আমাকে বিশ্বভারতী কোনও আমন্ত্রণ জানায়নি, নবান্নে মুখ খুললেন মমতা
মমতার কথায়, "আজকে একজন দু'জন এসে গিয়েছে হঠাৎ। একটা ধর্মীয় উগ্রবাদ এসে গিয়েছে বলে তারা তো একদিনে বিশ্বভারতীকে শেষ করে দিতে পারে না। ১০০ বছরের ইতিহাস এটা।"
কলকাতা: শতবর্ষের অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতী (Visva Bharati University) কোনও আমন্ত্রণ জানায়নি। নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, তাঁকে না কোনও ফোন করা হয়েছে, না কোনওভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমি ২৮ তারিখ বোলপুর যাব। তখন উপাচার্য বলেছিলেন দেখা করে সময় দিতে, সেইটুকুই কথা হয়েছিল। আজকের কোনও নিমন্ত্রণ, আমন্ত্রণ, ফোন আসেনি আমার কাছে।”
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিশ্বভারতী, দাবি মমতার মন্ত্রীর
বিশ্বভারতীর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে রাজ্য-বিশ্বভারতী তরজা। বিশ্বভারতীর তরফে একটি আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে আমন্ত্রিতের জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা। নিচে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সই। কিন্তু সকালেই রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, কোনও আমন্ত্রণই মমতা পাননি। নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সে বক্তব্যই আরও জোরাল সুরে বললেন মমতা।
সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনেই খানিকটা রাগত স্বরে মমতা জবাব দেন, “ভাই কবে ডাকল, কখন ডাকল। বিজেপি যা বলবে সব আমাকে শুনতে হবে। আমারও তো একটা অফিস আছে। আমার কিছু জানা নেই। উনি (বিশ্বভারতীর উপাচার্য) আমার কাছে কালকে একটা খবর পাঠিয়েছেন, আমি যখন ২৮ তারিখ বোলপুরে যাব তখন যদি আমি একটু সময় দিই একটু দেখা করতে চেয়েছেন। আমি তখন সময় দিতে পারছি না। সরি! তখন আমার তিন চারটে মিটিং ইতিমধ্যেই ঠিক করা।”
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ, বিশ্বভারতী অবিচ্ছিন্ন ভারতের ঐতিহ্য, মোদীর ভাষণে বারবার উঠে এল সে কথাই
এরপরই স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ যে ফাউন্ডেশন ডে বা ১০০ বছর ওনারা আমাকে কোনও আমন্ত্রণ জানায়নি। নো আমন্ত্রণ, নো ফোন, নো নিমন্ত্রণ। নো বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহারো সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও। আমি নিজেই টুইট করেছি। ”
এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীদের অভিনন্দন জানান মমতা। ‘যাঁরা বিশ্বভারতীকে গড়েছেন, রক্ষা করেছেন’। এরপরই নাম না করে মমতার তোপ, “আজকে একজন দু’জন এসে গিয়েছে হঠাৎ। একটা ধর্মীয় উগ্রবাদ এসে গিয়েছে বলে তারা তো একদিনে বিশ্বভারতীকে শেষ করে দিতে পারে না। এর ইতিহাস ১০০ বছরের। প্রণম্য মানুষরা এখানে থেকেছেন। তাঁদের সম্মান জানাই। আজ যাঁরা আছেন সাময়িক, তাঁরা স্থায়ী নন। কিছুদিনের জন্য।” এ বক্তব্যের নিশানা কারা সহজেই তা অনুমেয়।
এদিন অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনে জমি বিতর্ক নিয়েও সরব হন মমতা। বলেন, “অমর্ত্য সেন আমাদের নোবেল এনে দিয়েছেন। সন্মান জানান অমর্ত্য সেনকে। যাঁরা অমর্ত্য সেনকে অসন্মান করছেন তাঁরা চেনেন না, জানেন না ওনাকে। অমর্ত্য সেনকে অসম্মান করার অধিকার নেই তাঁদের। আমাদের দুর্ভাগ্য যে অমর্ত্য সেনের মত মানুষকে এসব অসত্য, অর্ধনগ্ন, অর্ধসত্য কথা শুনতে হচ্ছে। যাঁরা অপমান করছেন তাঁদের অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।” অমর্ত্য সেনের ‘অপমানের’ প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবীদেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর বোলপুরে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রোড শো করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই পদযাত্রা থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ জানাবেন তিনি। সেখানে উঠে আসবে অমর্ত্য সেনের বিষয়টিও, এদিন নবান্ন থেকে জানালেন মমতা।