Greek Food Recipe Part II: খানা খানদানি-পর্ব ০৬, আড়াই হাজার বছর আগের তরিকায় কীভাবে মাছ গ্রিল করবেন বাড়িতে?
ব্রিম বলতে অজস্র কিসিমের মাছ বোঝায়। মিঠে জল, নোনা জল দু’ রকমের জলেই হতে পারে। আবার জন উইলকিন্স এবং শন হিলের তরজমায় তা হয়েছে ‘প্যারট ফিশ’। সে-ও হতে পারে ৯০ প্রজাতির।
নীলাঞ্জন হাজরা: পর্ব ৬
এবার তবে রান্নাঘরমুখো হওয়ার পালা। তাই সবার আগে মূল রেসিপিটা দেখে নেওয়া যাক আরেকবার।
‘‘চ্যালসিডোন-এ সমুদ্র উপকূলে বড়সড় প্যারট ফিশ ভাল করে বেক করুন আগে ভাল করে ধুয়ে। বাইজেন্টিয়াম শহরেও পাবেন দিব্যি একখানা, বড় মাপের, দেহ যেন গোল ঢাল একটা। গোটা মাছটাই রেঁধে ফেলুন এই ভাবে: চিজ় আর তেল দিয়ে ঢেকে ফেলে গরম চুল্লিতে ঝুলিয়ে দিন। এবার বেক করুন। মাখাতে থাকুন নুন, জিরে আর হলুদ-ধুসর তেলে গুলে, যাতে ঈশ্বরের নদীর মতো আপনার হাত থেকে ঝরে-ঝরে পড়ে।’’
—আরকেস্ট্রাটুস
আরকেস্ট্রাটুস মহাশয়ের এই রেসিপিটা আমি দু’টি বইয়ে পেয়েছি। প্রথমটার কথা খানাখানদানি ১ আর ২-এ বলেছি। অ্যান্ড্রু ড্যালবি আর স্যালি গ্রেইঙ্গারের লেখা ‘দ্য ক্লাসিকাল কুকবুক’ আর দ্বিতীয়টা ‘ফ্র্যাগমেন্ট্স ফ্রম দ্য লাইফ অফ লাক্সারি’। এটা এই কারণেই উল্লেখ করছি যে, দু’টোর মধ্যে রেসিপিটার তরজমায় সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এক, ড্যালবি আর গ্রেইঙ্গারের মতে আরকেস্ট্রাটুস এ মাছ খেতে বলেছেন কার্থেজ নামের শহরে। প্রাচীন এ শহর বর্তমান তুনিসিয়ায়। আর বাইজেন্টিয়ুম বা আজকের ইস্তানবুলে। দ্বিতীয় কেতাবমতে, বাইজেন্টিয়ুম আর চ্যালসিডন, মানে আজকের তুর্কির শহর কাদিকোই-তে এ মাছ মেলে দুর্ধর্ষ।
দুই, ড্যালবি আর গ্রেইঙ্গার মনে করেছেন আরকেস্ট্রাটুস ‘ব্রিম’ পরিবারের মাছের কথা বলেছেন। ব্রিম বলতে অজস্র কিসিমের মাছ বোঝায়। মিঠে জল, নোনা জল দু’ রকমের জলেই হতে পারে। আবার জন উইলকিন্স এবং শন হিলের তরজমায় তা হয়েছে ‘প্যারট ফিশ’। সে-ও হতে পারে ৯০ প্রজাতির। মোদ্দা আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিক সাহেব ঠিক কোন মাছটি খেয়েছিলেন, তা আজ আর বোঝার উপায় নেই। কাজেই আমি মনে করেছি মাছ নিয়ে খুঁতখুঁতে হওয়ার দরকার নেই। আগুনে ঝলসানোর জন্য দুই সেরা মাছ ভেটকি আর পমফ্রেট। আমি ভেটকিই নিয়েছি। ভাল কথা, পমফ্রেটও কিন্তু এক ধরনের ব্রিম, কাজেই সেটা ব্যবহার করলে রান্নার অনুবাদটা মূলের আরও একচুল কাছাকাছি থাকতে পারে।
আমার মতে আসল কথা হল, রান্নার পদ্ধতিটা। মন দিয়ে দেখলেই দেখা যাবে এ রান্নার মজা তার সারল্যে। আধুনিক রেসিপি করলে সেটা এ রকম দাঁড়াবে—
উপকরণ:
ভেটকি মাছ—১টা (মাঝারি মাপের) অলিভ অয়েল—৫০ মি.লি. চিজ়—১০০ গ্রাম শুকনো ভাজা জিরে গুঁড়ো—১ বড় চামচ নুন—স্বাদ মতো
প্রকরণ:
গোটা মাছ পরিস্কার করে ধুয়ে, পেট থেকে পিত্ত-পটকা এ সব বাদ দিয়ে ভাল করে অলিভ অয়েলে মিশান জিরে গুঁড়ো, নুন মাখিয়ে অন্তত দু’ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর পেটের মধ্যে যতটা সম্ভব চিজ় পুরে দিন এবং গোটা মাছটার গায়ে এমন ভাবে চিজ় মাখান, যাতে গায়ের কোনও অংশ দেখা না যায়। ওটিজি ১৫০ ডিগ্রিতে প্রি-হিট করে ৪০ মিনিট বা যতক্ষণ না মাছের রঙে সোনালি আভা দেখা দেয় ও মাছ নরম হয়, ততক্ষণ ২৫০ ডিগ্রিতে গ্রিল করুন। ঠিক মাঝপথে মাছ ঘুরিয়ে আরও একবার ভাল করে নুন-জিরে গোলা অলিভ অয়েল দিয়ে দু’পিঠই ভাল করে বাস্টিং করুন। পেঁয়াজ, লেবু ও চিজ় দিয়ে পরিবেশন করুন।
এবার কথা হল, মূল রেসিপির সঙ্গে আমার এই রেসিপির দু’টো পার্থক্য রয়েছে। আরকেস্ট্রাটুস বলছেন ‘গরম চুল্লিতে ঝুলিয়ে দিন’। কোনও সন্দেহ নেই তিনি তন্দুর করার কথা বলছেন। তাৎপর্যপূর্ণ, আড়াই হাজার বছর আগেও তবে তুর্কি পাচকেরা তন্দুর ব্যবহার করতেন, যা থেকে হয়তো গ্রিকরাও সেটা শিখে নিয়েছিলেন। কারণ, গ্রিকদের জন্যই তো আরকেস্ট্রাটুস রেসিপিটা লিখছেন। কিন্তু আম বাঙালির বাড়িতে তো আর তন্দুর নেই, কাজেই গ্রিল করা ছাড়া উপায় নেই।
দুই, রেসিপি বলছে চিজ়। কিন্তু কোন চিজ়? আমি ব্যবহার করেছি গ্রিকদের পরম্পরাগত চিজ়—ফেতা চিজ়। আমাদের দেশে দিব্যি পাওয়া যায়। ফেতা চিজ়ের সুবিধে এই যে, সে চিজ় নরম শ্বেত চন্দনের মতো মাছের গায়ে লেপে দেওয়া যেতে পারে। শুধু একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে— খাঁটি ফেতা চিজ় কিন্তু গরুর দুধের হয় না, হয় ভেড়া বা ছাগলের দুধের। গরুর দুধের চিজ়ের সেই গন্ধের মজাটা নেই।
স্বাদের তো আর বর্ণনা হয় না। খেলে বুঝবেন, এ রেসিপি কেন আড়াই হাজার বছর জিভে-টাকরায় জিন্দা রয়েছে! ————— আমার নোট্স
১। ভেটকি অথবা পমফ্রেট মাছ ব্যবহার করতে পারেন ২। মাছের গায়ে হাল্কা করে ছুরি দিয়ে দাগ-দাগ করে নিন ৩। ফেতা চিজ় ব্যবহার করুন— ভেড়া বা ছাগলের দুধের তৈরি ৪। বাড়িতে তন্দুর না থাকলে গ্রিল করুন ৫। চিজ় ও অলিভ অয়েল দিন পর্যাপ্ত, কার্পণ্য করবেন না
খানা-খানদানি প্রকাশিত হবে প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে শনিবার-রবিবার
গ্রাফিক্স ও অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস