Soami Bagh mausoleum: আগ্রাতেই নতুন মার্বেল পাথরের বিস্ময়, আর কি তাজমহল দেখবে কেউ?
Soami Bagh mausoleum: সতেরোশ শতকে, স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে তাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। তারপর থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন তাজমহলকে চাক্ষুস করতে। কিন্তু, এবার আগ্রাতেই তৈরি হয়ে গিয়েছে তার এক প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী।
আগ্রা: আগ্রা শহরের নাম বললেই প্রথমেই সকলের মাথায় আসে তাজ মহলের কথা। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্যের অন্যতম। প্রতিদিন সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন তাজমহল দর্শনে। তবে, ইদানিং তাজমহলের এই খ্যাতিতে ভাগ বসাচ্ছে আগ্রারই এক নতুন স্মৃতিসৌধ। তাজমহলের মতোই সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি। সতেরোশ শতকে, স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতিতে তাজমহল তৈরি করিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহান। হাজার হাজার দক্ষ কারিগর ২২ বছরে তৈরি করেছিলেন তাজমহল। আগ্রার নয়া কাঠামোটি কিন্তু তৈরি করতে সময় লেগেছে এক শতাব্দীরও বেশি। আর এটা কোনও প্রেমের স্মৃতি সৌধ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আধ্যাত্মিক টান। এই নয়া সৌধটি হল রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা পরম পুরুষ পূর্ণধ্বনি স্বামীজি মহারাজের সমাধি। প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশ, পঞ্জাব, কর্নাটকে এবং বিদেশেও এই সম্প্রদায়ের লক্ষ লক্ষ ভক্ত আছেন।
তাজমহল থেকে প্রায় ১২ কিমি দূরে, আগ্রার দয়ালবাগ এলাকার স্বামী বাগ কলোনিতে এই বিশাল সমাধিটি তৈরি করা হয়েছে। ৫২টি কূপের ভিতের উপর, ১৯৩ ফুট দীর্ঘ কাঠামোটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ১০৪ বছর। এতে ব্যবহার করা হয়েছে রাজস্থানের মাকরানা থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথর। এখনও অবশ্য সৌধটির নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি। কিছু ছোটখাটো সংযোজন বাকি আছে। কিন্তু, এই সৌধ তৈরিতে এত ময় লাগল কেন? রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের এক সদস্য জানিয়েছেন, তাঁদের কাথে বিশাল মাপের গ্রাইন্ডার, কাটার, ফিনিশার, লরি, লিফটার এবং সমস্ত ধরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি রয়েছে। তবে, প্রায় এক শতাব্দী ধরে মূলত হাতে করেই এই নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের মানুষ। নির্মাণের তদারকিকারীরা জানিয়েছেন, “এটা এক ধরনের পুজো। নিরলসভাবে এই পুজো হয়ে এসেছে এবং আগামীদিনেও চলবে।”
জানা গিয়েছে, পূর্ণধ্বনি স্বামীজি মহারাজের মূল সমাধিটি ছিল একটি সাদা বেলেপাথরের সাধারণ কাঠামো। ১৯০৪ সালে, এলাহাবাদের এক স্থপতি একটি নতুন নকশা তৈরি করেছিলেন। প্রথম কয়েক বছর, বিভিন্ন কারণে কাজ আটকে ছিল। কিন্তু, ১৯২২ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই সৌধ নির্মাণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। কিছু কিছু মানুষ তো, এখানেই তাঁদের গোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের আগে, তাঁদের পূর্বপুরুষরাও একই কাজ করেছেন। তাঁদের ছেলে-নাতিরাও এখন এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। তবে, শেষ পর্যন্ত ভবনটির কোনও নির্দিষ্ট শৈলী মেনে তৈরি হয়নি। মূলত প্রাচ্য শৈলীর হলেও, এই স্থাপত্যে বিভিন্ন ধাঁচের নির্মাণ শৈলীর মিশেল ঘটেছে।
তাজমহলের দর্শক যে কমেছে তা নয়। আগ্রায় এলে এখনও সকলে প্রথমেই তাজমহলই দেখতে চান। কিন্তু, আধ্যাত্মিক টানে, বহু মানুষের পা এখন পড়ছে স্বামীবাগেও। ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীরা, তাজমহলের সঙ্গে সোমিবাগ সমাধির তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছেন। এর চূড়াটি তাজমহলের থেকেও লম্বা, উচ্চতায় ৩১.৪ ফুট। তার উপর এটি সোনার পাত দিয়ে মোড়া। প্রতিদিন বাসে প্রচুর পর্যটক এই সমাধি দর্শন করছেন। সৌধটির চমৎকার কারুকার্যের প্রশংসা করছেন। সাদা মার্বেলের এই নির্ভেজাল কাঠামোটি, তাজমহলের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবে, স্বামীবাগ সৌধের নির্মাতারা, এই সৌধকে তাজমহলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের সেই রকম কোনও পরিকল্পনা নেই বলে দাবি করেছেন। রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের মানুষের মতে, এই সৌধকে শুধু তাজমহল কেন, অন্য কোনও ভবনের সঙ্গেই তুলনা করা ভুল হবে। কিন্তু পর্যটকরা সেই কথা শুনলে তো। তাজমহলের প্রতিদ্বন্দ্বী কিনা, তা নিয়ে তর্ক চলতেই থাকবে। তবে, এই সৌধটি নিঃসন্দেহে মুঘল যুগের স্মৃতিসৌধে ভরা আগ্রা শহরে নয়া জমক যোগ করেছে।