Kuntal Ghosh: ভুয়ো ওয়েবসাইটে নাম তোলা-মোছায় কোটির খেলা? কুন্তলের কাছে জবাবের খোঁজে সংশোধনাগারে ইডি

ED: তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আরও খবর, ২০১৪ সালের যে মার্কশিট পাওয়া গিয়েছে, সেটি জাল। ইডি আধিকারিকদের সন্দেহ, শুধু ২০১৪ সালই নয়, ২০১৭ সালের টেট 'কেলেঙ্কারি'তেও কুন্তলের ভূমিকা রয়েছে।

Kuntal Ghosh: ভুয়ো ওয়েবসাইটে নাম তোলা-মোছায় কোটির খেলা? কুন্তলের কাছে জবাবের খোঁজে সংশোধনাগারে ইডি
কুন্তল ঘোষ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 16, 2023 | 8:30 PM

কলকাতা: নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ মামলায় কুন্তল ঘোষের বক্তব্য প্রথম থেকেই আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। নিয়োগে বেনিয়ম ও কোটি কোটি টাকার লেনদেনে কুন্তলের যোগও স্পষ্ট বলেই ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এবার আদালতের নির্দেশ মতো জেলে গিয়ে কুন্তলকে (Kuntal Ghosh) জেরা করা শুরু করল ইডি। বৃহস্পতিবার আলিপুরে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে গিয়ে কুন্তল ঘোষকে জেরা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দুই আধিকারিক এদিন সংশোধনাগারে যান। ইডি সূত্রে খবর, এর আগে কুন্তল যখন ইডির হেফাজতে ছিল, সেই সময় তাঁর কাছ থেকে একাধিক প্রশ্নের উত্তর ইডি পায়নি। এরপরই গত ৩ ফেব্রুয়ারি কুন্তলকে আদালতে তোলা হলে ইডির আধিকারিকরা এ বিষয়ে বিচারককে জানান। তাঁরা আবেদন করেন, জেলে গিয়ে জেরার যেন অনুমতি দেওয়া হয়। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর এদিন কুন্তলকে জেরা করতে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে যান ইডির আধিকারিকরা। কুন্তলের বিরুদ্ধে ভুয়ো ওয়েবসাইট চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সেই ওয়েবসাইটে নাম তুলে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে কুন্তলের নামে।

গোপাল দলপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কুন্তলের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য পেয়েছিল ইডি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া মানিক ভট্টাচার্যের কাছেও নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পৌঁছত বলেই ইডি তদন্তে জানতে পেরেছে বলে সূত্রের দাবি। গোপাল দলপতির বক্তব্যকে সামনে রেখে কুন্তলকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় বলে সূত্রের খবর। সেটা রেকর্ডও করা হবে। পাশাপাশি নিয়োগ সংক্রান্ত বেনিয়মের টাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের কাছে গেলে তা কীভাবে যেত তাও কুন্তলকে জেরা করেই এদিন ইডি জানতে চাইতে পারে বলেই সূত্রের দাবি।

কুন্তল বেশ কিছু ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন এবং সেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের দেখানো হতো যে তাঁরা পরীক্ষায় পাশ করেছেন। আর ওই ওয়েবসাইট দেখিয়েই টাকা তুলতেন কুন্তল বলে তদন্তকারী সংস্থার কাছে তথ্য উঠে এসেছে। কুন্তল ঘোষের বাড়িতে যেদিন ইডি তল্লাশি করেছিল, সেখান থেকে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের মার্কশিট উদ্ধার হয় বলে সূত্রের খবর।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে আরও খবর, ২০১৪ সালের যে মার্কশিট পাওয়া গিয়েছে, সেটি জাল। ইডি আধিকারিকদের সন্দেহ, শুধু ২০১৪ সালই নয়, ২০১৭ সালের টেট ‘কেলেঙ্কারি’তেও কুন্তলের ভূমিকা রয়েছে। সূত্রের দাবি, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীদের নাম দেখানো হতো। পরবর্তীকালে সেই নাম মুছে ফেলা হতো ওয়েবসাইট থেকে। এই নাম তোলা ও নাম মুছে ফেলার সঙ্গে কোটি কোটি টাকার খেলা চলত বলেই ইডি সূত্রে খবর। এই সমস্ত বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইডি কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে সূত্রের খবর।

ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কুন্তলের একটি ডায়েরি তাদের হাতে এসেছে। যে ডায়েরির পাতায় পাতায় সাঙ্কেতিক অক্ষরমালা। টাকার হিসাবের পাশে নাম ও পদবির আদ্যাক্ষর লেখা বলেও দাবি সূত্রের। শুধু তাই নয়, প্রচুর গানের প্যারোডিও লেখা রয়েছে সেই ডায়েরিতে। ইডি সূত্রে খবর, তদন্তে উঠে এসেছে প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে একের পর চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তুলেছেন শাসকদলের এই যুবনেতা। এমনও তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বিকাশ ভবনের এক আধিকারিকের সঙ্গে কুন্তলের যোগাযোগ ছিল। সেই সম্পর্কের জোরে এই নিয়োগসংক্রান্ত বেনিয়ম করতে সুবিধা হয়েছে। ভুয়ো ইন্টারভিউয়েরও আয়োজন করতেন এই আধিকারিকের সহযোগিতায় বলেও ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে।

এর আগে ইডির তরফে দাবি করা হয়েছিল, তদন্ত প্রক্রিয়াকে ব্যহত করার চেষ্টা করছেন হুগলির এই তৃণমূল যুব নেতা। একইসঙ্গে তদন্তে যথাযথ সহযোগিতা না করার অভিযোগও করেছিল ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি ছিল, ইতিমধ্যে পুলিশ ও তাদের কাছে যে বয়ান কুন্তল ঘোষের রেকর্ড হয়েছে, তাতে পার্থক্য রয়েছে। প্রসঙ্গত, ইডি  ৫০ পিএমএলএ অ্যাক্টে কুন্তলের বয়ান রেকর্ড করে। অন্যদিকে পুলিশ ১৬১ ধারায় বয়ান রেকর্ড করে। ইডির বক্তব্য, নানা কৌশলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কুন্তল। এরপরই কুন্তলকে জেরা করতে চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় ইডি। সেই নির্দেশমতোই এদিন সংশোধনাগারে যায় তারা।