কেবল দলবদলুরাই নন, পদ্মের পুরনো লোকও এবার মুকুলের হাত ধরে তৃণমূলের পথে!
মুকুল রায় (Mukul Roy) তৃণমূলে ফেরার পর লাইনে রয়েছেন আরও অনেকে। বেসুরো বিজেপিরও বহু নেতা। এদিকে দলবদলুদের ফেরানোয় তৃণমূলে (TMC) আপত্তি অনেকেরই।
কলকাতা: ভোট মিটলেও জারি বঙ্গ যুদ্ধ। বেসুরোদের নিয়ে এবার অস্বস্তি দুই শিবিরেই। মুকুল রায় (Mukul Roy) তৃণমূলে ফেরার পর লাইনে রয়েছেন আরও অনেকে। বেসুরো বিজেপিরও বহু নেতা। এদিকে দলবদলুদের ফেরানোয় তৃণমূলে (TMC) আপত্তি অনেকেরই।
এই সপ্তাহের শুরুতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি আসতে পারেন আরও অনেকে। এমনই ২৫ জনের তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তৃণমূলে ফেরার পরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ সেরে ফেলেছেন মুকুল রায়। সেখানেই এই ব্যক্তিদের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে আলোচনা হয়ে গিয়েছে এক প্রস্থ। নির্বাচনের আগে যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কিংবা মুকুলের হাত ধরেই যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কেবল তাঁরা নয়, তৃণমূলে যোগদানের ক্ষেত্রে নাম উঠে আসছে মনোজ টিগ্গার মতো বিজেপি নেতারও। কেবল দলবদলু নয়, বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতাও যোগে দিতে পারেন তৃণমূলে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা।
মুকুল রায় এখন বিজেপি অন্দরে সবচেয়ে বড় কাঁটা! একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে যখন ঢালাও দলবদলের মরসুম চলছিল, তখন মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাননি। তিন বছর আগে তিনি যখন গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান, তখন বাংলায় বিজেপি ২০১৯ এর সাফল্য দেখেনি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ভেবেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, ভোট বুঝদার-দক্ষ সংগঠককে দলে নিলে লাভ বিস্তর।
সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠদের আপত্তি থাকলেও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সিলমোহরে তা ধোপে টেকে নি। এখন মুকুল দল ছাড়ার পর বিজেপি অন্দরেই তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তথাগত রায় টুইট করে লিখেছেন, “মুকুল রায় ছিলেন ট্রয়ের ঘোড়া। বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করে, ভিতরের সব কথা জেনে চলে গেলেন আর মমতাকে সব জানিয়ে দিলেন।”
একটি কাঠের ঘোড়াকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে ট্রয় জয় করেছিল গ্রিকরা। ১০ বছর ট্রয় অবরুদ্ধ করে রেখেই ভিতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়েছিল গ্রিকরা। তখন পরিকল্পনা করে, একটি কাঠের ঘোড়া বানানো হয়। তাতে লুকিয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন সেনা। বাকিরা আড়ালে চলে যান। নগরের বাইরে দাঁড়ানো বিশাল কাঠের ঘোড়াকে জয়ের স্মারক হিসাবে মনে করে ভিতরে নিয়ে যায়। রাতে সেই ঘোড়ার পেটের ভিতর থেকেই সেনারা বেরিয়ে মূল দরজার ফটক খুলে দেয়। আর বাইরে লুকিয়ে থাকা গ্রিক সেনারা ঢুকে পড়ে। অপ্রস্তুত ট্রয়ের সেনাদের হত্যা করে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তথাগত রায় আসলে ট্রয়ের ঘোড়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তাঁর দলেরই কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে এ মন্তব্য আগেই করেছিলেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। মার্চে ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, “প্রশান্ত কিশোরের গেম প্ল্যানে বিজেপি কুপোকাত। পরিকল্পনা করে অনেক তৃণমূল নেতাকে বিজেপিতে গুপ্তচর হিসাবে ঢোকানো হয়েছে।”
তৃণমূলে থাকাকালীন অনেকেই মুকুলের সঙ্গে অনীল বিশ্বাসের তুলনা করতেন। আপাতত তিনি বিজেপির কাছে ধাঁধা রেখেই ফিরলেন তৃণমূলে। মুকুল তো এসেছেন, সঙ্গে নিয়ে আসছেন আর কাকে? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক মহলে সরগরম। আর চিন্তা বাড়াচ্ছে বিজেপি অন্দরে।