দেশের বিজ্ঞানীদের ওপর আস্থা নেই কেজরীবালের! অতিমারির পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক তরজা রাজধানীতে
কেজরীবালের সিঙ্গাপুর স্ট্রেন নিয়ে করা মন্তব্যের জেরেই বিতর্কের সূত্রপাত। দুই দেশের সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি কেন্দ্রের।
জ্যোতির্ময় রায় : বিশ্ব এখন করোনা সংক্রমণে বিধ্বস্ত। এই শতাব্দীর এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ত্রাস এই করোনা মহামারী। মহামারীর সামনে উন্নত দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়তে দেখা যায়। বিশ্বের কোনও দেশ এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না, ভারতও ছিল না। কিন্তু ভারতে করোনা আতঙ্কে জনগণ যখন ত্রস্ত, বৈজ্ঞানিক মহল যখন চিন্তিত এবং চিকিৎসক মহল যখন ক্লান্ত, তখন করোনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজধানী দিল্লিতে রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ি তুঙ্গে। করোনা সংক্রমণ রোধে ব্যর্থতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ দিতে গিয়ে ভারতের মিত্র রাষ্ট্রগুলিকে নিয়েও রাজনীতি শুরু করেছে বিরোধী দল।
একদিন আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল টুইট করে কেন্দ্র সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারতের আকাশ পথের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা উচিত। কারণ সিঙ্গাপুরের স্ট্রেনে এ দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে। কেজরীবালের এই ‘সিঙ্গাপুর স্ট্রেন’ মন্তব্যে সিঙ্গাপুর সরকার ক্ষুণ্ণ। এই নিয়ে ভারতীয় হাই কমিশনারকে অভিযোগ করেছে সিঙ্গাপুরের সরকার। তাই দেশের মান বাঁচাতে মাঠে নামতে হয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। তিনি টুইটে স্পষ্ট বলেন, ‘করোনা যুদ্ধে সিঙ্গাপুর ও ভারত সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেছে। ভারতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ায় জন্য আমরা সিঙ্গাপুরের ভূমিকার প্রশংসা করি। দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করার আগে জানা উচিত তা দীর্ঘদিনের সম্পর্ক বিঘ্নিত করতে পারে। তাই আমি স্পষ্ট করে বলছি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ভারতের মুখপাত্র নন।’
এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আজ দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া বলেন, “কেজরীবাল সিঙ্গাপুরের স্ট্রেন এবং শিশুদের নিয়ে কথা বলেছেন। বিষয়টি সিঙ্গাপুর নয়, শিশুদের। বিজেপি সস্তা রাজনীতি করছে।”
ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় মুখপাত্র শ্রী গৌরব ভাটিয়া আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই সময় যখন ভারত অন্যান্য দেশগুলিকে সাহায্য করছে এবং অন্যান্য দেশগুলি ভারতকে সাহায্য করছে, অরবিন্দ কেজরীবাল কি চান যে অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হোক, বিদেশ থেকে সাহায্য আসা বন্ধ হোক? দেশে শিশুদের জন্য ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে দেশের বিজ্ঞানীদের ও চিকিৎসকদের ওপর আপনাদের কোনও আস্থা নেই।’
আরও পড়ুন: ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘মহামারি’, ঘোষণা রাজস্থান সরকারের
ইতিমধ্যে রাজ্য-কেন্দ্রের রাজনীতির ক্ষতিপূরণ দিল্লির জনগণ দিয়ে আসছে। করোনা কালে দিল্লির শ্মশানে মৃতের লাইন আর তাদের পরিবারের এই অসহায় অবস্থার জন্য কিন্তু উভয় সরকারই দায়ী। কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকারের পরস্পর লড়াইতে মানবতার প্রাণ যায় যায়। এই মহামারী কালে মানবতাকে বাঁচাবার জন্য রাজনৈতিক দলগুলি কি পারবে রাজনৈতিক দলিয় স্বার্থের ওপর উঠতে! এই মহামারী জয় করতে হলে রাজনীতি তর্ক নয়, মানবিক ছোঁয়ার প্রয়োজন। মনে রাখবেন, জনগণ সব দেখছে, সব শুনছে!