‘আগে পেটে ভাত, পরে চলচ্চিত্র উৎসব’, বন্ধু রাজের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে বিস্ফোরক রুদ্র
‘এখন চলচ্চিত্র উৎসব করার যৌক্তিকতা কী?’
সৌরভ পাল ও শুভঙ্কর চক্রবর্তী: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে উৎসবে (Kolkata International Film Festival) যাবেন না তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh)। পরিস্থিতি এমনই যে চলচ্চিত্রে উৎসবের চেয়ারম্যান তথা বাল্যবন্ধু রাজ চক্রবর্তীর (Raj Chakraborty) নিমন্ত্রণও ফিরিয়ে দিয়েছেন রুদ্রনীল। ফোনে কেআইএফএফ-এর চেয়ারম্যানকে তিনি বলেছেন, “খারাপ লাগছে রে, কিন্তু যেতে পারব না।”
কিন্তু, কারণ কী? রাজকে রুদ্রর উত্তর, “আমফান, অতিমারীর পর সবে সবে ইন্ডাস্ট্রি খুলতে শুরু করেছে। কাজ কর্ম শুরু হয়েছে। সেগুলোকে ফেলে রেখে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যেতে পারব না। শুধু আমি নই, অনেকেই হয়ত যেতে পারবেন না। আমার কাছে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার থেকে কাজগুলো বেশি গুরুত্বের।” তিনি ‘ব্যস্ত’, সেকারণেই ফেস্টিভ্যালে যাওয়া হবে না, বুধবার রাতেই ফোনে রাজকে জানিয়েছেন রুদ্র।
আরও পড়ুন: কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনে শাহরুখ, টুইটারে জানালেন মমতা
এখানেই থামেননি তিনি। রাজ তাঁর স্রেফ বাল্য বন্ধুই নয়। ‘স্ট্রাগল’-এর সময়ের সঙ্গী। দুটো থালা কেনার পয়সা ছিল না যখন, একই থালায় ভাত খেয়েছেন সে কথা মনে রয়েছে বলে জানিয়েও বন্ধুর আমন্ত্রণ ফিরিয়ে রুদ্রর পাল্টা প্রশ্ন, ‘এখন চলচ্চিত্র উৎসব করার যৌক্তিকতা কী?’ ব্যস্ততা না থাকলেও এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে না যাওয়ার পিছনে রয়েছে তাঁর ‘অস্বস্তি’-ও।
নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে রুদ্রনীল ঘোষ টিভি নাইন বাংলা-কে বলেন, “আমফান, অতিমারীর পর বাংলার অর্থনীতির অবস্থা ভয়ঙ্কর। নিঃসন্দেহে উৎসব থাকবে। তার আগে তো পেটে ভাত থাকতে হবে। তারপর না উৎসব! কত মানুষ রাস্তায় ধর্না দিচ্ছেন। মিছিল করছেন। না খেতে পেয়ে বসে রয়েছেন। এই সঙ্কটে চলচ্চিত্র উৎসবে যতটুকু টাকাই খরচ হোক না কেন, সেটা যদি সরকার তাঁদের হাতে তুলে দিত, ভাল করত।”
আরও পড়ুন: জন্মদিনেই দিলেন বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে দেখা করার কথা! কোন পথে রুদ্রনীল?
কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে না যাওয়া এবং আমন্ত্রণ ফিরিয়ে আসলে কী বার্তা দিতে চাইছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল থেকে দূরত্ব তৈরি করতেই কি এই পদক্ষেপ? রুদ্রর সাফ উত্তর, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ওপর তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই, উল্টে শ্রদ্ধা আছে।” পাশাপাশি রুদ্র এও বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘চাল চোর পার্টি’-র ‘সাথে পাছে’ তিনি আর নেই। চাঁছাছোলা বক্তব্যে রুদ্র জানিয়েছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একাংশই এখন তাঁর কথা শোনে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে থেকে চাল চুরি করে। পোকা ধরা চাল রেশনে পৌঁছে দেয়।” অভিনেতার আক্ষেপ, বহুবার বলেও কোনও কাজ হয়নি। অপরাধীর কোনও শাস্তি হয়নি। আর সেকারণেই নিজেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রুদ্রনীলের জন্মদিনে ফুল সহযোগে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বর্তমানে বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। কথায় কথায় উঠেছে রাজনৈতিক প্রসঙ্গও। আগামীতে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হতে পারে, নিজেই তা জানিয়েছেন রুদ্র। এই পরিস্থিতিতে রুদ্রর ২৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান যাবতীয় জল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করল বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের।