Na Bollei Noy: রাজ্য রাজনীতির বিভিন্ন গতিবিধি নিয়ে যে কথা ‘না বললেই নয়’
যে সময় জনতার মুখে নেতাদের কথা শোনা যায়। টিভি নাইন বাংলায় না বললেই নয় শুরু হয় ওই সময়েই।

কলকাতা: সহজপাঠ। দিলীপ ঘোষ একবার বলেছিলেন, সহজপাঠ লিখেছেন বিদ্যাসাগর। সে তো দিলীপ ঘোষ গরুর দুধে সোনাও পেয়েছিলেন। দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর সমমনস্করা মনে করেন, গরুর কুঁজে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে। তার ওপর সূর্যালোক পড়ে ঝলমলিয়ে উঠলেই, ব্যাস। তৈরি হয়ে যায় সোনা। যা বেরিয়ে আসতে থাকে দুধের সঙ্গে। এবং, একমাত্র এই কারণেই, গোদুগ্ধের রং সোনালি হলুদ। একে সালোকসংশ্লেষ বলা উচিত কি না, সে বিতর্ক ছেড়ে দিন। দিলীপ ঘোষকে নিয়ে হাসাহাসি করাও ঠিক নয় (ভদ্রলোক অনেক তেঁতো সত্যি অকপটে বলতে পারেন, একটু পরেই সে কথায় আসব)।
আমরা বরং মনোযোগী হই, সোনা পেতে কোথায় বিনিয়োগ করা উচিত, সে বিষয়ে। দেখুন, কষ্ট করলে কেষ্ট (বীরভূমির কেষ্ট নয়) মেলে। সেকথা আরও একজন প্রমাণ করে দিয়েছেন। তাঁর নাম প্রসন্নকুমার রায়। একেবারে, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা থেকে উঠে আসা নাম। সেই প্রসন্ন দুধ বিক্রি করতেন। এই প্রসন্ন রং করতেন। তা বলে জীবনে উচ্চাকাঙ্খা থাকবে না? কোনও পেশাকে অসম্মান অমর্যাদার আহম্মকি করার মানে নেই। প্রত্যেক পেশার সম্মান আছে। কিন্তু মুশকিল হল, টি টোয়েন্টি খেলতে হলেও, ক্রিকেটের একদম সাধারণ কিছু ব্যকরণ মানতে হয়। কিন্তু, নিউটাউনের প্রসন্নকুমার ব্যকরণ মানেননি। সাধারণ রং মিস্ত্রি থেকে কোটিপতি হয়ে উঠেছেন অনায়াসে। জানা নেই, পরশপাথরের সন্ধান তিনি কোথা থেকে পেয়েছিলেন। কিন্তু এটা পরিস্কার, তিনি যে চক্রে জড়িত বলে, গ্রেফতার হয়েছেন, সেই চক্রটিই মিডাসের ছোঁয়া পেয়েছে। যাঁরা এই চক্রে এসেছেন, প্রত্যেকের জীবনে আমূল বদল এসেছে। প্রাক্তন কর্পোরেট, নেতা-মন্ত্রী আরও বড়লোক হয়েছেন বলে অভিযোগ। যাঁরা ওই প্রাক্তনমন্ত্রীর মতো নন, একটু কম গভীর জলের মাছ, তাঁরাও কম কামাননি। অন্তত নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যত এগোচ্ছে তাই তো দেখা যাচ্ছে। কে বলে, আজকাল এ রাজ্যে থেকে জীবনে উন্নতি করা অসম্ভব? তাহলে প্রসন্নকুমার কী করে উন্নতি করলেন? কী করে সাধারণ রং মিস্ত্রি, এদিক ওদিক সেদিকে রিসর্টের মালিক হলেন। একাধিক ফ্ল্যাট, ভিলা, বাগানবাড়ি করলেন? রংমিস্ত্রি প্রসন্ন গাড়ি ভাড়া দিতেন একসময়, সেই গাড়ি আবার না কি রাজ্যের শিক্ষা দফতরের অনেক কেষ্টবিষ্টুও ভাড়া নিতেন।
এবার কেষ্ট-কথায় আসি। কেন্দ্রের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা আছে, কিন্তু কে জানত আদ্যপান্ত তৃণমূলী অনুব্রত মণ্ডলের সেই প্রকল্প এত্ত মনে ধরেছে। মেয়ে সুকন্যার জন্য কী না করেছেন ভদ্রলোক! গরু পাচার তদন্তে সিবিআই জানতে পেরেছে, অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলের আরও সম্পত্তি আছে। বোলপুরের কাশীপুর বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার উপর পর পর তিনটি প্লট রয়েছে। তিনটি প্লটের পরিমাণ প্রায় ১০ বিঘা। প্লটগুলি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। গেটে বড় বড় করে লেখা সিএম। সিএম কি অনুব্রত স্ত্রী ছবি মণ্ডল? তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা। প্লট আরও ছড়িয়ে, এতটাই যে সত্যিই বোলপুরকে এখন টোলপুর বলে ডাকতে ইচ্ছা করছে। TV9 বাংলা খোঁজ দিয়েছিল, বোলপুরে বেআইনি টোলের কেমন রমরমা। টাটকা খবর হল, একই রকম টোল আছে দেউচাতেও। দেউচা! মানে যেখানে প্রস্তাবিত কয়লাখনি। সূত্রের খবর, মালিকানার খোঁজ করলে সেখানেও একটাই নাম শোনা যায়। নামটি হল, অনুব্রত ঘনিষ্ঠ শেখ নাসিরের।
এ ভাবেই একের পর চিচিংফাঁক করছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু মানিক ভট্টচার্যকে খুঁজে পাচ্ছেন না। কটাদিন মানিক লুকোচুরি খেলেছেন। ফোনেও তাঁকে কেউ পাচ্ছিলেন না। তারপর সিবিআই লুকআউট নোটিস জারি করতেই, মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছে। গতকাল হঠাৎ করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে উপযাচক হয়ে ফোনে এবং ভিডিও কলে জানিয়েছেন, তিনি বাড়িতেই আছেন। আজ আবার বারান্দায় মানিক। দেখা দিলেন, বললেন এই তো আমি। কিন্তু তদন্তকারীরা তাঁকে কেন খুঁজে পাচ্ছেন না কে জানে! হতাশ হয়ে পড়েছেন দিলীপ ঘোষ। সোজাসাপ্টা কথা বলার মানুষটা আজ বলেছেন, ইডি কেন মানিকবাবুর খোঁজ পাচ্ছে সেটা একটা রহস্য।
রহস্য সমাধান হল কি না, খোঁজ রাখছি আমরাও। সেসব কথা হওয়ার একটা সময়, রাত ৮.৫৭। যে সময় জনতার মুখে নেতাদের কথা শোনা যায়। টিভি নাইন বাংলায় না বললেই নয় শুরু হয় ওই সময়েই। চলে ব্রেকলেস। কাজেই, না বললেই নয়, না দেখলেই নয়।





