Calcutta High Court: ১০৬টি এলিট ফ্ল্যাট ভাঙবে নিমেশে, নিউটাউন Action Area 3-র হাউজ়িং কমপ্লেক্সের টাওয়ার ভাঙার নির্দেশ হাইকোর্টের
Calcutta High Court On Elita Garden Vista: এলিটা গার্ডেন ভিস্তা দুটি পর্যায়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে, আটটি টাওয়ার নির্মিত হয়েছিল, যার সংখ্যা ছিল ১ থেকে ৫ এবং ১৪ থেকে ১৬। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬ থেকে ১৩ টাওয়ার নির্মিত হয়েছিল। দুটি ক্ষেত্রে বহুতল নির্মাতা আলাদা ছিলেন।

কলকাতা: নয়ডার সুপারটেক টুইন টাওয়ারের কথা মনে আছে? অবৈধ নির্মাণের দায়ে ২০২২ সালে ৩২ তলা ওই বিল্ডিং নিমেশে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-তেও ‘এলিটা গার্ডেন ভিস্তা’, অভিজাত আবাসনের একটি টাওয়ারের ভবিষ্যৎ তেমনটাই হতে চলেছে! গত শক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ এই হাউজিং কমপ্লেক্সের ১৬ তম টাওয়ারটিকে অবৈধ নির্মাণ বলে ঘোষণা করেছে। আদালত ২৬ তলা ওই টাওয়ারের ১৬০টি অ্যাপার্টমেন্ট ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
এলিটা গার্ডেন ভিস্তা
এলিটা গার্ডেন ভিস্তা দুটি পর্যায়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে, আটটি টাওয়ার নির্মিত হয়েছিল, যার সংখ্যা ছিল ১ থেকে ৫ এবং ১৪ থেকে ১৬। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬ থেকে ১৩ টাওয়ার নির্মিত হয়েছিল। দুটি ক্ষেত্রে বহুতল নির্মাতা আলাদা ছিলেন।
২০১৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়। ১৫টি টাওয়ারের কয়েকজন আবাসনের মালিক প্রোমোটার, এনকেডিএ এবং রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, ২০০৭ সালে মূল নির্মাতা ‘কেপেল ম্যাগাস’ ১৫টি টাওয়ার নিয়ে একটি আবাসিক কমপ্লেক্স নির্মাণের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিলেন। বলা হয়েছিল, প্রত্যেকটি টাওয়ারে ২৩ তলা এবং ১,২৭৮টি ফ্ল্যাট থাকবে। কমপ্লেক্সটি WBHIDCO-র ৯৯,৯৮৩ বর্গমিটার জমির উপর নির্মিত হওয়ার কথা ছিল।
অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাওয়ার নির্মাণ
২০১৪ সালে প্রকল্পটি হাতবদল হয়, কেপেল ম্যাগাস বিক্রি করে দেয় বর্তমান প্রোমোটারের কাছে। অভিযোগ, এই প্রোমোটার কমপ্লেক্সের পশ্চিম দিকে একটি উন্মুক্ত জায়গায় অতিরিক্ত টাওয়ার নির্মাণের জন্য NKDA-র কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন তাঁর গৃহীতও হয়।
আবেদনকারীদের বক্তব্য, এই অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি হয়েছিল ২০১৫ সালে ২০ অগস্ট। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন, ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারী। আবেদনকারীদের অভিযোগ, প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্ট মালিকের কার্পেট এরিয়ার আনুপাতিক অংশ ০.১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৮ শতাংশ করা হয়েছে। পথগুলি ৬০০ বর্গমিটার কমানো হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ
২০১৮ সালে সিঙ্গল বেঞ্চ স্পষ্ট করে দেয়, ২০১৫ সালে NKDA যে সংশোধিত প্ল্যানিংয়ে অনুমোদন দিয়েছিল, তা অবৈধ। ১৬তম টাওয়ার অবৈধ ঘোষণা করে আদালত। কিন্তু অভিযোগ, এরপরও নির্মাণকাজ থেমে থাকেনি। এতদিনে ১৬তম টাওয়ারের ২৬তম তলা নির্মিত হয়ে গিয়েছে। ২০২২ সালে কলকাতা হাইকোর্টের আরেক সিঙ্গল বেঞ্চও স্পষ্ট করে দেয়, পূর্বের নির্দেশে হস্তক্ষেপের কোনও প্রয়োজন নেই।
এরপর সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়। ডিভিশন বেঞ্চও সিঙ্গল বেঞ্চের রায় অপরিবর্তিত রাখে। জানিয়ে দেওয়া হয় এই টাওয়ার অবৈধ। বিচারপতি মান্থা ও বিচারপতি গুপ্তারও বেঞ্চ আগামী ২ মাসের মধ্যে ৮ টাওয়ারকে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। সেটা প্রোমোটার নিজেও করতে পারেন অথবা NKDA প্রোমোটারের খরচায় করবে।
আবাসিকদের বক্তব্য
কিন্তু আদালতের নির্দেশে স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছেন আবাসিকরা। আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, “আমাদের বাড়িটাও গেল, আর যে টাকাটা ইনভেস্ট করেছিলাম, তার ম্যাক্সিমামটাও চলে গেল। আমরা কি এই টাকায় কলকাতার বুকে এখন আর কিছু কিনতে পারব?” কিন্তু আতঙ্কে ৭ ও ৯ নম্বর টাওয়ারের বাসিন্দারাও। এক তো সহানুভূতি, আর দুই ভয়! পাশেই এত বড়ো বিল্ডিং ভেঙে ফেললে মাটি তো কাঁপবে! পাশে তাঁদের বিল্ডিংও না নড়ে যায়! বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, এখন তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এই আলোচনাই চলছে। বুলডোজার দিয়ে তো ভাঙা সম্ভব নয়, বরং ভাঙতে গেলে প্রয়োজন ডিনামাইট।
তবে ৮ টাওয়ারের বাসিন্দারা এখনও ভরসা রাখছেন আদালতের ওপরেই। যদি মানবিকতার খাতিরে এই নির্দেশের কোনও পুনর্বিবেচনা হয়!
