EXPLAINED: ৬ লক্ষ টাকা মেডিক্যাল বিল দিলে বিধানসভা কি দিত? কী নিয়ম? জানুন বিধায়ক কাঞ্চনের বেতন

Salary of MLA: বেতন পান। ভাতা পান। এছাড়াও রয়েছে নানা সুবিধা। বিধায়কদের মেডিক্যাল বিলের টাকাও দেয় বিধানসভা। কিন্তু, কত টাকা পর্যন্ত মেডিক্যাল বিল দেওয়া যায়? কোনও কি ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে? কী বলছে নিয়ম? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন।

EXPLAINED: ৬ লক্ষ টাকা মেডিক্যাল বিল দিলে বিধানসভা কি দিত? কী নিয়ম? জানুন বিধায়ক কাঞ্চনের বেতন
বিধায়করা মাসে কত টাকা পান?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 30, 2024 | 7:36 PM

কলকাতা: মেডিক্যাল বিল ৬ লক্ষ টাকা। উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক এই মেডিক্যাল বিল বিধানসভায় জমা দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। আর এই বিতর্কের মধ্যেই কৌতূহল বেড়েছে বিধায়কদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। মেডিক্যাল বিলের ক্ষেত্রে কী কোনও ঊর্ধ্বসীমা রয়েছে? বিধায়কদের চিকিৎসার খরচ বহনের ক্ষেত্রে কি কোনও নিয়মকানুন রয়েছে? পাঁচ বছরের জন্য একজন বিধায়ক নির্বাচিত হন। সেই বিধায়ক মাসে কত টাকা বেতন পান? বেতন ছাড়াও আর কী কী সুযোগ-সুবিধা পান তিনি?

বিধায়কদের চিকিৎসার খরচ-

উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের স্ত্রী শ্রীময়ী সম্প্রতি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সন্তান প্রসবের মেডিক্যাল বিল ৬ লক্ষ টাকা। কাঞ্চন সেই বিল বিধানসভায় জমা দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। যদিও কাঞ্চন জানিয়েছেন, তিনি মেডিক্যাল বিল জমা দেননি। এমনকি, এক্স হ্যান্ডলে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ লিখেছেন, “৬ লক্ষ টাকার বিল নিয়ে কাঞ্চন বিধানসভায় খোঁজ নিয়েছেন, উনি জমা দিতে পারেন কি না। নিয়ম জেনেছেন। কিন্তু বিল জমা দেননি।”

এই খবরটিও পড়ুন

আর এই নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই বিধায়কদের মেডিক্যাল বিল নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে। কাঞ্চনের মেডিক্য়াল বিল নিয়েই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কুণাল বলেছেন, বিধায়করা বিধানসভা থেকে মেডিক্যাল বিল পান। এটা নিয়ম বহির্ভূত নয়। প্রশ্ন উঠছে, বিধায়করা কত টাকার মেডিক্যাল বিল জমা দিতে পারেন?

বিধায়কদের মেডিক্যাল বিল-

বিধায়করা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পান। চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ বহন করে সরকার। চশমার বিল ছাড়া কোনও মেডিক্যাল বিলের ঊর্ধ্বসীমা নেই। শুধু চশমা তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। চশমার বিলেও অবশ্য আগে ঊর্ধ্বসীমা ছিল না।

চশমার বিল নিয়ে একাধিক বিতর্ক-

চশমার বিল নিয়ে একাধিক বিতর্ক হয়েছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য মানব মুখোপাধ্যায় বিধানসভার কাছে চশমার ৩০ হাজার টাকা বিল জমা দিয়েছিলেন। তা নিয়ে বিতর্ক বাধে। শেষ পর্যন্ত তিনি বরাদ্দ অর্থ নেননি।

আবার একসময় মানিকচকের তৃণমূল বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র লক্ষাধিক টাকার চশমার বিল জমা দিয়েছিলেন। তা নিয়ে হইচই হয়েছিল। তখন সাবিত্রী মিত্র জানান, তিনি নিজে ওই বিল মিটিয়ে দেবেন।

ভুয়ো মেডিক্যাল বিল জমা দেওয়ায় বিধায়কপদ হারিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা-

বিধায়কদের মেডিক্যাল বিলের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। ২৮ বছর আগে এক কংগ্রেস বিধায়কের ভুয়ো মেডিক্যাল বিল জমা দেওয়া নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে পশ্চিম বর্ধমানের হিরাপুর বিধানসভা কেন্দ্র (বর্তমানে অবলুপ্ত) থেকে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন শ্যামাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধায়ক হওয়ার পর থেকে একাধিক মেডিক্যাল বিল দেন বিধানসভায়। তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম তদন্তের নির্দেশ দেন। তখনই জানা যায়, ভুয়ো বিল জমা দিয়েছেন কংগ্রেস এই বিধায়ক। জানা গিয়েছে, বিষয়টি সামনে আসার পর তৎকালীন স্পিকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল, শ্যামাদাসের বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। স্পিকার চাইলে তাঁর ক্ষমতাবল ব্যবহার করে বিধায়কপদ খারিজ করতে পারেন। তারপরই শ্যামাদাসকে বিধানসভা থেকে বহিষ্কার করেন তৎকালীন স্পিকার আব্দুল হালিম।

রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, বিধায়করা যত খুশি টাকার মেডিক্যাল বিল জমা দিতে পারে বিধানসভায়। তবে মেডিক্যাল বিল নিয়ে কোনও সংশয় দেখা দিলে স্পিকার সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠাতে পারেন। সংবিধান ও আইন সেই ক্ষমতা দিয়েছে স্পিকারকে।

অসুস্থতার ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচের নজিরও রয়েছে। একসময় নোয়াপাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক মধুসূদন দত্তের ক্যানসারের চিকিৎসায় ২০ লক্ষ টাকার বেশি বিল মিটিয়েছিল রাজ্য সরকার। ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে নোয়াপাড়া থেকে জিতেছিলেন। ২০১৭ সালের অগস্টে তাঁর মৃত্যু হয়। ক্যানসার আক্রান্ত কংগ্রেস এই বিধায়কের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করে সরকার।

মাসে সবমিলিয়ে কত টাকা পান একজন বিধায়ক?

মেডিক্যাল বিল নিয়ে যেমন সুবিধা রয়েছে। তেমনই একজন বিধায়ক মাসে বেতন ছাড়াও নানা ভাতা পান। ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সুযোগ পান। এছাড়াও রয়েছে নানা সুবিধা। দেখে নেওয়া যাক, বিধায়করা কী কী সুবিধা পান।

বিধায়কদের বেতন ৫০ হাজার টাকা-

  • আগে বিধায়কদের মাসে বেতন ছিল ১০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিধায়কদের বেতন বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বিধায়কদের বেতন বেড়ে হয় ৫০ হাজার টাকা।
  • এর পাশাপাশি ক্ষতিপূরণমূলক ভাতা (কমপেনসেটরি অ্যালাউন্স) হিসেবে মাসে ৩ হাজার টাকা পান বিধায়করা।
  • নিজের বিধানসভা এলাকার জন্য বিধায়করা মাসে ৪ হাজার টাকা ভাতা পান।
  • কম্পিউটার ও ইন্টারনেট পরিষেবার জন্য তাঁরা মাসে ৫ হাজার টাকা পান।
  • বিধায়করা মাসে মহার্ঘ ভাতা (DA) পান ৬০ হাজার টাকা।

সবমিলিয়ে একজন বিধায়ক মাসে ১ লক্ষ ২২ হাজার টাকা পান। এর মধ্যে প্রফেশনাল ট্যাক্স বাবদ মাসে ২০০ টাকা কাটা হয়। ফলে পেশাগত কর বাদ দিলে একজন বিধায়ক মাসে পান ১ লক্ষ ২১ হাজার ৮০০ টাকা।

এছাড়া চিঠি পাঠানোর জন্য প্রতি বছর ৩ হাজার টাকা পান একজন বিধায়ক। বই ও ম্যাগাজিন কেনার জন্য বছরে পান ৩ হাজার টাকা।

রয়েছে আরও সুবিধা-

রাজ্যের মধ্যে ট্রেনে যাতায়াতে কোনও খরচ লাগে না বিধায়কদের। একজন সঙ্গীকে নিয়ে কোনও বিধায়ক এসি ফার্স্ট ক্লাসে যতবার খুশি রাজ্যের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন।

রাজ্যের বাইরে ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কোনও বিধায়ক দু’জন সঙ্গীকে নিয়ে এসি ফার্স্ট ক্লাসে যাতায়াত করতে পারেন। এর জন্য বছরে পাবেন ৫০ হাজার টাকা। কোনও বিধায়ক যদি কোনও বছর ৫০ হাজার টাকা খরচ না করেন, তাঁর ৫ বছরের মেয়াদকাল পর্যন্ত সেই টাকাটা যোগ হবে। অর্থাৎ কোনও বিধায়ক যদি কোনও বছর রাজ্যের বাইরে ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা খরচ করেন, তবে পরের বছর ৮০ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন। রাজ্যের বাইরে ট্রেন ছাড়া বিমানেও যাতায়াত করতে পারেন বিধায়করা। তবে তাঁরা বছরে ৫০ হাজার টাকাই পাবেন।

ট্রেন ছাড়াও রাজ্যে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সরকারি পরিবহণে (বাস, ভেসেল) একজন সঙ্গীকে নিয়ে বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারেন। চালকের বাঁদিকে একটি আসন নির্দিষ্ট থাকে এর জন্য। তবে যেকোনও জায়গায় তিনি বসতে পারেন।

বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ভাতা-

বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ভাতা পান বিধায়করা। অধিবেশন শুরুর তিনদিন আগে থেকে ভাতা পান। তিনদিন আগে থেকে ভাতা পেতে প্রথম দিন অধিবেশনে যোগ দিতে হবে। প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে ভাতা পাওয়া যায়। আবার অধিবেশনের শেষদিন উপস্থিত থাকলে তারপর আরও ২ দিন ভাতা পাওয়া যাবে।

কোনও বিধায়ক যদি দুটি ল্যান্ডলাইন ফোন ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে ইনস্টলেশন চার্জ বিধানসভা কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিধায়করা বছরে ২ হাজার লেটার হেড ও এক হাজার খাম পান।

দৈনিক এক টাকায় কলকাতায় বাস-

বিধায়কদের কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর জন্য রয়েছে এমএলএ হস্টেল। এই হস্টেলে থাকতে প্রতিদিন এক টাকা করে দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে বিধায়কের বিধানসভা কেন্দ্র ৬০ কিমি দূরে হলেই এই সুবিধা পাওয়া যায়।

অধিবেশন চলাকালীন কলকাতার পাঁচটি পয়েন্ট-রথতলা, গড়িয়া, শিয়ালদা, হাওড়া, বেহালা থেকে বিধানসভার বাস ছাড়া হয়। তাতে চেপে বিধানসভায় আসতে পারেন। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকের দিন এমএলএ হস্টেল থেকে তিন দফায় বাস ছাড়া হয়। আবার বৈঠক শেষে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিধানসভায় স্ট্যান্ডিং ও হাউস কমিটি মিলিয়ে ৪১টি কমিটি রয়েছে। স্ট্যান্ডিং ও হাউস কমিটির চেয়ারম্যানরা ১০০ লিটার তেলের টাকা পান।