কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বনধে ব্যতিক্রমী অবস্থান মমতার, হাজিরা বিজ্ঞপ্তি দিল না নবান্নও

বনধের দিন সরকারি দফতরে কর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যতিক্রম হয়নি কখনোই। কিন্তু আজকের ভারতজোড়া কৃষক বনধকে (Bharat Bandh) যেন কিছুটা অন্যভাবে দেখা হচ্ছে।

কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বনধে ব্যতিক্রমী অবস্থান মমতার, হাজিরা বিজ্ঞপ্তি দিল না নবান্নও
"শুধু কানে কানে বলে ও চোর ও চোর, ও খেয়েছে। বিজেপির মত বড় চোর কোথায় আছে? এত বড় ডাকাত সর্দার সব, চম্বলের বড় বড় ডাকাত!"
Follow Us:
| Updated on: Dec 08, 2020 | 2:10 AM

কলকাতা: ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে বনধ-বিরোধী সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর দলের এবং তাঁর প্রশাসনের অবস্থান সর্বদাই ‘কর্মনাশা বনধের’ বিপরীতে থেকেছে। কিছু ক্ষেত্রে বনধের ইস্যুকে সমর্থন করলেও সরকারি দফতরে কর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যতিক্রম হয়নি কখনোই। কিন্তু আজকের ভারতজোড়া কৃষক বনধকে (Bharat Bandh) যেন কিছুটা অন্যভাবে দেখা হচ্ছে।

সোমবার মেদিনীপুরের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কোনও বনধ সমর্থন করিনি। কোনও প্রশাসন বনধকে সমর্থন করতে পারে না। কিন্তু তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে বলছি, কৃষকদের কালকের আন্দোলনকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করছি।’ কৃষকরা তাঁদের ধারাবাহিক আন্দোলনে এই দিনটিতেই বনধ ডেকেছেন। এই সমর্থনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মমতার প্রশাসনও যে আজ বনধ ভেস্তে দিতে বলপ্রয়োগ করবে না, সে বার্তাও পরোক্ষে দিয়েছে নবান্ন।

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধর্মঘটের দিনে সরকারি কর্মচারীদের কাজে যোগদান বাধ্যতামূলক করার জন্য নির্দেশিকা জারি হয়ে এসেছে আগের দিনই। কাজে যোগ না-দিলে বেতন কাটা ও কর্মজীবনে একদিনের ছেদের মতো কড়া শাস্তির বিধানও ছিল (ডায়াস নন)। এমনকী, গত ২৬ নভেম্বর বাম ও কংগ্রেসের সমর্থনে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা দেশজোড়া ধর্মঘটেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই নির্দেশিকা জারি হয়েছিল, যদিও তা কার্যকরে খুব কড়াকড়ি করেনি নবান্ন।

সোমবার কিন্তু দেখা গেল, নবান্ন থেকে এই ধরনের কোনও নির্দেশিকাই জারি করা হয়নি। অথচ মমতা মেদিনীপুরের সভায় বলেছিলেন, কোনও প্রশাসন বনধ সমর্থন করতে পারে না। নবান্ন সূত্রে খবর, এদিন সব ধরনের পরিবহণ স্বাভাবিক রাখতে বলেছে প্রশাসন। পর্যবেক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, বনধের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন না থাকলে নবান্ন বিজ্ঞপ্তি কেন জারি করল না?

তবে সোমবার বেশি রাতে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির সভানেত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের একটি বিবৃতিতে কিঞ্চিৎ বিভ্রান্তি তৈরি হয় ওয়াকিবহাল মহলে। দোলা তাতে লেখেন, ‘আমাদের দেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা। তাতে এক ঘণ্টার জন্যও ধর্মঘট করা উচিত হবে না। তাই আমরা কৃষি নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করব, কিন্তু ধর্মঘট করছি না। যারা আগামীকাল ধর্মঘট ডেকেছেন, তাদের ইস্যুর প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে, কিন্তু আমরা তাঁদেরকেও আবেদন করব ধর্মঘটে সামিল না হতে।’ এখানেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, দলের সর্বোচ্চ নেত্রী যখন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে কৃষকদের ডাকা বনধে (আন্দোলন) তৃণমূলের দলগত সমর্থন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর দলেরই শাখা সংগঠন এমন ‘পরস্পর বিরোধী’ বিবৃতি জারি করতে পারে কীভাবে? এতে কি এদিনের বনধে অবস্থান ও কর্মীদের করণীয় সম্পর্কে কিছুটা বিভ্রান্তিমূলক বার্তা যাবে না? প্রশ্ন উঠেছে শাসকদলেরই একাংশে। গত শনিবার তৃণমূল ভবনে অকালি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কৃষক সংগঠনগুলির ডাকা বনধে আমাদের দলের নৈতিক সমর্থন আছে।

আবার এরই মাঝে সোমবার রানীগঞ্জের জেলাশাসক জানান,  কাল যেহেতু কৃষকদের ডাকা বন্ধ রয়েছে। তাকে সম্মান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছানুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী সভার নির্ঘণ্টও কিছুটা পেছানো হয়েছে। কৃষকদের ডাকা বনধ বেলা ৩টেয় শেষ হবে। তাই দুপুর ১টার পরিবর্তে সভা শুরু হবে বিকেল ৪টের সময়।