বর্ষশেষের উৎসব নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে কেন রাজ্য, প্রশ্ন চিকিৎসকদের
“নাইট ক্লাব, পাবে কতজনকে ঢুকতে দেওয়া হবে তা বেঁধে দেওয়া হোক। রাতভর যাতে পার্টি না হয় তা দেখতে হবে। ইকো পার্ক, নিক্কো পার্কের পাশাপাশি পিকনিক স্পটগুলিতে যাতে জমায়েত না হয় সে বিষয়েও পদক্ষেপ করা জরুরি”, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
সৌরভ দত্ত: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আটকাতে মুম্বই, বেঙ্গালুরুর পথেই কি হাঁটবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, আশঙ্কা এখন বাস্তব। অন্ধ্র প্রদেশে ব্রিটেন ফেরত এক মহিলার দেহে মিলেছে গত কয়েকদিনে বহুল চর্চিত করোনা ভাইরাসের নতুন প্রকারভেদ ‘ভিইউআই-২০২০/০১’। যার প্রেক্ষিতে বছর শেষের সপ্তাহে নাইট ক্লাব, পাব, পিকনিকে জমায়েত এড়াতে রাজ্য প্রশাসনের অবিলম্বে পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
৩১ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি উপলক্ষে সপ্তাহজুড়ে পার্ক স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া চত্বর, ইকো পার্ক, নিক্কো পার্ক-সহ কলকাতা এবং রাজ্যের পিকনিক স্পটগুলিতে মানুষের ভিড়ের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। বড়দিনের আগেই এইসব জায়গায় যে পরিমাণে ভিড় হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে তা যে বাড়বে তা ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু এরই মধ্য়ে নয়া বিপদও যে গুটি গুটি পায়ে দেশে ঢুকে পড়েছে, তাও তো অস্বীকার করা যাবে না। শহরের এই উৎসব মেজাজে বিপদের হাতছানি লুকিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। যার ভিত গড়ে দিয়েছে অন্ধ্র প্রদেশে এক মহিলার দেহে ব্রিটেনে উদ্ধার হওয়া করোনার নতুন স্ট্রেনের হদিস মেলার খবর।
আরও পড়ুন: আমাকে বিশ্বভারতী কোনও আমন্ত্রণ জানায়নি, নবান্নে মুখ খুললেন মমতা
বেসরকারি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল মাইক্রো বায়োলজির প্রধান দেবকিশোর গুপ্ত জানান, ব্রিটেনে যে নতুন স্ট্রেনের কথা শোনা যাচ্ছে তা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। অন্ধ্র প্রদেশে এক মহিলার দেহে স্ট্রেনের হদিস যখন মিলেছে তখন বাকি রাজ্যগুলিতে সেই স্ট্রেন হানা দিয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি। নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিমান বন্দরে ব্রিটেন থেকে আগত যাত্রীদের চিহ্নিত করে তাঁদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করার কথা বলছেন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা। কিন্তু বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
নভেম্বর-ডিসেম্বরে কতজন যাত্রী ব্রিটেন থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে এসেছেন, তার মধ্যে কতজন কোভিড পজিটিভ বা নেগেটিভ ছিলেন, কতজনকে এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা গিয়েছে, তার একটি তালিকাও কলকাতা বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ দিয়েছে।
টুইট করে বড়দিনে ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু তা যথেষ্ট কি না সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বিশিষ্ট চিকিৎসক কুণাল সরকারের টুইটে। ইংরেজি নতুন বছর ঘিরে উৎসব উদযাপনের প্রসঙ্গ টেনে তাঁর টুইটে লেখা রয়েছে, ‘মুম্বই, বেঙ্গালুরুতে সতর্কতা। কলকাতায় কি সীমাহীন উৎসব হবে! আমরা কি ভুক্তভোগী নই? কলকাতাতেও জমায়েত ঠেকাতে অবিলম্বে নাইট কারফিউ জারি করা প্রয়োজন।’
West Bengal … submitting ourselves for more punishment? Can the Government look beyond elections ?? pic.twitter.com/jW8jpfKdNq
— KunalSARKAR (@KunalCardiac) December 24, 2020
কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় সহযোগিতার সাথে লড়াই করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যবাসীকে কোভিড প্রতিরোধের সর্বপ্রকার নিয়মাবলি বজায় রেখে চলার অনুরোধ করছে।
নতুন বছরে আপনারা সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।#newyear#newhopes pic.twitter.com/9NUMLLzggC
— Department of Health & Family Welfare, West Bengal (@wbdhfw) December 24, 2020
চিকিৎসক দেবকিশোর গুপ্তের কথায়, “এই ছোঁয়াচে স্ট্রেন এ রাজ্যে ঢোকেনি তা হলফ করে বলা যাবে না। আমাদের বুঝতে হবে, পুজো, দীপাবলির মতো বছর শেষেও সংযমী হওয়ার মধ্যে শুধু নিজেদের সুস্থ থাকার বিষয়টি জড়িত নেই। নতুন স্ট্রেনের কারণে সংক্রমণের ঢেউ ঠেকাতে একাধিক দেশকে ফের লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে। আমাদের দেশে আরও একবার লকডাউনে যেতে হলে বহু মানুষের রুজি রোজগার মার খাবে।” জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই বলছেন, “নাইট ক্লাব, পাবে কতজনকে ঢুকতে দেওয়া হবে তা বেঁধে দেওয়া হোক। রাতভর যাতে পার্টি না হয় তা দেখতে হবে। ইকো পার্ক, নিক্কো পার্কের পাশাপাশি পিকনিক স্পটগুলিতে যাতে জমায়েত না হয় সে বিষয়েও পদক্ষেপ করা জরুরি।” কিন্তু কাঙ্খিত পদক্ষেপ কি হবে? বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নিরুত্তর স্বাস্থ্য ভবন।