Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পদবীর ইতিহাস: বাংলার নয়! বন্দ্যোপাধ্যায়রা আসলে কোথা থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন জানেন?

Sur Name History: প্রায় সাড়ে আটশ বছর আগের কথা। বঙ্গে তখন সেন বংশের শাসনকাল চলছে। সিংহাসনে আসীন রাজা বল্লাল সেন। মনে করা হয় এই মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় পদবীধারীদের আদি বাস ছিল বর্তমান উত্তরপ্রদেশে।

পদবীর ইতিহাস: বাংলার নয়! বন্দ্যোপাধ্যায়রা আসলে কোথা থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন জানেন?
Follow Us:
| Updated on: Apr 12, 2025 | 3:11 PM

বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র, সুনীল থেকে বাঙালির আইকন প্রসেনজিৎ, সকলের পদবী চট্টোপাধ্যায়। কেউ আবার ছোট করে লেখেন চ্যাটার্জি। চট্টোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, বা মুখোপাধ্যায়। ছোট করে বললে চ্যাটার্জি, ব্যানার্জি বা মুখার্জি, সকলেই জানেন, এই পদবীর ব্যক্তিরা সাধারণত ব্রাহ্মণ হন। আবার আমাদের আশেপাশে বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখোপাধ্যায় পদবীর ব্যক্তিদের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে এই মুহূর্তে বন্দ্যোপাধ্যায় পদবীর ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কিন্তু কোথা থেকে এল এই পদবী? কী ভাবে এঁরাই হয়ে উঠলেন ব্রাহ্মণ? সেই ইতিহাসটা জানা আছে কি?

প্রায় সাড়ে আটশ বছর আগের কথা। বঙ্গে তখন সেন বংশের শাসনকাল চলছে। সিংহাসনে আসীন রাজা বল্লাল সেন। মনে করা হয় এই মুখোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায় পদবীধারীদের আদি বাস ছিল বর্তমান উত্তরপ্রদেশে। সে সময়ে সেখানে প্রতিহার বংশের রাজ। রাজধানী ছিল কনৌজ। সেই সময়ে কন্যাকুব্জ বলে পরিচিত ছিল।

জানা যায়, সেই সময় রাজা বল্লাল সেনের আহ্বানে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে বাংলায় বসতি স্থাপন করেন একদল মানুষ। তাঁদের মূল কাজ ছিল পূজা-অর্চনা করা এবং সর্বোপরি শিক্ষার বিস্তার করা। বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট টোল খুলে লোকশিক্ষার কাজ শুরু করেন তাঁরা।

এঁরাই পরিচিত ছিলেন ওঝা বলে। ওঝা মানে উপাধ্যায়। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা পড়াতেন তাঁদের উপাধ্যায় বলা হত। শিক্ষক হিসাবে সমাজে সর্বস্তরেই তাঁদের সন্মান ছিল। এভাবেই তাঁদের পদবীর সঙ্গে উপাধ্যায় যুক্ত হয়ে জন্ম নেয় চট্টোপাধ্যায়, বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখোপাধ্যায়ের।

যাঁরা শুধু বেদ পড়াতেন তাঁরা ছিলেন মুখ্য-উপাধ্যায় বা ‘মুখোপাধ্যায়’। কেউ কেউ বলেন মুখোপাধ্যায় এসেছে ‘মুখোটী’ থেকে। বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত মুকুটি বা মুখটি অঞ্চলের বসতিদের থেকে বা মুখ্যো গ্রাম থেকে মুখটি বা মুকুটি বা মুখড়া গ্রাম থেকে মুখুজ্যে বিকশিত হয়েছে মুখোপাধ্যায় পদবী। অনেকের মতে গ্রামের মুখ্য বা মুখো+উপাধ্যায়।

কেউ কেউ অবশ্য মনে করেন আরবি শব্দ থেকে এসেছে মুখার্জি। মুজকুর অনুন্নত তালুক। মোগল যুগে জমিদাররা কিছু জোতদারকে অনুন্নত অঞ্চলের উন্নতি জন্য নিয়োগ করতেন। তাদের মুজকুড়ি বলা হত। এভাবে মুজকুড়ি বা মুজকুর থেকে আসে মুখার্জী। যা থেকে পরে এসেছে মুখোপাধ্যায়।

যাঁরা প্রসিদ্ধ শিক্ষক ছিলেন তাঁদের বলা হত ‘বন্দনেয়’ বা বন্দনেয়-উপাধ্যায়। সেখান থেকে ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’। মতান্তরে বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছে ‘বন্দ্যোঘটি’ থেকে। বন্ডউরী, বাঁড়ুরি, রাঁড়বি গাঁইগুঁই থেকে হয়েছে বাঁড়ুজ্যে। শান্ডিল্য গোত্রের বাঁড়ুরি গাঁইদের আর একটি নিবাস বন্দি ঘটি। সেখান থেকে বন্দ। বন্দ্যঘটি গ্রামের কুলীন ব্রাহ্মণরা প্রথম দিকে শুরু করে ছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় পদবীর। মতান্তরে বীরভূম জেলার বন্দিঘাট থেকে এসেছে এই বন্দ্য শব্দ। সেই গ্রামের মাথাকে বলা হত উপাধ্যায়। যা থেকে পরবর্তীতে বন্দ্যোপাধ্যায়।

চট্টো গ্রামের শিক্ষকদের বলা হত চট্টো-উপাধ্যায় বা ‘চট্টোপাধ্যায়’। মতান্তরে চট্টোপাধ্যায় এসেছে ‘চট্টোরাজ’ বা ‘চট্টোখন্ডী’ হয়ে। চাটু বা চাটুতি থেকে চট্ট। কেউ কেউ বলেন চাটু গ্রামের সঙ্গে হিন্দি জী বা জীউ জুড়ে ধীরে ধীরে চাটুর জীয়া, চাটুর্জ্যা, চাটুর্জ্যে, চাটুজ্যে হয়েছে। ১৭৬০ সালের পরে ইংরেজি রুপ পায় চ্যাটার্জী । চাটুতি বা শুধু মাত্র চট্ট শব্দ থেকেই উৎপত্তি হয়েছে বাঙালির হিন্দু সমাজের চট্টোপাধ্যায় বংশ পদবীর। মতান্তরে বর্ধমান জেলায় চাটতি থেকে এসেছে এই চট্ট শব্দ। সেই গ্রামের মাথাকে বলা হত উপাধ্যায়। যা থেকে পরবর্তীতে চট্টোপাধ্যায়।

আগে গ্রাম বাংলায় এই চট্টোপাধ্যায় বা বন্দ্যোপাধ্যায় বলার চল ছিল না। বরং বাড়ূজ্যে, মুখুজ্যে, চাটুজ্যে ডাক বেশি শোনা যেত। আগেই বলেছি উপাধ্যায়কে ওঝাও বলা হত। বড়, মুখুটি এবং চট্ট বা চাটুতির সঙ্গে ওঝা মিলে একইভাবে তৈরি হয়েছিল বাড়ূজ্যে, মুখুজ্যে, চাটুজ্যে পদবীর।