Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Kunal Ghosh: প্রথমে প্রশংসায় শত্রুঘ্ন, এবার রাহুল নিয়ে সুর নরম কুণালের

আগামী লোকসভা নির্বাচনে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীদের বিভাজন সুবিধা করে দেবে বিজেপিকে। এই বিভাজনের সরাসরি দায় নিতে চায় না তৃণমূল।

Kunal Ghosh: প্রথমে প্রশংসায় শত্রুঘ্ন, এবার রাহুল নিয়ে সুর নরম কুণালের
কুণাল ঘোষ। ফাইল ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 09, 2023 | 7:50 PM

কলকাতা: রাহুল গান্ধীকে নিয়ে এবার ভিন্ন সুর শোনা গেল তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের গলাতেও। যা নতুন করে জল্পনা ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। যে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে বারংবার কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসকদল, এখন তারাই রাহুল গান্ধী প্রসঙ্গে সরাসরি আক্রমণের রাস্তায় হাঁটছেন না। বরং রাহুল গান্ধীকে নিয়ে আসানসোলের সাংসদের ভূয়সী প্রশংসার পর এবার কুণাল ঘোষের গলাতেও শোনা গেল নরম সুর। যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু কেন? কী কারণে এহেন অবস্থান বদল? এখন এমনই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য-রাজনীতির অলিন্দে।

কী বলেছেন কুণাল ঘোষ? রাহুল গান্ধী সম্পর্কে শত্রুঘ্ন সিনহার ভূয়সী প্রশংসা প্রসঙ্গে সোমবার তৃণমূল মুখপাত্রকে দলের অভিমত জিজ্ঞাসা করা হয়। জবাবে কুণাল ঘোষ বলেন, “উনি তো বিজেপি বিরোধী একটা অভিযান করছেন। আমরা বিরোধিতা করতে যাব কেন? আমরা তো বলছি আরও সক্রিয় হন। কংগ্রেস বহু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে বলেই বিজেপি সুবিধা পেয়েছে।” এখানেই শেষ নয়, আরও এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, “শত্রুঘ্ন সিনহা যা বলেছেন ওটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। তবে আমরাও চাইছি কংগ্রেস শীতঘুম ছেড়ে বেরোক। কংগ্রেসকে সক্রিয় ও শক্তিশালী হতে হবে৷ ” তবে এ রাজ্যে ভারত জোড়ো যাত্রা করে প্রদেশ নেতারা বিজেপি-কেই সুবিধা করে দিচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন কুণাল ঘোষ।

প্রসঙ্গত, সোনিয়া গান্ধীকে নেত্রী হিসাবে মেনে নিলেও রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে যে আপত্তি আছে তা বরাবরই বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যেই জানিয়েছে তৃণমূল। এমনকি গুজরাট নির্বাচনের সময় আহমেদাবাদে না গিয়ে রাহুল অন্য জায়গায় কেন ভারত জোড়ো যাত্রা করছেন, তা নিয়েও কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। সরব হয়েছিলেন কুণাল ঘোষও। এবার একেবারে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে রাহুল গান্ধীর প্রশংসা কুণাল ঘোষের মুখে? জবাবে স্মিতহাস্য়ে তৃণমূল মুখপাত্র জানান, রাহুল গান্ধী প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে এক সাংসদ এবং পরে দলীয়ভাবে তিনি কুণাল ঘোষ।

বিভিন্ন ধর্মস্থানে গিয়ে উপাসনারত রাহুলের ছবি ইদানিংকালে ভাইরাল হয়েছে। যেভাবে রাহুলের এই সব ছবি লাগাতার পোস্ট করা হচ্ছে, তাতে রাহুল গান্ধীকে ঘিরে এক নমনীয় হিন্দুত্বের তত্ত্ব ইতিউতি উঁকি মারছে নানা আলোচনায়। বিভিন্ন মহলে এই বিষয়ে জোরাল সওয়ালও শোনা যাচ্ছে । এটা নিয়ে তৃণমূল কী ভাবছে?

জবাবে কুণাল ঘোষ সুকৌশলে বিতর্কের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। পাল্টা তিনি বলেন, “শুধু পুজো কেন, উনি ছোট বাচ্চার জুতোর ফিতেও বেঁধে দিচ্ছেন, সেই ছবিও তো দেখা গিয়েছে। তাছাড়া কোন এলাকায় গেলে সংগঠকরা বড় ধর্মীয় স্থান থাকলে সেখানে নিয়ে যায়, এটায় বিতর্কের কি আছে!”

হঠাৎ করে রাহুল গান্ধীকে নিয়ে সুর বদল কেন তৃণমূলের? বিশেষত, রাহুল গান্ধী তৃণমূলের বরাবরের চক্ষুশূল বলেই উঠে এসেছে। ২০১৬ সালে এরাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোটের কারিগর ছিলেন রাহুল গান্ধী। পার্ক সার্কাস ময়দানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে মালা পড়িয়ে যে রাহুল তৃণমূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, যাঁর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক এড়িয়ে যায় তৃণমূল, অন্যান্য আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে করে যে রাহুল পাল্টা ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে (তৃণমূল কে ছাড়া সবাই আছে, চিন্তা নেই- বার্তা দিতে চেয়ে ) লেখেন “নো ফিয়ার “। সেই রাহুল নিয়ে সুর নরম করছে কেন তৃণমূল? তবে কী একটু একটু করে সাড়া ফেলছে ভারত জোড়ো যাত্রা? গত অক্টোবর মাস থেকে লাগাতার কখনও হেঁটে, কখনও ট্রেনে চড়ে রাহুলের মাইল-মাইল সফর কি প্রভাব তৈরি করছে ক্রমশ? চকোলেট বয় রাহুল থেকে কাঁচাপাকা দাড়ির রাহুল কি ফ্যাক্টর হতে পারেন ২৪ এর নির্বাচনে? তার আঁচ কি পাওয়া যাচ্ছে? না কি সমীকরণ করেই রাহুলের নিন্দা থেকে বিরত থাকছে তৃণমূল? এমন প্রশ্নও উঠছে।

আগামী লোকসভা নির্বাচনে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীদের বিভাজন সুবিধা করে দেবে বিজেপিকে। এই বিভাজনের সরাসরি দায় নিতে চায় না তৃণমূল। এমনিতেই গোয়া , মেঘালয়ে কংগ্রেসের আসন কাটাকাটির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও তৃণমূলের পাল্টা যুক্তি, তারা কোনও কংগ্রেসশাসিত রাজ্যে যায়নি। গিয়েছে বিজেপিশাসিত রাজ্যে। কংগ্রেস সেখানে ব্যর্থ। কিন্তু লোকসভার ভোট তো অন্য বিষয়। সম্পূর্ণ আলাদা পরিপ্রেক্ষিত। সেখানে বিজেপি-বিরোধী শক্তিগুলির জোট হওয়া বড় ফ্যাক্টর হয়। সেজন্যই হয়ত রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রার বিরোধিতা করে তৃণমূল আগ বাড়িয়ে ‘ঘর শত্রু বিভীষণ’-এর তকমা লাগাতে চাইছে না তৃণমূল। কুণাল ঘোষের হঠাৎ করে নরম সুর এমন জল্পনাই তুলে ধরছে।

প্রসঙ্গত, রবিবার টুইট করে রাহুল গান্ধীর ভূয়সী প্রশংসা করেন আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। তিনি স্পষ্টত বলেন, “রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রা ২০২৪-এর নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলবে।”