Next CDS General: বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর পর খালি প্রতিরক্ষা প্রধানের পদ, উত্তরসূরী বাছতে এত সময় লাগছে কেন?

Why it is Taking time to choose Next CDS General: আমেরিকায় সেনাবাহিনীর নীতি অনুযায়ী, সাধারণত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সেনা কর্তাদের নিয়োগের অগ্রিম ঘোষণা করা হয়, যাতে সঠিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে। ভারতীয় ব্যবস্থাও আনুষ্ঠানিকভাবে একই নিয়ম রয়েছে।

Next CDS General: বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর পর খালি প্রতিরক্ষা প্রধানের পদ, উত্তরসূরী বাছতে এত সময় লাগছে কেন?
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 15, 2021 | 5:09 PM

বিক্রম বোহরা (লেখক, সাংবাদিক)

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শপথ নিয়েছিলেন লিন্ডন জনসন। তিনি যখন শপথ নিচ্ছিলেন, অদূরেই রাখা ছিল কেনেডির রক্তাক্ত ছবি, সর্বকালের ইতিহাসে এটিকে অন্যতম মর্মস্পর্শী ছবি বলে মনে করা হয়। প্রতিরক্ষা পদ খালি হওয়ার অল্প সময়্র মধ্যেই উত্তরসূরীদের নিয়োগ করা হয়, কারণ এই ধরনের জাতীয় পদগুলি খালি্ রাখা যায় না। সেই কারণেই রাষ্ট্রপতির হঠাৎ মৃত্যু হলে উপরাষ্ট্রপতিকে অবিলম্বে রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিয়োগ করা হয়। কারণ একটাই, ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

দুই বছর আগে, যখন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের পদ ঘোষণা করা হয় এবং জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে এই পদে নিয়োগ করা হয়,  সেই সময় এই পদটিকেঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই উল্লেখ করা হয়েছিল। দেশের তিনটি সামরিক বাহিনীর মধ্যে আরও ভালভাবে সমন্বয় হতে পারে এবং সামরিক নীতিগুলির সিদ্ধান্ত মিলিতভাবে নেওয়া যেতে পারে, সেই কাজটিই করবেন প্রতিরক্ষা প্রধান। তবে সেই সময় অনেকেই এই পদ গঠনের সিদ্ধান্তকে অর্থহীন বলে মনে করেছিলেন। শেষমেশ সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতেই হয়েছিল, কারণ এটি বড় পরীক্ষা ছিল এবং বাস্তবে বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা ছিল।

তবে প্রশ্ন উঠছে, এত গুরুত্বপূর্ণ পদে জেনারেল রাওয়াতের উত্তরসূরি ঘোষণা নিয়ে এত রাখঢাক রাখা হচ্ছে কেন? সশস্ত্র বাহিনীর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনও পদের শীর্ষকর্তারা অনুষ্ঠানে উত্তরসূরির হাতে দায়িত্ব অর্পণ করেন। সেই সময়ে দুইজন একে অপরকে অভিবাদন জানাযন এবং করমর্দন করেন। প্রতিটি বাহিনীর সমস্ত স্তরেই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এটি এমনই একটি প্রক্রিয়া যাতে কখনই বাধা দেয় না এবং পদটি ফাঁকা রাখা হয় না।

তামিলনাড়ুর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার ভয়াবহতা ও সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর গুরুত্ব যেমন আমরা বুঝতে পারছি, তখন তাঁর উত্তরসূরির নিয়োগের গুরুত্বও বোঝা প্রয়োজন। এটা কেবল স্বতঃফূর্তভাবে সরকারি আধিকারিকের রদবদল নয়, নিয়োগে দেরী হওয়াকে কেন্দ্র করে রাজনীতিকরণও শুরু হয়ে যায়। এই বিষয় নিয়ে রাখঢাক থাকা একদমই উচিত নয়। এছাড়া সিডিএসের শূন্য পদ নিয়ে বাহিনীর তিন বা চার তারকাযুক্ত আধিকারিকদের মধ্যেও চাপানউতোর শুরু হয়। তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে কারোরই এখন অবসর নেওয়ার সম্ভাবনা না থাকায়, তাদের মধ্যে থেকে কাউকেই এই পদে নির্বাচিত করা উচিত। তাহলে এই বিষয়টিকে এত দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে কেন?

স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এই পদে যখন বিপিন রাওয়াতকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তখন তাঁর উত্তরসূরী নিয়ে বিশেষ চিন্তাভাবনা করা হয়নি। সর্বেপরি বিষয় হল, প্রতিরক্ষা প্রধান বিপিন রাওয়াতকে একদিন না একদিন তো অবসর নিতেই হত। তিনি ইতিমধ্যেই দুই বছর এই পদে দায়িত্বভার পালন করেছিলেন এবং আগামিদিনে ওনাকে অন্য কারোর হাতে এই দায়িত্বভার তুলে দিতেই হত। এতেই ফের প্রমাণ হয় যে প্রতিরক্ষা প্রধানের এই পদ নিয়ে বিশেষ চিন্তাভাবনা করা হয়নি।এই ঘটনা কেবল সিডিএসের পদের মূল্যকেই হ্রাস করে না, একইসঙ্গে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলে যে আদৌই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ নাকি শাসকের আনুগত্যের উপহার হিসাবে কাউকে বাহিনীতে রাখার জন্যই এই পদ তৈরি করা হয়েছিল।

সেনাবাহিনী, নৌসেনা ও বায়ুসেনার প্রধানের নিয়োগ নিয়ে গোপনীয়তা না রাখাই শ্রেয়, বিশেষত যেখানে তিন পদকযুক্ত কোনও আধিকারিক নিয়ম ভেঙে নিজেকে যোগ্য পদপ্রার্থী হিসাবে প্রমাণিত করার জন্য প্রচার চালান। এই সমস্ত বিষয়গুলি সাধারণত পদপ্রার্থীরা কোন রাজ্য থেকে এসেছেন, তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি কী, কেন্দ্রের শাসকের সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন এবং কাদের টপকিয়ে তারা আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছেন, এই বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়। তবে কোনও একজন তিন পদক বিশিষ্ট আধিকারিক, বিভাগের সবথেকে পোড় খাওয়া ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও অন্য কাউকে কীভাবে নিয়োগ করা হয়, তা এখনও বোধগম্য নয়। কিন্তু বর্তমানে এটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। যদি কোনও পদ বা অবস্থানে পৌঁছনোর জন্য কাউকে অসাধারণ হতে হয়, যার অন্য কারোর সঙ্গে কোনও তুলনা হয় না, তবে এই ধরনের পদ রাখার অর্থ কী?

মনে করা হচ্ছে, সিডিএসের শূন্য পদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন যে এটি আমলা এবং রাজনীতিবিদদের একটি খেলা। সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ নারাভানেই যখন স্পষ্টতই এই পদের সবচেয়ে বড় দাবিদার, তখন তাঁকে এই পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা কেন করতে হবে? নিয়ম অনুযায়ী, ওই দিনেই তাঁকে সিডিএস পদে নিয়োগ করা উচিত ছিল।

আমেরিকায় সেনাবাহিনীর নীতি অনুযায়ী, সাধারণত স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সেনা কর্তাদের নিয়োগের অগ্রিম ঘোষণা করা হয়, যাতে সঠিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে। ভারতীয় ব্যবস্থাও আনুষ্ঠানিকভাবে একই নিয়ম রয়েছে, তবে  শেষ মুহূর্ত অবধি নাম না ঘোষণা করার একটি প্রক্রিয়া রয়েছে, যাতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম থাকে।

ব্রিটেনে ১৭৪৫ সালে সর্বশেষ  কমান্ডার-ইন-চিফ পদটি  খালি রাখা হয়েছিল। ডিউক অফ কাম্বারল্যান্ড প্রিন্স উইলিয়াম যখন ডিউক ফিল্ড মার্শাল জর্জ ওয়েডের পদটি গ্রহণ করেন, তখনই কেবল এই শূন্যপদ তৈরি হয়েছিল।

আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে গৌরবময় একটি সেবা হিসাবে মনে করা হয়। এর মৌলিকতা বজায় রাখতে, এইধরনের যাবতীয় নিয়োগের ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলের কথা বিবেচনা করা উচিত,  যাতে বাহিনীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। সিডিএস পদে উত্তরসূরী নিয়োগে দেরী করার কোনও কারণ নেই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কার জন্য অপেক্ষা করছে? এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতি, তাৎক্ষণিক উত্তরসূরী নিয়োগে ভাবে দাবি করে, যাতে সশস্ত্র বাহিনীর উপর সর্বদা কারোর ছায়া রয়েছে, এই বার্তা স্পষ্টভাবে দেওয়া যায়।

আরও পড়ুন: Renewable Sectors: কয়লাকেও ফেল! বছরে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ টানল পরিবেশবান্ধব শিল্প