Tamil Nadu: ভারতে এমন উদ্যোগ এই প্রথম, খুদে স্লেন্ডার লরিসরা পেল একটা গোটা অভয়ারণ্য!
Slender Loris: অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার অর্থ হল, স্লেন্ডার লরিসদের বাসস্থান পুনরুদ্ধারের সঙ্গে প্রাণীদের বংশবৃদ্ধিরও চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে চোরাশিকারিদের হাত থেকেও তাদের রক্ষা করার ব্যাপারে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
ভারতে এই প্রথমবারের জন্য, তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) কাডাভুরে তৈরি হচ্ছে স্লেন্ডার লরিসদের (Slender Loris) জন্য অভয়ারণ্য! কাডাভুর অভয়ারণ্য ছড়িয়ে রয়েছে কারুর এবং ডিন্ডিগুল জেলার মধ্যে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন ১৯৭২-এর ২৬ (এ)(১)(বি) ধারায় তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে এই অভয়ারণ্যটি চিহ্নিত করা হয়েছে। বেদসন্দুর, ডিন্ডিগুলের পূর্ব অংশ ও নাথাম তালুক-সহ কারুর জেলার কাডাভুরের বনভূমি মিলিয়ে মোট ১১৮০০ হেক্টর অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠবে কাডাভুর স্লেন্ডার লরিস অভয়ারণ্য (Kaduvur Slender Loris Sanctuary)। ওয়াকিবহাল মহলের মতে তামিলনাড়ু সরকারের তরফে নেওয়া এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
পশুপ্রেমীদের কাছেও বন্যপ্রাণকে রক্ষা করার বিষয়ে কাডাভুর স্লেন্ডার লরিস অভয়ারণ্য সদর্থক বার্তা বহন করবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি, তামিলনাড়ুর পাল্ক বে অংশটিকে ডুগং সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। অগস্ত্যমালাইয়ে (তিরুনেলভেলি) হস্তী অভয়ারণ্য, ত্রিপ্পুরে নঞ্জারায়ান ট্যাঙ্ক পক্ষী অভয়ারণ্য এবং ভিল্লিপুরমে কাজহুভেলি পক্ষী অভয়ারণ্য করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকী ১৩টি জলাভূমিকে রামসর সাইট হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে তামিলনাড়ু সরকারের তরফে।
কাডাভুর স্লেন্ডার লরিস অভয়ারণ্য এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ প্রকৃতিকে রক্ষা করার অর্থ হল মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। একথা মাথায় রেখেই স্লেন্ডার লরিস ও তাদের বাসস্থান রক্ষা করার জন্য অভয়ারণ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করার অর্থ হল, স্লেন্ডার লরিসদের বাসস্থান পুনরুদ্ধারের সঙ্গে প্রাণীদের বংশবৃদ্ধিরও চেষ্টা করা হবে। একইসঙ্গে চোরাশিকারিদের হাত থেকেও তাদের রক্ষা করার ব্যাপারে নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন)-এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই স্লেন্ডার লরিসদের বিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ এই প্রাণীরা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। নিশাচর এবং আকারে ছোট হলেও এই প্রজাতির প্রাণীরা কৃষিজমির কীটপতঙ্গ শিকার করে। আর সাধারণভাবে সর্বভুক হলেও, এই প্রাণীদের প্রাথমিক খাদ্য হল কৃষিভূমির পক্ষে হানিকারক বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়। ফলে এই প্রাণীরা টিকে থাকলে আখেরে লাভ কৃষকদের। কারণ এরা পোকামাকড়দের বংশবৃদ্ধি রোধ করে ও ফসলকে রক্ষা করে। একথা মাথায় রেখেই, দ্রুত এই প্রজাতির প্রাণীদের রক্ষা করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে। একইসঙ্গে এই প্রাণীদের প্রাকৃতিক বাসস্থানকেও রক্ষা করার ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যাতে তারা নিরাপদভাবে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। কারণ চোরাশিকারিদের দাপটে এমনিতেই এই প্রজাতিটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
স্লেন্ডার লরিস নিয়ে কিছু তথ্য: স্লেন্ডার লরিসের দেখা মেলে মূলত ভারত এবং শ্রীলঙ্কায়। ভারতের স্লেন্ডার লরিসদের গায়ের রং হয় ধূসর। শ্রীলঙ্কায় পাওয়া লাল স্লেন্ডার লরিস। এই প্রাণীটি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটায় গাছের ডালে। এরা মন্থরগতিতে চলাফেরা করে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেনফরেস্ট, স্ক্রাব ফরেস্ট, আধা-পর্ণমোচী বন এবং জলাভূমিতে দেখা মেলে প্রাণীটির। স্তন্যপায়ী প্রাণীটির আয়ু হয় প্রায় ১৫ বছর। এরা নিশাচর। সাধারণত পোকামাকড়, সরীসৃপ, উদ্ভিদের অঙ্কুর এবং ফল এদের খাদ্য। প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণীটির গড় ওজন ২৪০ গ্রাম। লম্বায় ২২ সেন্টিমিটার অবধি হতে পারে প্রাণীটি।