উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের রাশ নিজের হাতে নিলেন মমতা

সমাজের বিভিন্ন বর্গের মানুষকে একত্রিত সঙ্গে মন্ত্রিসভা গঠন একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ। তা করে দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের রাশ নিজের হাতে নিলেন মমতা
সোমবার রাজভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই
Follow Us:
| Updated on: May 10, 2021 | 3:19 PM

কলকাতা: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) তৃতীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় একের পর এক মাস্টার স্ট্রোক। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অত্যন্ত সমতা রেখে তৈরি হয়েছে এবারের বঙ্গ ক্যাবিনেট। রাখা হয়েছে একাধিক চমক। আর প্রথম চমকটাই এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে। গোটা উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব এবার নিজের হাতে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের দলাদলিতে নাজেহাল সংগঠন। ভোটের আগে তা নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটে জিতলে উত্তরে বিশেষ নজরের কথাও বলেছিলেন। সোমবারের পর থেকে বোঝা যাচ্ছে, ‘কড়া’ হাতে সে জেলাগুলি সামলাবেন তিনি। একইসঙ্গে সমান তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের হস্তান্তর। এতদিন এই দফতর নিজেই সামলেছেন মমতা। এবার তা তিনি তুলে দিলেন উত্তরবঙ্গ থেকে জিতে আসা মন্ত্রী গুলাম রব্বানিকে।

আরও পড়ুন: দেখে নিন রাজ্যের মন্ত্রীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা

একইসঙ্গে মমতার এবারের মন্ত্রিসভাতেও থেকে গেলেন অমিত মিত্র। ভোটে না দাঁড়ালেও রাজ্যের অর্থনীতির ভারটা মমতা অন্য কারও হাতে দিতে চাননি। সে ক্ষেত্রে আগামী ৬ মাসের মধ্যে যে কোনও কেন্দ্র থেকে অমিত মিত্র জিতে এলেই হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কর্মযজ্ঞ চালাতে যে টাকার জোগান অর্থ দফতরকে দিতে হয়, কর সংগ্রহ করে এবং তা সঞ্চয় করে সুষ্ঠুভাবে রাজ্যের আর্থিক দিক পরিচালনা, তাতে দক্ষতার ছাপ রেখেছেন অমিত মিত্র। তাই তাঁর হাতেই অর্থ দফতর নিশ্চিন্তে রেখে দিলেন মমতা।

এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ শিল্প দফতরের ভূমিকাও। যে দফতর এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে শিল্প নিয়ে বিরোধীদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে কর্মসংস্থানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রাজ্যের শিল্পায়ন। সে দিকটা এবার দেখবেন পার্থ। অত্যন্ত প্রত্যাশাপূর্ণ এই দফতর। এ রাজ্যে শিল্প আরও গতি পাবে, রাজ্যের মানুষের সে প্রত্যাশা পূরণের ভার এবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতেই।

এতদিন শিক্ষা দফতর সামলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এবার সেই দফতর পেলেন ব্রাত্য বসু। ২০১১ সালে শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন ব্রাত্য। তবে সে মেয়াদ খুবই কম ছিল। কিছুদিন পর তা হস্তান্তর করা হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। অর্থাৎ তৃণমূল সরকারের তৃতীয় ইনিংস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ব্রাত্যরও এই নয়া ইনিংস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অতিমারির আবহে পঠন-পাঠন পদ্ধতি, পরীক্ষা ব্যবস্থা সবকিছুই অত্যন্ত সুচারু ভাবে করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জই নিলেন ব্রাত্য।

এতদিন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে ছিল খাদ্য দফতর। যে দফতর নিয়ে আমফান ও কোভিডের সময় ভুরি ভুরি অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের নতুন মন্ত্রিসভায় দেখা গেল সে দফতর জ্যোতিপ্রিয়র হাত থেকে মধ্যমগ্রামের রথীন ঘোষের হাতে দেওয়া হয়েছে। তিনিও উত্তর ২৪ পরগনারই তৃণমূল বিধায়ক। জ্যোতিপ্রিয়কে দেওয়া হল বন ও অচিরাচরিত শক্তি দফতর। একইসঙ্গে ফিরহাদ হাকিমকে পরিবহণ ও আবাসন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হল। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন: চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকারের নাম ঘোষণা করলেন মমতা

রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর মতে, সমাজের বিভিন্ন বর্গের মানুষকে একত্রিত করে মন্ত্রিসভা গঠন একটা বড়সড় চ্যালেঞ্জ। তা করে দেখালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্ত্রিসভায় ৭জন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি, ৪ জন আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি, ৯ জন মহিলা। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকা থেকে ৮ জন মন্ত্রী রয়েছেন এবার। সমান গুরুত্ব পেয়েছে জেলাগুলিও। উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক বিধায়ক রয়েছেন। যে অবিভক্ত মেদিনীপুর এত বছর অধিকারীদের হাতে দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন মমতা, এবার সেদিকেও বিশেষ নজর তাঁর। শিউলি সাহা, অখিল গিরি, শ্রীকান্ত মাহাত, সৌমেন মহাপাত্র মানস ভুঁইয়্যা, হুমায়ুন কবীর রয়েছেন মমতার মন্ত্রিসভায়।