বিমল গুরুঙের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার রাজ্য সরকারের

ভোটের (West Bengal Assembly Election 2021) মুখে বিমল গুরুঙের (Bimal Gurung) বিরুদ্ধে থাকা একাধিক মামলা প্রত্যাহার রাজ্যের (West Bengal Govt)। যদিও খুন ও ইউএপিএ মামলা প্রত্য়াহার করা হয়নি।

বিমল গুরুঙের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার রাজ্য সরকারের
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 20, 2021 | 6:49 PM

কলকাতা: বিধানসভা (Assembly Election 2021) ভোটের আগে বিমল গুরুঙের (Bimal Gurung) বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিল রাজ্য সরকার (West Bengal Government)। কার্যত গুরুঙের ইচ্ছানুসারেই এই মামলা রাজ্য সরকার প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সূত্রের খবর, তিন জেলার নিম্ন আদালতগুলিতে থাকা ৭০ টি মামলা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মাসকয়েক আগে প্রকাশ্যে এসে এই মোর্চা নেতা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলি যেন প্রত্যাহার করা নেওয়া হয়। তৃতীয়বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই রাজ্যে মুখমন্ত্রীর কুর্সিতে দেখার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ফলে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভোটের আগে এটা হওয়ারই ছিল।

জেলাশাসকদের মাধ্যমে আদালতগুলিতে চিঠি পাঠিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। যদিও খুন ও ইউএপিএ ধারায় যে মামলাগুলি করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে কোন কোন মামলাগুলি প্রত্যাহার করা হল তা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।

ভোটের অঙ্কেই কি ‘অভিযোগ মুক্ত’ গুরুং?

লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে যে ধস নেমেছিল, তার মেরামত করতে বিমল গুরুংই এখন তৃণমূলের ভরসা। বিমল গা ঢাকা দেওয়া পর বিনয় তামাং শাসকদল ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলেও তাঁকে দিয়ে ভোটব্যাক্স ভরানো যায়নি। ফলে পুনরায় বিমলে নামিয়েই হারানো জমি ফেরানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। এমনটাই দাবি বিরোধীদের। বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের কথায়, “এই রাজ্যে সংবিধান চলে না। এই রাজ্যে মমতা-বিধান চলে। উনি কোনও আইন-কানুনের ধার ধারেন না।”

ঘুরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেছেন, “রাজ্যে আইনের শাসন নেই, সেটা রাজ্য সরকার প্রমাণ করে দিল। যিনি পুলিশ অফিসার খুনে অভিযুক্ত, যে মানুষকে বাংলা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। পুলিশ যাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছিল, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা কখনও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়! যেহেতু বিমল গুরুং ওনাকে মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চেয়েছে, মা বলে ডেকেছে, তাই এখন সাত খুন মাফ।”

আরও পড়ুন: বাংলার মেয়ের হাতেই বাংলা থাকুক, বহিরাগতরা নিপাত যাক: অভিষেক

পাহাড় থেকে ‘ফেরার’ গুরুং

২০১৭ সালে পাহাড়ে বিমল গুরুঙেয় নেতৃত্বে আন্দোলনের জেরে দীর্ঘ দিন যাবত অঘোষিত রণভূমের চেহারায় ছিল দার্জিলিং। সরকারি দফতরে আগুন জ্বালানো হোক বা পুলিশের ওপর হামলা, মাসদুয়েক ধরে পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ। নামাতে হয়েছিল অসংখ্য বাহিনী। পুলিশের সঙ্গে গুরুং বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষের শেষে রাজ্য পুলিশের এসআই অভিতাভ মালিকের মৃত্যু হয়। তার পরই একাধিক ধারায় গুরুঙের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রাজ্য সরকার। মাসখানেক বাদে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয় তাঁকে।

রাজ্যে বিমলের ‘প্রত্যাবর্তন’ ও ঘাসফুল-শরণ

তৃণমূলের একটা বড় অংশের অভিযোগ, নিখোঁজ পর্বে বেশিরভাগ সময়টাই রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শাসকদলের ছত্রছায়ায় কাটিয়েছিল গুরুং। সেই অভিযোগ অবশ্য গুরুং কখনও অস্বীকারও করেননি। তবে রাজনৈতিক মহলকে কার্যত চমকে দিয়ে গত বছর অক্টোবর মাসে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেখতে চান। তারপর থেকেই গুরুঙের প্রতি রাজ্যের মনোভাব নরমই থেকেছে। পাহাড়ে গিয়ে গুরুং নিজেও রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু করেছেন। আসন্ন ভোটেও যে তিনি বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন সেটা কার্যত রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে পরিষ্কার হয়ে গেল।

আরও পড়ুন: ভোটের বাংলায় তৃণমূলের নয়া স্লোগান ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’