Recruitment Scam: ‘অপা’ থেকে শুরু, তালিকা বাড়তে বাড়তে এখন ২১! দেখে নিন নিয়োগ দুর্নীতিতে কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ

Recruitment Scam: পার্থ-অর্পিতাকে দিয়ে যে তালিকা শুরু হয়েছিল, তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি-সিবিআই মিলিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ২১ জন।

Recruitment Scam: 'অপা' থেকে শুরু, তালিকা বাড়তে বাড়তে এখন ২১! দেখে নিন নিয়োগ দুর্নীতিতে কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ
নিয়োগ দুর্নীতি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 20, 2023 | 10:51 PM

কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) জাল কতদূর ছড়িয়ে রয়েছে, তার উত্তর খুঁজতে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি। ইডি-সিবিআই-এর তদন্তে জালে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। শুরুটা হয়েছিল গতবছরের জুলাই মাসে। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে (Arpita Mukherjee) গ্রেফতার করেছিল ইডি। অর্পিতার বাড়ি থেকে বান্ডিল বান্ডিল টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছিল। তারপর থেকে যত সময় গড়িয়েছে, তত লম্বা হয়েছে গ্রেফতারির তালিকা। প্রাক্তন শিক্ষাকর্তা থেকে তৃণমূলের একাধিক নেতা গ্রেফতার হয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে। পার্থ-অর্পিতাকে দিয়ে যে তালিকা শুরু হয়েছিল, তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি-সিবিআই মিলিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ২১ জন।

কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ?

পার্থ চট্টোপাধ্যায় – রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগে যে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব শেষে নাকতলার বাড়ি থেকে গতবছরের ২৩ জুলাই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। যেহেতু তিনি সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, তাই তিনি যে কিছুই জানতেন না, একথা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় সংস্থা। পরবর্তীতে তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বহু তথ্য এসেছে ইডির হাতে, যা পার্থকে আরও কোনঠাসা করেছে মামলায়।

অর্পিতা মুখোপাধ্যায় – পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রায় একই সময়ে হানা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে গাদা গাদা নোট উদ্ধার হয়। ২০০০ টাকা ও ৫০০ টাকার বান্ডিল মিলিয়ে মোট প্রায় ২১ কোটি টাকা নগদে পাওয়া গিয়েছিল অর্পিতার ডায়মন্ড সিটির ফ্ল্যাট থেকে। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করে ইডি। পরে অর্পিতার বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকেও কোটি কোটি টাকার সন্ধান মেলে।

মানিক ভট্টাচার্য – তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি। প্রাথমিক টেটে তাঁর আমলেই বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অফলাইনে রেজিস্ট্রেশনের নাম করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে বয়ানে অসঙ্গতি ও তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ গতবছরের অক্টোবরে নাকাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ককে গ্রেফতার করে ইডি।

শতরূপা ভট্টাচার্য ও সৌভিক ভট্টাচার্য– শতরূপা ভট্টাচার্য হলেন মানিকের স্ত্রী। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং একাধিক অ্যাকাউন্টে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা ঢুকেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে মানিক পুত্র সৌভিক ভট্টাচার্যের নামেও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। সৌভিকের যে কনসাল্টেন্সি রয়েছে, সেটি বিভিন্ন ডি.এল.এড কলেজ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা তুলত বলে অভিযোগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানিকের স্ত্রী-পুত্রকে গ্রেফতার করে ইডি।

কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় – মধ্য শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগপত্রে তাঁর সই ছিল। কেন তিনি কিছু না দেখে হাই-পাওয়ার্ড কমিটির কথা শুনে নিয়োগপত্র দিয়ে দিলেন? সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাচাই না করেই এসপি সিনহা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। গতবছরের সেপ্টেম্বরে কল্যাণময়কে গ্রেফতার করে সিবিআই।

অশোক সাহা – অশোক সাহা ছিলেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের তৎকালীন সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনিও কেন কিছু দেখে হাই-পাওয়ার্ড কমিটির কথা মতো ভুল সুপারিশ দিলেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গতবছরের অগস্টে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

সুবীরেশ ভট্টাচার্য – সুবীরেশ ভট্টাচার্য ছিলেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকা অবস্থাতেই গতবছরের সেপ্টেম্বরে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

শান্তিপ্রসাদ সিনহা – এসএসসি উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন আহ্বায়ক শান্তিপ্রসাদ সিনহা। নিয়োগ দুর্নীতিতে শান্তি প্রসাদের ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল বাগ কমিটি। এসপি সিনহার বাড়িতেও হানা দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সেখান থেকে আয়-ব্যয়ের হিসেব থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন নথি হাতে আসে গোয়েন্দাদের। গতবছরের অগস্টে এসপি সিনহাকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

প্রদীপ সিং ও প্রসন্ন রায় – প্রদীপ ও প্রসন্ন উভয়েই ছিল এই নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের মিডলম্যানের ভূমিকায়। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত প্রক্রিয়া এগোতেই, এদের চক্রের বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায়। নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত একাধিক তথ্য এদের বিরুদ্ধে উঠে আসে। গতবছরের অগস্টে প্রদীপ ও প্রসন্নকে গ্রেফতার করেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

রঞ্জন ওরফে চন্দন মণ্ডল – প্রাক্তন সিবিআই কর্তা তথা বাগদার প্রাক্তন বিধায়ক উপেন বিশ্বাসের ভিডিয়োয় প্রথম উঠে আসে রঞ্জন নামে এক ব্যক্তির নাম। পরে জানা যায়, এই রঞ্জন আসলে চন্দন মণ্ডল। বাগদা এলাকা থেকে অনেককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চন্দনের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

কুন্তল ঘোষ – নিয়োগ দুর্নীতির অন্যতম পান্ডা এই কুন্তল ঘোষ। কুন্তলের বিরুদ্ধে ১৯ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তাপস মণ্ডল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে হুগলির এই যুব তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে ইডি। সম্প্রতি অবশ্য তৃণমূল কুন্তলকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে।

তাপস মণ্ডল – ডিএলএড কলেজগুলির সংগঠনের সভাপতি হলেন তাপস মণ্ডল। মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। কুন্তল যে ১৯ কোটি টাকা নিয়েছিল, তা এই তাপস মণ্ডলই দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাপসকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

নীলাদ্রি ঘোষ – নীলাদ্রি ঘোষ নামে এই ব্যক্তিই তাপস ও কুন্তলের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল বলে জানা যাচ্ছে। মূলত নিয়োগ দুর্নীতিতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করত এই নীলাদ্রি, অভিযোগ তেমনই। তাপস মণ্ডলের গ্রেফতারির দিনেই নীলাদ্রিকে গ্রেফতার করে সিবিআই।

শাহিদ ইমাম, ইমাম আলি, আব্দুল খালেক, কৌশিক ঘোষ ও সুব্রত সামন্ত রায় – এরা প্রত্যেকেই নিয়োগ দুর্নীতিতে এজেন্টের ভূমিকায় কাজ করত। এদের সঙ্গে চন্দন মণ্ডল, প্রদীপ ও প্রসন্নর যোগাযোগ ছিল বলে অভিযোগ। ফেব্রুয়ারিতে যেদিন চন্দনকে গ্রেফতার করা হয়, সেদিনই এদেরকেও গ্রেফতার করেছিল সিবিআই।

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় – শান্তনুর সঙ্গে কুন্তলের বেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। শান্তনুর ডান হাত হয়ে কাজ করত। এই শান্তনুর সঙ্গে তাপস মণ্ডলের মিটিং হয়েছিল বলে খবর। কুন্তল নাকি বলেছিল, দাদা থাকলে সব হয়ে যাবে। মার্চ মাসেই শান্তনুকে গ্রেফতার করেছে ইডি।

অয়ন শীল – নিয়োগ দুর্নীতির কাণ্ডে গ্রেফতারির লেটেস্ট আপডেট হল এই অয়ন শীল। তিনি শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলেন জানা যাচ্ছে। এমনকী পুরসভার নিয়োগের ক্ষেত্রেও নাম জড়িয়েছে এই অয়নের। সোমবার ভোররাতে অয়নকে গ্রেফতার করে ইডি।