কেন ফের ঘাসফুলে ফুটলেন মুকুল? সর্বভারতীয় তৃণমূলে কোন ভূমিকায় থাকবেন?

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি, ফের বিজেপি থেকে তৃণমূল। মুকুল রায় (Mukul Roy) যেন এক বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন। কিন্তু কেন আবার তৃণমূলে ফিরলেন তিনি? ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের দিকে নজর রাখা সর্বভারতীয় তৃণমূলে কোন ভূমিকায় দেখা যেতে পারে একদা তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন কমান্ডকে?

কেন ফের ঘাসফুলে ফুটলেন মুকুল? সর্বভারতীয় তৃণমূলে কোন ভূমিকায় থাকবেন?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুকুল রায়, একান্ত আলাপে।
Follow Us:
| Updated on: Jun 11, 2021 | 11:35 PM

কলকাতা: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি, ফের বিজেপি থেকে তৃণমূল। মুকুল রায় (Mukul Roy) যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন। কিন্তু কেন তৃণমূলে ফিরলেন তিনি? ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের দিকে নজর রাখা সর্বভারতীয় তৃণমূলে কোন ভূমিকায় দেখা যেতে পারে একদা তৃণমূলের এই সেকেন্ড-ইন কমান্ডকে?

২০১৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল রায়। পরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির মতো পদ পান তিনি। রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থান, দুই থেকে ১৮টি আসন লাভের ক্ষেত্রে মুকুল রায় যে অন্যতম কারিগর, তা স্বীকার করে নেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। তারপর একুশের বিধানসভা ভোট। এবার সাংগঠনিক দিক সামলানোর পাশাপাশি দু’দশক বাদে মুকুলকে ভোটের লড়াইয়েও নামায় বিজেপি।

শোনা যায়, তিনি ভোটে লড়তে অনিচ্ছুক ছিলেন। যদিও শেষমেষ জয় পান। কিন্তু নিছক বিধায়ক হয়ে থাকতে নারাজ মুকুল। মুকুল ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, একুশের ভোটের সময় তাঁকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়নি বিজেপি। এখন তৃণমূলে কোন জায়গায় থাকবেন তিনি? কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন মুকুল?

এদিন তৃণমূল ভবনে মুকুল, অভিষেকদের পাশে নিয়ে মমতা জানান, পুরনো পদ সামলাতেই পারেন, সমস্যা হবে না। অর্থাৎ, দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক হিসাবে অভিষেকের সঙ্গে মুকুলকেও দেখা যেতে পারে একই পদে, এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে আগামী লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে তৃণমূলের সর্বভারতীয় স্তরে ছড়িয়ে পড়ার লক্ষ্য। বাংলায় একুশের ভোটে মোদী-শাহের বিজয়রথ থামিয়ে দিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধীদের প্রধান মুখ হিসাবে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মমতার নাম। অন্যদিকে দু’ দুটি ভোট সামলানো মুকুল কাছ থেকে দেখেছেন, এমনকি অংশও নিয়েছেন, একটি সর্বভারতীয় দল কীভাবে আঞ্চলিক স্তরে কাজ করে। কীভাবে সংগঠন গড়ার দিকে নজর দেয়। তাদের স্ট্রাটেজি, সংগঠনের কাজ কেমন করে হয়। মুকুলের এইসব অভিজ্ঞতাই তৃণমূলে কাজে লাগাতে চাইছেন মমতা। অন্তত রাজনৈতিক মহলের একাংশ এমনটাই মনে করছেন।

কিন্তু মুকুল তৃণমূল ছেড়েছিলেন কেন?‌ মুকুলের সেই সময়ের নিজের বয়ান অনুযায়ী, তৃণমূলে পরিবারতন্ত্র স্থান পেয়েছে। সেখানে আর কাজ করার পরিবেশ নেই। এমনকি দলের অন্দরে তাঁকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যদিও তখন অবশ্য সারদা থেকে নারদ একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই, ইডি তাঁর পিছু নিয়েছিল। তাই বাধ্য হয়ে দল ছাড়েন মুকুল রায়, অন্তত তৃণমূল সুপ্রিমোর দাবি এমনটাই।

আরও পড়ুন: ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’, তৃণমূলের ‘সর্বভারতীয়’ তকমাকে খোঁচা তথাগতর 

যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন, সেই মুকুল আবার যখন তৃণমূলে ফিরলেন তখন দলে সেকেন্ড-ইন কমান্ড হয়ে উঠেছেন অভিষেক। যে মুকুল রায় একুশের ভোটে নিজে বলেছিলেন, ‘‌বিধানসভা নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেস দলটাই উঠে যাবে। ওই নামে আর কিছু থাকবে না।’‌ এদিন সেই মুকুলই জানালেন বিজেপি করতে পারছিলেন না।

যে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে থাকাকালীন তৃণমূল ছেড়েছিলেন, আপাতত সেই দায়িত্বে থাকা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই মুকুলকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানালেন দলে। জড়িয়ে ধরলেন মুকুল রায়কে। আর সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক-প্রশ্নে ধুলো ঝাড়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘আমার সঙ্গে কখনও মনোমালিন্য ছিল না।’ এখন অভিষেক-মুকুল জুটি তৃণমূলে ‘ক্লিক’ করে কিনা, পুরনো ঘরে আবার মুকুল ‘কাজ করতে পারেন’ কিনা সেটাই দেখার।