টানা পাঁচবারের রেকর্ড কলকাতায়, ৪০ না ছুঁয়ে এবারও গ্রীষ্ম-বিদায়
গ্রীষ্ম (Summer) শেষ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষা। ৩ জুন কেরলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বাতাসের আগমনের কথা। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে আসার কথা ১০ জুন, কলকাতায় ১১ জুন।
কমলেশ চৌধুরী: সোমবার কলকাতার (Kolkata Weather) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। ফেব্রুয়ারি নয়, মে মাসের শেষ দিন ছিল সোমবার। কিন্তু তাপমাত্রার রিডিং দেখে বোঝার জো নেই! মেঘ-বৃষ্টির হাত ধরে এমনই পট-পরিবর্তন!
শুধু শেষ দিন নয়, মে জুড়েই পারদের ভয়ানক চোখ রাঙানি থেকে দূরে ছিল কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। তথ্য ঘাঁটলে উঠে আসছে আরও সুখবর, চলতি বছর নিয়ে টানা পাঁচ বছর চল্লিশ না-ছুঁয়েই গ্রীষ্ম শেষ হল কলকাতায়। গত গ্রীষ্মে ১৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ‘আরামে’ কাটিয়েছিল কলকাতা। এ বার ‘আরাম’ অবশ্য গতবারের চেয়ে কম, তবে ২০১৭ থেকে ২০২১ —বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে নিশ্চিত ভাবেই আশা জাগানো প্রবণতা।
অবাক লাগছে? লাগারই কথা। কারণ, পারদের উত্থানে লাগাম পরলেও ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে রেহাই মেলেনি জনতার। তবে এ কথাও ঠিক, এর সঙ্গে চল্লিশের দহন যোগ হলে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে উঠত।
শেষ কবে গ্রীষ্মে চল্লিশ-ছোঁয়া গরমের সাক্ষী হয়েছিল মহানগর? আলিপুরের দস্তাবেজ বলছে, ২০১৬ সালের ১ মে। সে বছর হাওয়া অফিসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসে ওই একদিনই চল্লিশ-ছোঁওয়া তাপমাত্রা থাকলেও, এপ্রিলে টানা তাপপ্রবাহে জর্জরিত হয়েছিল কলকাতা। আট দিন তাপমাত্রা ছিল চল্লিশের উপরে। সর্বোচ্চ ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সে বছরের পর থেকে মার্চ-এপ্রিল-মে, এই তিন মাসে চল্লিশের নীচেই থমকে পারদ। এ বারও তাই। ঘটনাচক্রে গ্রীষ্মের শুরুতেই, মার্চে পারদ উঠেছিল ৩৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এপ্রিলে সর্বোচ্চ ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসে সবচেয়ে কম — ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়, গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নিরিখে মার্চ বা এপ্রিলের চেয়েও ‘ঠান্ডা’ ছিল মে। মার্চে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিলে ৩৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসে সেখানে ৩৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আরও পড়ুন: বলার অধিকার শুধু অধিকারীরই, ‘সেন্সর’ পেরিয়ে আলাপন-পর্ব নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপির শুভেন্দু
পার্থক্যের নেপথ্যে, কালবৈশাখী এবং জোড়া ঘূর্ণিঝড়। এমনিতে ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকেই রাজ্যে কালবৈশাখীর দাপট শুরু হয়ে যায়। এ বার মার্চেও কালবৈশাখীর দেখা মেলেনি। প্রথম দেখা মেলে এপ্রিলের শেষে। আর মে’র শুরু থেকে পর পর কালবৈশাখী। তার পর ঘূর্ণিঝড় তাউটে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেই সঙ্গে কলকাতা তো বটেই, দেশ জুড়ে অতিবৃষ্টি!
দেখা যাচ্ছে, জোড়া ঘূর্ণিঝড়ের সৌজন্যে মে-র দ্বিতীয়ার্ধে তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হয়নি দেশের বিস্তীর্ণ তল্লাট। মে মাসে দিল্লির গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে মাত্র ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৩ বছরে এই ঘটনা এ বারই প্রথম। ফলে উত্তরে ভারতের গরম হাওয়া ‘লু’-র দাপটও সইতে হয়নি বাংলাকে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আপাতত দিন কয়েকের মধ্যে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা নেই দেশে।
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘একটানা এতগুলি বছর গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহ হয়নি, এটা নিঃসন্দেহে ভালো খবর। এ বছরও ফেব্রুয়ারিতে যখন আমরা গ্রীষ্মের আউটলুক দিই, তখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। মার্চ বা এপ্রিলে না হলেও, মে মাসে কলকাতার গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নীচেই রয়েছে। পর পর দুটো ঘূর্ণিঝড় অবশ্যই বড় প্রভাব ফেলেছে। সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। গোটা দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে কী হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
গ্রীষ্ম শেষ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষা। ৩ জুন কেরলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বাতাসের আগমনের কথা। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, দক্ষিণবঙ্গে আসার কথা ১০ জুন, কলকাতায় ১১ জুন। তাহলে কি এ বারের মতো ৪০ ছোঁয়ার আশঙ্কায় দাঁড়ি পড়ল? পুরোপুরি নিশ্চিন্তে থাকতে দিচ্ছে না গত কয়েক বছরের প্রবণতা। মাঝে দু’বছর গ্রীষ্মে না হলেও, বর্ষার মধ্যে তাপপ্রবাহের মুখে পড়তে হয়েছে কলকাতাকে।
যেমন ২০১৮ সালে ১৫ জুন কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছিল। ১৮ জুন তা পৌঁছে যায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গোটা পর্বটাই ঘটেছিল রাজ্যে বর্ষা ঢোকার পর। মৌসুমী বাতাস দুর্বল থাকার সুযোগে! ২০১৯ সালেও ১৪ জুন ৪০-এর চৌকাঠে পৌঁছেছিল কলকাতার পারদ। ফাঁড়া কেটেছিল গত বছর। এ বার এখনও পর্যন্ত দুশ্চিন্তা নেই। বাকিটা মৌসুমী বাতাসের হাতে।