Water Problem: গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ বন্ধের নোটিস, জলশূন্য প্রতিষ্ঠানে আপাতত অনলাইন ক্লাসই ভরসা
Government College Of Art And Craft, Calcutta : পেন্টিং বিভাগের ছাত্রী নূরজাহানের কথায়, "তিনদিন ধরে স্কাল্পচারের মাটির ক্লাস চলছে। মাটির ক্লাসের জন্য জল দরকার। মাটি নিয়ে কাজ করা, কাজ করে হাত ধোয়ার জল দরকার। অথচ এমন পরিস্থিতি সেই জলটুকুও আমরা পাচ্ছি না।"
সুমন মহাপাত্র
নেই পানীয় জল। নেই ওয়াশরুমে জল। তিনদিন ধরে জলকষ্টের পর বন্ধ রাখতে হচ্ছে খাস কলকাতার নামজাদা কলেজ। শহরে ৩৯ ডিগ্রি ছুঁয়েছে তাপমাত্রা। ভ্যাপসা গরম। মনে হচ্ছে যেন ৪৭ ডিগ্রির গরমে পুড়ছে মহানগর। আর এই গরমেই জলশূন্য পুরো কলেজ। ওয়াশরুম থেকে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক, সব ফাঁকা। জলশূন্য গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ(Government College of Art and Craft)। কর্তৃপক্ষ বলছে, পিডব্লুডিকে জানিয়েছে। তবে এখনও সুরাহা হয়নি। পরিস্থিতি এমন যে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, ১৯ তারিখ থেকে অনলাইনে ক্লাস হবে। অর্থাৎ কলেজ বন্ধ। বাড়ি থেকেই ক্লাস করবে পড়ুয়ারা।
স্কাল্পচার বা সেরামিকস ডিপার্টমেন্ট জল ছাড়া অকেজো। আর এদিকে জলই নেই। পড়াশোনা লাটে। পাশে পুকুর আছে। তবে সেই অবধি যাওয়ার রাস্তার দৃশ্য দেখলে শরীর গুলিয়ে উঠবে। নোংরা স্তূপ পার করে আনতে হয় জল। খাস কলকাতার বহু ঐতিহ্যের সাক্ষী আর্ট কলেজের এমন দৃশ্যে অবাক কলেজের প্রাক্তনীরাও। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে তারা নিরুপায়। হাতে ফান্ড নেই।
পেন্টিং বিভাগের ছাত্রী নূরজাহানের কথায়, “তিনদিন ধরে স্কাল্পচারের মাটির ক্লাস চলছে। মাটির ক্লাসের জন্য জল দরকার। মাটি নিয়ে কাজ করা, কাজ করে হাত ধোয়ার জল দরকার। অথচ এমন পরিস্থিতি সেই জলটুকুও আমরা পাচ্ছি না। পিছন দিকে একটা পুকুর আছে। যদি সেই পুকুরটার রাস্তা একটু পরিষ্কার রাখত, যেতে পারতাম। ওটা একেবারে নোংরার স্তূপ। আমরা কাজ, হাত ধোয়া যদি ছেড়েও দিই এত গরম পড়েছে, আমাদের কলেজে খাওয়ার জল পর্যন্ত নেই।”
সেরামিক আর্ট অ্যান্ড পটারি নিয়ে পড়ছেন আলি ফালসোনা। তাঁর কথায়, “প্রথমদিকে একটু আধটু জল পাচ্ছিলাম। তিনদিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ। কর্তৃপক্ষ বলছে জলের স্তর নেমে গিয়েছে। তাই এই সমস্যা। আমরা মেট্রো স্টেশন থেকে জল ভরে আনি।”
পড়ুয়াদের যে চরম দুর্ভোগ চলছে তা মানছে কর্তৃপক্ষও। কলেজের অধ্যক্ষ ছত্রপতি দত্তের কথায়, “এক বছর আগে ডিপ টিউবয়েল করে দিয়েছে পিডব্লুডি। গরমে দু’দিন ধরে পাম্পটা চালাতে সমস্যা হচ্ছে। পিডব্লুডিকে জানানোয় ওরা দেখে বলল জলস্তরের সমস্যা। এটা এমন সমস্যা, পিডব্লুডি চাইলেও সমাধান করতে পারবে না। ওরা সবই জানে, রোজই আসছে। যাদের সেমেস্টার রয়েছে, তাদের বাদ দিয়ে বাকি সব পড়ুয়াকেই বলা হয়েছে আগামী ১৯ তারিখ থেকে তাঁরা অনলাইনে কাজ করবে।”
একইসঙ্গে কলেজ চত্বরে বর্জ্যের স্তূপ নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাঁরা হাতে টাকা পান না। অ্যাকাউন্টে আসে সবটা। ছত্রপতিবাবু বলেন, “কলকাতা পুরনিগমের (কেএমসি) নিয়ম হচ্ছে বর্জ্য নিতে লরি এলে আগাম টাকা দিতে হবে। সেই ফান্ড আমাদের কাছে থাকে না। কেএমসির কমিশনারের মাধ্যমে একটা অনুরোধ করা হয়েছে, আগাম কাজটা করে দিতে। বিলিং করলে আমরা নিয়ম মেনে টাকা দিতে পারব।” জলস্তর নেমে গিয়েছে। তাই পিডব্লুডিকে জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না। বিখ্যাত বিখ্যাত শিল্পীদের কলেজের এই হাল দুর্ভাগ্যজনক, মানছেন অধ্যক্ষ নিজেই। তবু তাঁর কথায়, হাত যে বাঁধা। কী করবেন!
কলেজের জলকষ্ট নিয়ে তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “কলকাতা পুরনিগম এটা দেখছে। নিশ্চয়ই অভ্যন্তরীণ কোনও সমস্যা আছে। কলকাতা পুরনিগম ছাড়া বাকি যেকোনও মেট্রোপলিটন শহরে জলের জন্য কর দিতে হয়। কলকাতায় কোনও ট্যাক্স দিতে হয়। সেখানে কোনও একটা কারণে যদি কলেজে জল না গিয়ে থাকে সেটা নিশ্চয়ই কোনও কানেকশন সমস্যা বা অন্য কোনও ইস্যু আছে। পুরনিগম দেখে নিচ্ছে।”