায়নি।
স্কোয়াড্রন লিডার এবি দেবাইয়ার কাহিনি-
গ্রুপ ক্য়াপ্টেন অভিনন্দন বর্তমানকে নিশ্চয়ই মনে আছে। তাঁর মিগ-২১ ধ্বংস করে দিয়েছিল পাকিস্তান বায়ুসেনার এফ-১৬-কে। এরপর তাঁকে বন্দি বানায় পাকিস্তানি সেনা। হাজারো অত্যাচারের পরও তিনি রা কাটেননি। দেশে যখন তিনি ফিরে আসেন, ভারত সরকার তাঁকে বীর চক্রে সম্মানিত করে। তবে জানেন কী, ১৯৬৫ সালের ওই অভিযানের নায়ক ছিলেন এবি দেবাইয়া, যিনি মহাবীর চক্র পেয়েছিলেন। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মান এই মহাবীর চক্র, যা বায়ুসেনায় শুধুমাত্র এবি দেবাইয়াই পেয়েছেন। তবে তাঁর বীরত্ব প্রদর্শনের ২৩ বছর পর!
হ্যাঁ, এই বীর সেনার সাহসিকতা ও কৃতিত্ব চিনতে ভারত সরকারের ২৩ বছর সময় লেগেছিল এখন চর্চায় এবি দেবাইয়া। কে তিনি? ১৯৬৫ সালে সারগোধায় এয়ারস্ট্রাইক চালিয়েছিল আইএএফ মিস্টিরিস। ধ্বংস করে দেওয়া হয় পাক যুদ্ধবিমান, হ্যাঙ্গার সহ প্রায় গোটা এয়ারবেসই। এরপরে তাদের মিশন ছিল পাকিস্তানের ট্যাঙ্ক ও মিসাইল ধ্বংস করা। তারা খুঁজছিল তন্নতন্ন করে, কিন্তু কোথাও দেখা মিলছিল না পাকিস্তানের অস্ত্র ভাণ্ডারের।
ফেরার পথেই হঠাৎ নজরে পড়ে একটি ট্রেন। তাতে কাপড় চাপা দিয়ে কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানের দমকা হাওয়াতেই পর্দা উড়ে যায়, দেখা যায় সামরিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ ওই ট্রেনে হামলা চালিয়ে সব অস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
এয়ারস্ট্রাইক চালিয়ে ভারতীয় সীমানায় ফিরছিল ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানগুলি। এমন সময়ে পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় শত্রুপক্ষের এফ-১০৪ স্টারফাইটার এয়ারক্রাফ্ট। স্কোয়াড্রন লিডার এবি দেবাইয়ার কাছে সুযোগ ছিল নিজেকে বাঁচিয়ে দেশে ফিরে আসার। কিন্তু তিনি নিজের সঙ্গীদের ছেড়ে আসেননি। বরং আকাশেই যুদ্ধ করেছিলেন মুখোমুখি।
শক্তিশালী বিমান নিয়ে পাকিস্তান ভেবেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার স্কোয়াড্রন লিডারকে হারিয়ে দেবে। কিন্তু মিস্টিরিস বিমান দিয়েই আকাশে মোক্ষম জবাব দেন এবি দেবাইয়া। একাই পাকিস্তানের একের পর এক বিমানকে ধ্বংস করেন। তবে ওই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। এবি দেবাইয়াকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়। পরে মৃত বলেই ধরে নেওয়া হয় তাঁকে।
দুই দশক পর যখন ব্রিটিশ লেখক জন ফ্রিকার তাঁর বইয়ে বায়ুসেনার এই সাহসী পাইলটের বীরত্বের কাহিনি তুলে ধরে, তখন ১৯৮৮ সালে ভারত সরকারের তরফে স্কোয়াড্রন লিডার মহাবীর চক্র। তিনিই দেশের একমাত্র ফাইটার পাইলট যিনি এই সম্মান পেয়েছেন।