KMC Budget: এবারও কলকাতা পুরনিগমের ১৪৬ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট! কারণ জানালেন মেয়র নিজেই

KMC Budget: বাজেট পেশের পর সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র ঘাটতির কারণও ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, পে কমিশন অনুযায়ী একটি বড় অংশ, প্রায় হাজার কোটি টাকা বেতন হিসেবে দিতে হচ্ছে। সেই কারণে এই ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

KMC Budget: এবারও কলকাতা পুরনিগমের ১৪৬ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট! কারণ জানালেন মেয়র নিজেই
ফিরহাদ হাকিম
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 17, 2023 | 7:07 PM

কলকাতা: ঘাটতির পরিমাণ কমল প্রায় ৩১ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থ বসে কলকাতা পুরনিগমের (KMC Budget) ঘাটতি বাজেট পেশ হয়েছিল ১৭৭ কোটি টাকার। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বর্ষের ঘাটতি বাজেট পেশ হল ১৪৬ কোটি টাকার। কিন্তু বিতর্ক কোনওভাবেই কলকাতা পুরনিগমের পিছু ছাড়ল না। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী এমবার্গো না তুলে কখনোই আগামী অর্থবর্ষের বাজেট করা যায় না। কিন্তু সেটাই হল কলকাতা পুরনিগমের এবারের বাজেটে। অর্থ খরচের ওপরে নির্দিষ্টভাবে বিধি নিষেধ না তুলেই বাজেট পেশ করে দিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এমবার্গোর কোনও বিষয় নেই। অপ্রয়োজনীয় খাতে টাকা খরচ করার উপর বিধিনিষেধ এখনও রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ফাইল কখনোই আটকে রাখা হয় না। মূলত তিনি এদিন প্রশ্ন এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে।

যদিও বিরোধী বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা এই বাজেটের ছত্রে ছত্রে হতাশাই দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কলকাতা পুরনিগম আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে প্রস্তাবিত মোট ব্যয় ধরেছেন ৪৬৮৬ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা। প্রস্তাবিত মোট আয় ধরেছেন ৪ হাজার ৫৪০ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যে পরিমাণ রাজস্ব আয়ের কথা তিনি বলেছেন, সেই টাকা কোথা থেকে আদায় হবে? ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আগামী অর্থ বর্ষের রাখা হয়েছে। কিন্তু তা হবে কোথা থেকে? পরিকাঠামো এবং লোক বলের অভাবে একাধিক জায়গা থেকে রাজস্ব আধা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সিদ্ধান্তহীনতায় বর্তমানে ভুগতে থাকেন পুরনিগমের আধিকারিকরা।

বিষয়টি একেবারে এড়িয়ে যাননি কলকাতার মেয়র। এদিন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাজেট পেশ এবং সাংবাদিক বৈঠকের সময় সরাসরি স্বীকার করে নেন, গত অর্থ বর্ষে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তা বহু কারণে তারা পূরণ করতে পারিনি। রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক ছিল না। তাই এবার তারা এই বিষয়ে যথেষ্টই কড়া পদক্ষেপ করবেন। শুধুমাত্র বেআইনি বিজ্ঞাপন আটকে সঠিক বিজ্ঞাপন নীতির মাধ্যমে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান। কিন্তু রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় যেভাবে প্রশাসন আটকে রয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে তা কি আদৌ সম্ভব, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। তবে মেয়রের গলায় কলকাতা পুরনিগমের অনিয়ন্ত্রিত ব্যয় নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপের সুর ঝরে পড়েছে এদিন বাজেট পেশের সময়।

তিনি সরাসরি বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় দিন দিন বেড়ে গিয়েছে। গাড়ির তেল ব্যবহারে ব্যয় এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় পুরনিগমের অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই ব্যয় কমানো না সম্ভব হলে আয় বাড়ানো যাবে না। যদিও সম্পত্তিকর আদায় নিয়ে তিনি যথেষ্টই চিন্তামুক্ত বলে দাবি করেছেন। কারণ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যেখানে ৮৯০ কোটি টাকা সম্পত্তিকর বাবদ আয় হয়েছিল, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থ বর্ষের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট খাতে আদায় হয়েছে ৯৭৫ কোটি টাকা। নথিভূক্ত করদাতার সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে এদিন বাজেট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। গত অর্থ বর্ষে যেখানে করদাতার সংখ্যা ছিল ৮.৭ লক্ষ। সেখানে চলতি অর্থ বর্ষের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত করদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯.১৪ লক্ষ।

তবে এতকিছুর পরেও প্রশ্ন উঠছে, এমবার্গো না তোলার জন্যই কি ঘাটতি বাজেট কমে গেল? কারণ পুরনিগমের ইতিহাস বলছে, বছর বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ বাড়ে। কলকাতা পুরনিগমের ইতিহাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিভূত ঘাটতির পরিমাণ ২ হাজার ১৭১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত অর্থ বর্ষের খরচের ওপর যে বিধি নিষেধ ছিল, তা পরিকল্পনামাফিক কি তোলা হল না? বাজেট পেশের পর কি বলা হয়েছিল গত অর্থ বর্ষে? নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, পুর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (কোড নং-৪০০) এবং স্থায়ী সম্পদ (কোড নং-৮০০) তৈরির জন্য যে অর্থ বাজেটে বরাদ্দ হয়েছে, তার মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকার প্রাথমিক অনুমোদন কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা আপাতত আটকে রাখা হচ্ছে। বরাদ্দকৃত ৬০ শতাংশ টাকায় বিভাগীয় কাজগুলি সম্পাদন করে তার যাবতীয় নথি জমা দিলেই বাকি টাকা অনুমোদন করা হবে। কিন্তু দেখা গেল, সংশ্লিষ্ট অর্থবর্ষে যে ৬০ শতাংশ টাকা প্রথম ভাগে খরচ করার কথা ছিল, সেই টাকা জোগাড় করে উঠতেই পারলো না কলকাতা পুরনিগমের অর্থ বিভাগ। এবারও বাজেট পেশের পর যাবতীয় প্রস্তাবিত খরচের উপরে এমবার্গো জারি করা হবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে।

বাজেট পেশের পর সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র ঘাটতির কারণও ব্যাখ্যা করলেন। বললেন, পে কমিশন অনুযায়ী একটি বড় অংশ, প্রায় হাজার কোটি টাকা বেতন হিসেবে দিতে হচ্ছে। সেই কারণে এই ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এর পাশাপাশি পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং কোভিড পরিস্থিতির কারণে বেশি কর বসানোও যাচ্ছে না। সেটিও একটি বড় সমস্যা বলে জানালেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় বুস্টিং পাম্পিং স্টেশন তৈরি করাতেও একটি বড় খরচ হচ্ছে। এবারের বাজেটে প্রচুর বুস্টিং পাম্পিং স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়।