Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

অঙ্কের মাস্টার থেকে যুব তৃণমূলের নেতা! চিনে নিন কয়লা পাচারের ‘ফান্ড ম্যান’ বিনয় মিশ্রকে

বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার অঙ্কের মাস্টারমশাইকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন দুঁদে গোয়েন্দা কর্তারা। জারি করা হয়েছে লুকআউট নোটিস।

অঙ্কের মাস্টার থেকে যুব তৃণমূলের নেতা! চিনে নিন কয়লা পাচারের 'ফান্ড ম্যান' বিনয় মিশ্রকে
অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 31, 2020 | 11:13 PM

কলকাতা: এক্কেবারের ছা-পোষা পরিবারের শান্ত, মিশুকে ছেলেটার পরিচিতি কিন্তু নিজের পাড়ার বৃত্তে নেহাতই অঙ্কের মাস্টারমশাই হিসাবে। পরিবারের মূল উত্তরপ্রদেশের রায়বেরেলিতে, কিন্তু কলকাতায় দীর্ঘদিনের বাস। পড়শিরা বলছেন, ছোটেবেলা থেকেই চৌখস ছেলেটা অঙ্কের মাথা ভাল। অঙ্ক নিয়েই পড়াশোনা, তারপর চাকরির খোঁজ। কিন্তু চাকরি জোটেনি! বাধ্য হয়েই টিউশন। প্রথমে পাড়ার ক’জন ছেলেমেয়ে, তারপর পাশের পাড়া- এইভাবে পাড়ার গণ্ডি পেরিয়ে কয়লা পাচারকাণ্ডের ‘ফান্ড ম্যান’ ‘বিনয় স্যার’-এর নাম ছড়াতে শুরু করে কলকাতায়।

দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজ থেকে অঙ্কে স্নাতক হন বিনয়। সেই সময় ছাত্র রাজনীতি করতেন। পাশাপাশি এলাকায় টিউশন পড়াতেন। কোটিপতি ব্যবসায়ীর বাড়ির ছেলেমেয়েদের অঙ্ক করাতে শুরু করেন বিনয়! প্রতিবেশীরা বলছেন, “বিনয়ের স্বভাব শান্তই। রাজনীতি করত, অঙ্ক পড়াত, তবে তাঁর বাড়িতে সিবিআই হানা দেবে, তা তো দুঃস্বপ্নেও ভাবা যায়নি।”

কীভাবে ‘ফান্ডম্যান’ হয়ে উঠলেন বিনয়?

সিবিআই আধিকারিকরা বলছেন, “অঙ্কের টিউশন করার সূত্রেই এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় বিনয়ের। সেই সূত্র ধরেই রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে বেআইনি কয়লার কারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় তাঁর।” সিবিআইয়ের কেস ডায়েরিতে বিনয়ের পরিচয়, রাজ্যের একজন প্রথম সারির নেতা এবং কয়লা পাচার চক্রের কিংপিন অনুপ মাজি ওরফে লালার ‘প্রটেক্টর’ হিসাবে। হাজার হাজার কোটি টাকার বেআইনি কারবারের কাটমানি তাঁর হাত ঘুরেই পৌঁছয় এ রাজ্যের কয়েকজন শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বর কাছে। এইসব বেআইনি কারবার দেখেও না দেখার ভান করে পুলিস এবং প্রশাসন।

অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ

রাজনীতির ময়দানে বিনয়

কলেজে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে বিশেষ জায়গা করে নেয় বিনয়। এরপর, ছাত্রপরিষদ ছেড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ হয়ে ‘যুবা’র সদস্য হয়ে ওঠেন তিনি। যুব হোক বা মাদার, তৃণমূলের প্রথমসারির নেতাদের কথায়, দলের অনেকের সঙ্গেই বিনয়ের খুব ভাল সম্পর্ক।  সিবিআই সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলের একজন হেভিওয়েট নেতা তাঁকে ভাইয়ের মত দেখেন। এমনকি রাজনীতির বৃত্তের বাইরেও ওই নেতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি করা দক্ষিণ কলকাতার এক তৃণমূল নেতা বিনয় সম্পর্কে বলেন, “সে তখন ছাত্রপরিষদ করত। খুব চৌকস ছেলে। পড়াশোনায় ভাল। তবে সংগঠক বলতে যা বোঝায় তা নয়।”

ছোটো থেকে বড়-দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যে দেখা যেতে শুরু করে বিনয়কে। শুধু দলের অনুষ্ঠানই নয়, দলের বিভিন্ন দফতরেও হয়ে ওঠেন চেনামুখ। কালীঘাটই হোক বা তৃণমূল ভবন- দলের নেতারা তাঁকে চেনেন যুব তৃণমূল নেতা হিসাবে। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য, তারপর রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হয়ে ওঠেন তিনি। ২৩ জুলাই ২০২০ তৃণমূল যুব কংগ্রেসের যে কমিটি ঘোষিত হয়, সেখানেও অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম রয়েছে বিনয় মিশ্রর। সেই তালিকায় স্বাক্ষর রয়েছে যুব তৃণমূলের সভাপতি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ

এরই মাঝে কেরিয়ারে ‘বড় ব্রেক’!  কয়লা পাচারের কিংপিন অনুপ মাজি ওরফে লালার সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সিবিআই জানতে পেরেছে, বিনয়ের এক আত্মীয় রাজ্য পুলিসের উচ্চপদস্থ কর্তা। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই খনি এলাকায় কর্মরত। তাঁর মাধ্যমেই লালার সংস্পর্শে আসে বিনয়। এরপর রাজ্যের পালা পরিবর্তনের পর গ্রেফতারি এড়াতে ভিন রাজ্য তো বটেই ভিন দেশেও পালিয়ে যায় কয়লা মাফিয়ারা। তাদের ‘লিঙ্কম্যান’ হিসাবে কাজ শুরু করেন বিনয়।

আরও পড়ুন: অঙ্কের মাস্টার থেকে যুব তৃণমূলের নেতা! চিনে নিন কয়লা পাচারের ‘ফান্ড ম্যান’ বিনয় মিশ্রকে

সিবিআই জানিয়েছে, লালা ঘনিষ্ঠদের জেরা করে তাঁরা জানতে পেরেছেন, কয়লা পাচারের মূল চক্রী বিনয়। লালা এবং কলকাতার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, দুপক্ষেরই বিশ্বস্ত বিনয়। তাই তাঁর মাধ্যমেই বেআইনি কারবারের কোটি কোটি টাকা কাটমানি কলকাতায় পাঠাত লালা। সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের ইঙ্গিত, বিনয়কে পেলেই পাওয়া যাবে সেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে যিনি ‘প্রোটেকশন’ দিয়েছেন লালাকে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার ধর্মদাস রোডে এবং রাসবিহারি অ্যাভিনিউয়ে দুটি বাড়িতে হানা দিয়ে বিনয়ের হদিশ পাননি গোয়েন্দারা। এখন বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার অঙ্কের মাস্টারমশাইকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন দুঁদে গোয়েন্দা কর্তারা। জারি করা হয়েছে লুকআউট নোটিস। সিবিআই-এর ইঙ্গিত, শুধু কয়লা নয়, অবৈধ বালির কারবার হোক বা গবাদি পশুর কারবারের সঙ্গেও যুক্ত মাফিয়াদের সঙ্গে বিনয়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল।