গৃহীত হল না শুভেন্দুর সশরীরে দেওয়া ইস্তফাপত্র, কারণ ব্যাখ্যা করলেন স্পিকার
তিনি যখন এসে উপস্থিত হন তখন বিধানসভায় ছিলেন না স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বিধানসভার সচিব অভিজিৎ সোমের কাছে পদত্যাদ পত্র জমা দেন শুভেন্দু।
কলকাতা: বহু অপেক্ষা শেষে এদিন বিধানসভায় হাজির হলেন পদত্যাগী পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। পদত্যাগ করলেন বিধায়ক পদ থেকে। তিনি যখন এসে উপস্থিত হন তখন বিধানসভায় ছিলেন না স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা থেকে বেরিয়ে জানালেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখার্জি জানান, বিধানসভার অধ্যক্ষের দফতরের রিসিভিং সেকশনে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন শুভেন্দু। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, ই-মেল মারফৎ স্পিকারের কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠানো হয়েছে।
তবে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনে ধরা হলে তিনি জানান, শুভেন্দুর ইস্তফা গৃহীত হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, পদত্যাগ গ্রহণ করার এক্তিয়ার রিসিভিং সেকশন বা বিধানসভার সচিবের নেই। কেননা বিধানসভার রীতি অনুযায়ী, যদি কোনও বিধায়ক নিজের বিধায়ক পদ ছাড়তে চান, তবে নিজের হাতে লেখা পদত্যাগপত্র তাঁকে স্পিকারের হাতে তুলে দিতে হয়। তখন স্পিকার সংশ্লিষ্ট বিধায়কের কাছে জানতে চান, তিনি কোনও চাপের মুখে পদত্যাগ করছেন নাকি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে। এই পদ্ধতিতে পদত্যাগ প্রক্রিয়া চলে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটা করা যায়নি স্পিকারের অনুপস্থিতির কারণে। যদিও শুভেন্দু ই-মেল মারফৎ পদত্যাগ পাঠিয়েছেন। তা গৃহীত হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুভেন্দুকে বিধানসভার অধ্যক্ষের সামনে উপস্থিত হতে হবে।
বিগত কয়েক মাসের জল্পনার অবসান করলেন শুভেন্দু। শেষ পর্যন্ত বুধবার রাজ্য বিধানসভায় এসে বিধায়ক পদও ছেড়ে দিলেন তিনি। ফলে তাঁর তৃণমূল ত্যাগের জল্পনাও আরও তীব্র হল। চলতি সপ্তাহেই তিনি দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে শামিল হতে পারেন বলেও ফিসফাস চলছে রাজনৈতিক মহলে। এদিনের পদত্যাগ যে সেই জল্পনাকেই উস্কে দেবে তা বলাই বাহুল্য। এদিনও তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে নিজের সাদা স্করপিয়োতে করে বেরিয়ে যান সদ্য পদত্যাগী এই তৃণমূল বিধায়ক।
বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী #BreakingNews । #SuvenduAdhikari । @AITCofficial । @BJP4Bengal pic.twitter.com/0ZRlpoKvmu
— TV9 Bangla (@Tv9_Bangla) December 16, 2020
মেদিনীপুরের এই ভূমিপুত্র আগামী দিনে কী পদক্ষেপ নেন তার উপর অনেকটাই নির্ভর করবে রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যৎ। তবে এদিনের পদত্যাগের মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে তিনি যে সবরকম পাট চুকিয়ে ফেললেন তা বলাই যায়। এমন জল্পনাও শোনা যাচ্ছে, তিনি যদি বিজেপিতে নাম লেখান, তবে তাঁর পাশাপাশি আরও অনেক নেতা গেরুয়া শিবিরে চলে যাবেন। এবার শুভেন্দু একাই বিজেপিতে যোগ দেন, নাকি তাঁর পিছন পিছন অন্যান্য নেতারাও শামিল হন, সেটা সময়ই বলবে।
তবে শুভেন্দু পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘শুভেন্দু আগেও বিভিন্ন পদ থেকে পদ্যত্যাগ, মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করেছে, আজ বিধায়ক পদ ত্যাগ করলেন। কিন্তু তৃণমূল এখনও দাবি করছেন তিনি তৃণমূলেই রয়েছেন, কারণ তিনি এখন প্রাথমিক পদ থেকে ইস্তফা দেননি। সুতরাং শুভেন্দুবাবুকে ঘোষণা করতে দিন তিনি কী করবেন। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলেছি, আমরা তাঁকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।’
অন্যদিকে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘৫ মাস পরে নির্বাচন। এসব চমক দেখিয়ে লাভ নেই। আমি তো শুনলাম অধ্যক্ষর কাছে জমা দেননি পদত্যাগপত্র। যা ভাল বুঝেছেন করেছেন।’ বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘দল ভাঙানোর রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে ছিল না। এই রাজনীতির প্রবক্তা তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল যে কাজ করে খ্যাত হয়েছে, বিজেপি তাই করছে। তৃণমূল নেত্রী বড় হয়েছেন বিজেপির ঘরে। বিজেপি তৃণমূলের প্র্যাকটিসটাই চালু করার চেষ্টা করছে।’
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান শুভেন্দুর দলত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, যে আগুন তৃণমূল এতদিন অন্যদের ঘরে লাগিয়েছে, এখন সেই আগুনেই ওদের ঘর পুড়ছে। এবার সেই আগুনে ওরা ছাড়খার হয়ে যাবে।