Weather: তাপপ্রবাহে লাগাম! ৬ হাজার কিমি পথ পেরিয়ে বৃষ্টি আনছে ‘বঙ্গ-বন্ধু’

Kolkata: মহিষাসুরের রোষ থেকে দেবতাদের বাঁচিয়েছিলেন দুর্গা। দহনাসুরের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাল কে? কে সেই ‘বঙ্গ-বন্ধু’, যার আশীর্বাদে মাঝ বৈশাখেও তাপে ‘চৈত্রের ছাড়’?

Weather: তাপপ্রবাহে লাগাম! ৬ হাজার কিমি পথ পেরিয়ে বৃষ্টি আনছে ‘বঙ্গ-বন্ধু’
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 30, 2023 | 11:06 PM

কমলেশ চৌধুরী

চোখের পলকে পাল্টে গেল আবহাওয়া। দিনকয়েক আগেও তাপপ্রবাহে পুড়ছিল বাংলা। পাঁচ-পাঁচটা দিন কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আর এখন প্রায় রোজই বৃষ্টি মহানগরে। ভিজছে কম-বেশি সব জেলাই। কেউ যেন জাদুকাঠি ছুঁইয়ে দিয়েছে, চোখে লাগার মতো এই হাওয়া-বদল। ক’দিন আগে ছিল তাপপ্রবাহের লাল-কমলা সতর্কতা। এখন জারি ঝড়-বৃষ্টির কমলা-হলুদ সতর্কতা। এর মধ্যে আবার বৃহস্পতিবার ৩৪.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে আলিপুরে। ভারী নয়, মাঝারি। তবু একদিনে এতটা বৃষ্টি পাক্কা ৭ মাস পর পেল কলকাতা। আবহবিদরা নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আধা-বর্ষার আবহেই দিন কাটবে বাংলার।

মহিষাসুরের রোষ থেকে দেবতাদের বাঁচিয়েছিলেন দুর্গা। দহনাসুরের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাল কে? কে সেই ‘বঙ্গ-বন্ধু’, যার আশীর্বাদে মাঝ বৈশাখেও তাপে ‘চৈত্রের ছাড়’? উত্তরেও চমক। যাকে জনতা দেশে ‘শীতের ভগীরথ’ হিসাবে চেনে, সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই গ্রীষ্মে ত্রাতার ভূমিকায়। আবহবিদরা বলছেন, ঝঞ্ঝার জন্ম হয় ভূমধ্যসাগরে। বাংলা থেকে অন্তত ৬ হাজার কিলোমিটার দূরে। ভূমধ্যসাগর-জাত ঝঞ্ঝা ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তারপর জম্মু-কাশ্মীর হয়ে ভারতে ঢোকে। এরপর হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, নেপাল, সিকিম হয়ে সরে যায় অরুণাচল প্রদেশের দিকে।

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “বেশ কিছু ঝঞ্ঝা উত্তর হিমালয় হয়ে সরে যায়, সেগুলোর প্রভাব আমরা তেমন একটা পাই না। কিছু ঝঞ্ঝা অনেকটা দক্ষিণ অক্ষাংশে সরে আসে। তখন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের সমতলের একটা বড় অংশ বৃষ্টি পায়। যেমনটা হচ্ছে এখন।”

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার আশীর্বাদ পাওয়া অবশ্য সহজ নয়। সবটাই নির্ভর করে প্রকৃতির মতিগতির উপর। যেমন এ বার শীতে ঝঞ্ঝার আনাগোনা কম ছিল। তার জন্য ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে তুষারপাত কম হয়েছে। উষ্ণতম ফেব্রুয়ারি জুটেছে দেশের বরাতে। আবার মার্চে সাত-সাতখানা শক্তিশালী ঝঞ্ঝা হাজির। তার সুফলও পেয়েছে দেশ-রাজ্য। এপ্রিলের মাঝামাঝি সপ্তাহ দু’য়েক গরহাজির ছিল ঝঞ্ঝা। সেই সুযোগেই লাগামছাড়া হয়ে যায় গরম।

একটানা তাপপ্রবাহ চলার পর, ২২ এপ্রিল থমকে যায় গরমের ঘোড়দৌড়। ঝড় ওঠে, বৃষ্টি নামে। কমে যায় তাপমাত্রা। প্রকৃতি যে কত বড় জাদুকর, তার প্রমাণ হিসাবে দুটো উদাহরণই যথেষ্ট। ২৭ এপ্রিল বৃষ্টির হাত ধরে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পারাপতনের সাক্ষী হয়েছিল কলকাতা। দুপুর তিনটে নাগাদ ৩৭ ডিগ্রির ঘরে ছিল পারদ, বিকাল সাড়ে ৫টায় তা নেমে আসে ২৩ ডিগ্রিতে। প্রায় একই ছবি চোখে পড়েছিল ২৪ এপ্রিল। ৩ ঘণ্টায় প্রায় ৯ ডিগ্রি পারাপতন আলিপুরে। সকাল সাড়ে ১১টায় আলিপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি। দুপুর আড়াইটেয় আলিপুরের তাপমাত্রা নামে ২৩.২ ডিগ্রিতে। বৈশাখের দুপুরে যেন নকল শীতের অনুভূতি।

কী ভাবে ‘বঙ্গ-বন্ধু’ হয়ে উঠল ঝঞ্ঝা?

সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘ঝঞ্ঝা মানে একটি পশ্চিমী অক্ষরেখা, যা পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সরে। ঝঞ্ঝা শক্তিশালী হলে অনেক সময় তার প্রভাবে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তও সৃষ্টি হয়। এখন যেমন উত্তর প্রদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এদের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে হু হু করে দখিনা, দখিনা-পুবালি বাতাস ঢুকছে। সাগরের বাতাস মানেই প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পের আমদানি। সেই জলীয় বাষ্প নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত উঠে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হচ্ছে।’’ ২১ এপ্রিল নাগাদ একটি ঝঞ্ঝা দেশে ঢুকেছিল। এই মুহূর্তে আর একটি ঝঞ্ঝা সক্রিয়। সোমবার দুয়ারে নতুন ঝঞ্ঝা। প্রকৃতি সদয় দেখে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব জেলাতেই ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

ঠিক এই শর্তগুলিই গরহাজির ছিল তাপপ্রবাহ-পর্বে। কালবৈশাখীর জন্য ছোটনাগপুর এলাকার মাটি গরম হওয়া জরুরি। তার সঙ্গে জলীয় বাষ্পের জোগানও দরকার। যাকে বলে, পরস্পরের পরিপূরক। সচিন-সৌরভের জুটির মতোই। কিন্তু চৈত্র-বৈশাখের সন্ধিক্ষণে মাটি পুরো মাত্রায় তেতে থাকলেও, জলীয় বাষ্পের আমদানি ছিল না। উল্টে শুকনো হয়ে যায় হাওয়া। শুধু পশ্চিমাঞ্চল নয়, কলকাতা, এমনকী দিঘার মতো উপকূলীয় অঞ্চলেও হানা দেয় তাপপ্রবাহ।

আর শর্তপূরণ হতেই বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী সহযোগে হাওয়া-বদল। সবমিলিয়ে নিম্নমুখী দৌড় পারদের। রবিবারের কলকাতার তাপমাত্রা মাত্র ৩৫.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বীরভূমের শ্রীনিকেতনের তাপমাত্রা আরও খানিকটা কম, ৩৫.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু বাংলা নয়, ঝঞ্ঝার আশীর্বাদধন্য দেশের বিস্তীর্ণ তল্লাটই। অবাক করা তথ্য, এপ্রিলের শেষ দু’দিন দেশের কোথাও তাপমাত্রা চল্লিশের ঘরে ছিল না। মাঝ বৈশাখে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে।

আপাতত যা পূর্বাভাস তাতে মে-র প্রথম দু’সপ্তাহে দেশে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা নেই। তবে জ্যৈষ্ঠে নাকি জ্বলুনিই কপালে। মে-র দ্বিতীয়ার্ধে ফের তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গ। বৈশাখী বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া আর কী-ই বা করার। কথায় বলে না, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়।