Indian Army: খেতে হয় সাপ-ইঁদুর, সেনার হাড়হিম করা কঠোর প্রশিক্ষণেই অপরাজেয় ‘মার্কোস’
Indian Army: সম্প্রতি লোহিত সাগরে জঙ্গিদের ধারাবাহিক আক্রমণ থেকে দেশের বাণিজ্যতরী রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন মার্কোস কমান্ডোরা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, ছদ্মবেশে হামলা চালাতে সিদ্ধহস্ত নৌসেনার বিশেষ এই কমান্ডো বাহিনী।
কলকাতা: কূটনীতির আঙিনায় সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের দূরত্ব বাড়ছে। এই মলদ্বীপকেই চরম বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিল ভারত। সালটা ১৯৮৮। ওই বছর আবদ্দুলা লুতুফি নামে এক ব্যবসায়ী শ্রীলঙ্কার জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। সেই সময় মলদ্বীপ সরকার ভারতের সাহায্য চায়। সেই অপারেশন ক্যাকটাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এই মার্কোস বাহিনী। কার্গিল যুদ্ধেও পাক সেনাকে সবক শেখাতে কাজে লাগানো হয়েছিল মার্কোসকে। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার সময় জঙ্গি নিধনের কাজও করেছিলেন মার্কোস জওয়ানরা।
সম্প্রতি লোহিত সাগরে জঙ্গিদের ধারাবাহিক আক্রমণ থেকে দেশের বাণিজ্যতরী রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন মার্কোস কমান্ডোরা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি ছদ্মবেশে হামলা চালাতে সিদ্ধহস্ত নৌসেনার বিশেষ এই কমান্ডো বাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে এই বাহিনীর সদস্যরা নকল দাড়ি লাগান। এই ছদ্মবেশের জন্য মার্কোস কমান্ডোদের অনেকে দাড়িওয়ালা ফৌজ বলে ডাকেন। চিনের লালফৌজকে রুখতেও ব্যবহার করা হচ্ছে মার্কোস কমান্ডোদের। লাদাখের প্যাংগং লেকে টহলদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মার্কোসই।
সংখ্যায় তাঁরা অল্প, কিন্তু নির্ভীক। পাহাড় ফুঁড়ে হোক, সমুদ্রের তলে অভিযান, সবক্ষেত্রেই সফলতার হার প্রায় ১০০ শতাংশ। বলা হয় এদের খুব একটা সহজে দেখা যায় না। অদৃশ্য বাহিনীর মতো কাজ করে। মার্কোস বাহিনীতে যোগদানের পথ কিন্তু সহজ নয়। এক হাজার জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন মার্কোস হওয়ার কঠিন পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন। মার্কোস কমান্ডো হতে গেলে তিন বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। মূলত নৌবাহিনীর জওয়ানরা মার্কোস কমান্ডো হওয়ার সুযোগ পান। চারটি পর্যায় পার করতে হয়। প্রতি বছরে ৮০ শতাংশের বেশি আবেদনকারী প্রথম তিনদিনের কঠিন-দীর্ঘ শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষায় বাদ পড়ে যান। যাঁরা এই তিনদিন পার করতে পারেন তাঁদের ৫ সপ্তাহের একটা লম্বা পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যা পরিচিত হেল উইক বা নরকের সপ্তাহ নামে। এই পর্যায়ে জওয়ানদের টানা কয়েকদিন ঘুমোতে দেওয়া হয় না বলে খবর। হেল উইকে প্রতিদিন ২০ ঘণ্টা অনুশীলন করানো হয়। সকালে ২০ কিলোমিটার দৌড়াতে হয়। রাতে ৭ কেজি ওজন কাঁধে নিয়ে ২০ কিলোমিটার হাঁটা। জওয়ানদের শুয়ে, দাঁড়িয়ে, দৌড়াতে দৌড়াতে সঠিক নিশানায় গুলি ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বরফ জলে ডুবে থেকেও নানা কোর্স করানো হয়।
নরকের সপ্তাহের পর আসে আর এক কঠিন পরীক্ষা। যা ডেথ ক্রল নামে পরিচিত। শরীরে বাঁধা থাকে ২৫ কেজি ওজনের বন্দুক ও অন্যান্য সামরিক সাজ-সরঞ্জাম। ওই অবস্থায় প্রায় ২ কিলোমিটার সরীসৃপ ভরা কাদামাটি পার করতে হয়। এখানেই শেষ নয়। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর লক্ষ্য বস্তুতে গুলি করতে হয়। নিশানা লাগাতে না পারলেই পরীক্ষায় ফেল। যাঁরা ডেথ ক্রল পর্ব পেরিয়ে যান তাঁদের পাঠানো হয় কোচির ডাইভিং স্কুলে। এখানে আবার ৫০ শতাংশ ক্যাডারদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাঁরা অবশিষ্ট থাকেন তাঁদের মার্কোস কমান্ডোর চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্পেশ্য়াল ফোর্সের ট্রেনিং চলে। গেরিলা কায়দায় হামলা থেকে সাপ-ইঁদুর ধরে খাওয়ার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।