মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সিপিএম নেতৃত্বকে তুলোধোনা করে একের পর এক পোস্ট! তড়িঘড়ি হচ্ছে ডিলিটও

বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মীনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল পেজে ভাঙড়কে কেন্দ্র করে একটি পোস্ট পাবলিশ হয়। সেখানে দেখা যায়, গরিব মুসলমানরা শাসকদলের হাতে আর কতদিন মার খাবেন?

মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সিপিএম নেতৃত্বকে তুলোধোনা করে একের পর এক পোস্ট! তড়িঘড়ি হচ্ছে ডিলিটও
পোস্ট বিতর্কে মীনাক্ষি
Follow Us:
| Updated on: Jun 18, 2021 | 8:06 AM

কলকাতা: একুশের নির্বাচনে নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে লড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুকে উঠে এসেছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় (Minakshi Mukherjee)। পশ্চিমবঙ্গে বাম মনস্ক মানুষদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। কিন্তু ভোট মিটে যাওয়ার পর থেকে বারবার তাঁরই অফিসিয়াল পেজে পোস্ট হয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিতর্কিত পোস্ট! কখনও বিষয় সাঁইবাড়ি, কখনও বা আইএসএফ জোট। বারবার হচ্ছে বিতর্কিত পোস্ট। কিন্তু মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলছেন, তিনি এই পোস্ট সম্পর্কে বিন্দুবিসর্গ জানেন না। তড়িঘড়ি এই পোস্ট ডিলিটও হয়ে যাচ্ছে। কারা করছে এই পোস্ট? দলের অন্দরেই চলছে জল্পনা।

বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল পেজে ভাঙড়কে কেন্দ্র করে একটি পোস্ট পাবলিশ হয়। সেখানে লেখা হয়, গরিব মুসলমানরা শাসকদলের হাতে আর কতদিন মার খাবেন? সেক্ষেত্রে বলা হয়, আলিমুদ্দিন থেকে এক ঘণ্টার দূরত্ব হলেও ভাঙড়ে দেখতে কোনও নেতাই আসেন না। এও বলা হয়েছে, সংযুক্ত মোর্চাকে মানুষ ভোট না দিয়ে ভালোই করেছেন। মীনাক্ষীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে এই পোস্টে দলকেই নিশানা করা হয়। প্রশ্ন তোলা হয় দলীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও। তৈরি হয় বিতর্ক।

পোস্টটি ভাইরাল হতেই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে TV9 বাংলা। কিন্তু তার ১০ মিনিটের মধ্যেই দেখা যায়, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল পেজ থেকে এই পোস্টটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রথম নয়, কয়েকদিন আগে একইভাবে সাঁইবাড়ি নিয়ে একটি বিতর্কিত পোস্ট করা হয়। সেখানে কংগ্রেসকে নিশানা করা হয়।


এরপর ১৪ তারিখ টুইটারে মীনাক্ষী লেখেন, “আমার অজ্ঞাতসারে আমার অফিসিয়াল পেজ থেকে কিছু বিতর্কিত বিষয় পোস্ট হয়েছে। এই ফেসবুক পেজটি পরিচালনায় অনেকেই যুক্ত রয়েছেন।” এক্ষেত্রেও বুধবারই একই যুক্তি দিয়েছেন মীনাক্ষী।

আমার অজ্ঞাতসারে আমার ফেসবুক এর অফিসিয়াল পেজ থেকে কিছু বিতর্কিত বিষয় পোস্ট হয়েছে। এই ফেসবুক পেজ টি পরিচালনায় অনেকেই যুক্ত আছেন। তাই উক্ত বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।।

— Minakshi Mukherjee (@MinakshiMukher8) June 14, 2021


তবে ঠিক এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে…

এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ফ্যান ক্লাব নামক একটি পেজ থেকে TV9 বাংলাকে জানানো হয়, যাঁরা এই কাজগুলি করছিলেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কারা এই কাজগুলি করছিলেন? সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়নি।

এক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা বলছেন, মীনাক্ষী বলতেই পারতেন, তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে! কিন্তু তিনি তা বলেননি। বরং বলেছেন, তাঁর এই ফেসবুক পেজটি পরিচালনার দায়িত্বে একাধিক জন রয়েছেন। অর্থাৎ তাঁদেরই মধ্যে কারোর দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি। বিশ্লেষকদের ধারণা, একুশের নির্বাচনে ভরাডুবির পর জোট ইস্যুতে এখন সিপিএম নেতৃত্ব আড়াআড়িভাবে বিভক্ত। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ক্ষেত্রে সিপিএম নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, নির্বাচনের একেবারে শেষ লগ্নে এসে সনিয়া গান্ধীর নির্দেশে কংগ্রেস কার্যত সরে দাঁড়ায়। ভোট তৃণমূলের পক্ষেই যায়। ভোটের পর অধীর চৌধুরীর যা বক্তব্য, তাতে বোঝা যাচ্ছে তীব্র তৃণমূল বিরোধী অবস্থান থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে কংগ্রেস। এদিকে, রাজ্যপাল ইস্যুতে বিমান বসুর গলাতেও মমতার পক্ষেই সুর।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে সিপিআইএম লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য যখন তৃণমূলের প্রেক্ষিতে সিপিএমের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তখন নানা কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ‘তৃণমূলের দালাল’ বলে কটাক্ষ করা হয়। নির্বাচনের ফল বেরনোর পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য শমিক লাহিড়ী নাম না করে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে আক্রমণ করেছিলেন। অথচ দেখা যাচ্ছে, সেই দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গেই যৌথ বিবৃতিতে সাক্ষর করছেন সীতারাম ইয়েচুরি। সূত্রের খবর, তৃণমূলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজ্য নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিকে যা বুঝিয়েছিলেন, সে ব্যাখ্যা ভুল ছিল আর এখন তাতে আপত্তি জানাচ্ছেন সীতারাম। আইএসএফের সঙ্গে জোট করা নিয়ে যিনি মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমকে কার্যত নির্বাচনের পর আর দেখা যাচ্ছে না। প্রকাশ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যাচ্ছে প্রবীণ নেতা বিমান বসুকেই।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সিপিএমের সোশ্যাল মিডিয়া টিম দেখার দায়িত্বে রয়েছেন মহম্মদ সেলিম। আইএসএফের সঙ্গে জোটের পক্ষে আগে বারবার সওয়াল করেছিলেন সেলিম। কিন্তু তিনি কার্যত এখন আড়ালে। মীনাক্ষীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ পরিচালনার দায়িত্বে তিন জন রয়েছে। তাঁদেরই কি কারোর দিকে আঙুল তুলছেন মীনাক্ষী? এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে সিপিএম নেতাদের দ্বন্দ্বে কি বোড়ে হয়ে যাচ্ছেন মীনাক্ষী? জল্পনা তুঙ্গে।