Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

PK-কে টক্কর দিতে মাঠে SK! এই প্রাক্তন সহকর্মীই এবার প্রশান্ত কিশোরের চ্যালেঞ্জার?

Prashant Kishor vs Sunil Kanugolu :সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা ম্যাককিন্সের থেকে বেরিয়ে ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারে যোগদান করেন সুনীল কানুগোলু

PK-কে টক্কর দিতে মাঠে SK! এই প্রাক্তন সহকর্মীই এবার প্রশান্ত কিশোরের চ্যালেঞ্জার?
গ্রাফিক্স- Tv9 বাংলা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 28, 2022 | 7:22 PM

নয়া দিল্লি: এক সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। তারপর অতিবাহিত অনেকটা সময়। যখন ফের দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গেল, তখন আর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার অবস্থানে ছিলেন না। সে দিন তাঁরা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। একজন প্রশান্ত কিশোর। পরিচিতি বলতে নামটাই যথেষ্ট। অন্যজন, সুনীল কানুগোলু। বুঝতেই পারছেন, নাম তো শুনা হি হোগা…এই ট্যাগ লাইন তাঁর জন্য অন্তত খাটে না। প্রচারের এই সপ্তম স্বর্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কোনও ছবি পর্যন্ত নেই। এই মানুষটি ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। উল্টো দিকে গোহারা হারে কংগ্রেস, যার পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ওই পরাজয় বিজেপির কাছে কংগ্রেসের চেয়ে অনেকাংশেই সুনীল কানুগোলুর কাছে প্রশান্ত কিশোরের পরাজয় বলে ধরা যেতে পারে। 

উত্তর প্রদেশের বিশাল জয়ের পরও সুনীল কানুগোলুর নাম সে ভাবে শোনা যায়নি। বরং যত সময় গিয়েছে আরও অন্তরালে থেকে কাজ করে গিয়েছেন কানুগোলু। সম্প্রতি, কংগ্রেসের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের টানাপোড়েন এবং আসন্ন কর্নাটক ও তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের পরামর্শদাতা হিসাবে কানুগোলুর যোগদান, তাঁর পরিচিতি নিয়ে কৌতুহল বাড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সবারই প্রশ্ন, কে এই কানুগোলু?

বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। কর্নাটকের বেলারি জেলায় জন্ম। স্কুলের পড়াশুনা সেখানই। এরপর চেন্নাইয়ের অন্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট অব টেকনলজিতেও স্নাতকোত্তর। তাঁর বায়োডাটা তথ্য বলতে এইটুকুই। না আছে ফেসবুক প্রোফাইল আর না আছে ইনস্টা-টুইটার বা ইউটিউব হ্যান্ডেল। কোনও মিডিয়া পার্সনও নেই। নিজের কাজের প্রচার নেই। প্রেস কনফারেন্স করেন না। তবুও অন্তত ১২ জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই কাজ করে ফেলেছেন কানুগোলু। আর এই সবটাই অন্তরালে।

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থা ম্যাককিন্সের থেকে বেরিয়ে ২০১৩ সালে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রচারে যোগদান করেন সুনীল কানুগোলু। এই সময় সরাসারি নরেন্দ্র মোদীর সংস্পর্শে আসেন তিনি। তখনও প্রশান্ত কিশোর যোগ দেননি মোদীর নির্বাচনী প্রচারে। সূত্রের আরও খবর, সে সময় নির্বাচনী প্রচার নিয়ে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন দেখিয়ে নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন হন কানুগোলু। মোদীর ঘনিষ্ঠ ক্যাম্পেনার হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন কানুগোলু। এরপর ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে মোদীর ক্যাম্পেনের দায়িত্ব নেয় প্রশান্ত কিশোরের ‘সিটিজেনস ফর অ্যাকাউন্টেবল গভার্নেন্স’ বা ক্যাগ। সেই সময় থেকেই কিশোর ও কানুগোলুর একসঙ্গে কাজ করার শুরু।

২০১৪ সালে মোদীর বিপুল জয়ের নেপথ্য নায়ক হিসাবে প্রশান্ত কিশোরের নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। ক্যাগ সংস্থাকে ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (আই-প্যাক) নামে ব্রান্ডিং করতে শুরু করেন প্রশান্ত কিশোর। এরপর নীতীশ কুমারের জেডিইউ-র সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন পিকে। অন্যদিকে কানুগোলু বিজেপিতে থেকেই তাঁর কাজ চালিয়ে যান। ২০১৬-তে প্রশান্ত কিশোরকে টক্কর দিতে কানুগোলুকে কনসালটেন্সি তৈরির পরামর্শ দেয় বিজেপি। সাতেরোর উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কানুগোলু তৈরি করেন অ্যাসোসিয়েট অব ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডস (এবিএম)। তাঁর এই সংস্থা প্রশান্ত কিশোরের আই-প্যাকের সঙ্গে জোর লড়াই দিয়ে যোগী আদিত্যনাথকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। ২০১৮ সালে এবিএম ছেড়ে পিকের মতোই স্বতন্ত্রভাবে কাজ শুরু করেন কানুগোলু।

এখনও পর্যন্ত ১৪টি নির্বাচনে কাজ করেছেন সুনীল কানুগোলু। বিজেপির হয়ে ৯টি নির্বাচন, ডিএমকে-র হয়ে দুটি, বাকি অকালি, এআইডিএমকে-র সঙ্গেও কাজ করেন তিনি। এবার কর্নাটক ও তেলঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের দায়িত্ব নেন কানুগোলু। ২০১৬ সালে তামিলনাড়ুর নির্বাচনে ডিএমকের নেতৃত্ব দিলেও জয়ের মুখ দেখাতে পারেননি এম করুণানিধিকে। তবে, গত নির্বাচনের থেকে ৬৭ টি আসন বাড়াতে পেরেছিল ডিএমকে। এই সাফল্যও কানুগোলুর কাঁধেই বর্তায় বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহল।

প্রশান্ত কিশোর নিজেকে এবং তাঁর সংস্থাকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে তৎপর ছিলেন প্রথম থেকেই। নরেন্দ্র মোদীর পর কেজরীবাল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জগন্মোহন রেড্ডি কিংবা ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে যে সাফল্য এসেছে, তা নিজের প্রোফাইলে কর্পোরেট কায়দায় কাজে লাগিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। সাংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার, ঘনঘন টুইট এবং প্রথম শ্রেণির রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠাতা- সব কিছুকেই হাতিয়ার করে মিডিয়ায় চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন পিকে। তার ঠিক উল্টো মেরুতে থেকেছেন সুনীল কানুগোলু। তাঁর ঘনিষ্ঠবৃত্তে জানা যায়, কানুগোলু সচেতনভাবেই নিভৃতে থাকতে ভালবাসেন। প্রশান্ত কিশোরের যদি প্রচার কৌশল হয়ে থাকে, কানুগোলুর কাছে অন্তরালে থাকাটাই কৌশল। জানা যায়, তিনি এই শিক্ষা পেয়েছেন তাঁর প্রাক্তন সংস্থা ম্যাককিন্সে থেকে। সেখানে নাকি শেখানো হয়, কোনও সংস্থার সঙ্গে কাজ করলে নিজের ভাবনা এবং মতামত জনসমক্ষে আনা উচিত নয়। ম্যাককিন্সের এই ভাবনা তাঁকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন অনেকে।

সম্প্রতি ‘জরাজীর্ণ’ কংগ্রেসের হাল ফেরাতে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। সূত্রের খবর, কংগ্রেসে প্রশ্নাতীত পদও চেয়েছিলেন তিনি, যেখানে নিজের মতো করে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে, তাঁর দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে গান্ধী পরিবার। প্রশান্ত কিশোরও টুইটে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আপাতত কংগ্রেসের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোর গাঁটছড়া না বাঁধলেও, ভোটকুশলী সুনীল কানুগোলুকে কর্নাটক ও তেলঙ্গানায় নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। চব্বিশের আগে এই দুই বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস যদি দারুণ ফল করে, সে ক্ষেত্রে পিকে-কংগ্রেসের সমীকরণও বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এমনকী ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকে জোর টক্কর দিতে পারেন ‘মেঘের আড়াল’ থেকে লড়াই করা ‘মেঘনাদ’ কানুগোলুও।

আরও পড়ুন- পিকের ‘প্রেসক্রিশন’ মেনেই চলছে ‘ট্রিটমেন্ট’! পদ ছাড়লেন কমল নাথ