Pohela Boishakh 1429: হালখাতা, বাংলা পঞ্জিকা আর বাঙালিয়ানা! নয়া বছরের শুরুতেই জানুন বর্ষপঞ্জির অজানা তথ্য ও রাশিফল

Bengali new Year: তবে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ , তাই বারোটি রাশির রাশিফল একেবারেই মানানসই নয়। রাশিফল সব মিলবে না এমনটাই স্বাভাবিক। নিজস্ব কুন্ডলীফল দেখাই ভাল।

Pohela Boishakh 1429: হালখাতা, বাংলা পঞ্জিকা আর বাঙালিয়ানা! নয়া বছরের শুরুতেই জানুন বর্ষপঞ্জির অজানা তথ্য ও রাশিফল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 15, 2022 | 7:18 AM

ডঃ আকাশদীপ কর্ম‌কার, নববর্ষ ১৪২৯ ও বাঙালিয়ানা

যুগের ক্রমবর্ধমান যান্ত্রিকতা-ব্যস্ততা ও করোনার রক্তচক্ষুকে আড়াল রেখে নববর্ষের শুভ সূচনায় উত্‍সব ও আনন্দ মুখর বাঙালির প্রাণবন্ত হওয়াটা ইতিহাসে নতুন কোনও ঘটনা নয়। পাপ-পূণ্য ও ভুল-ত্রুটি সবকিছু শুধরে নতুন করে বাঁচার তাগিদ এই বিশেষ নববর্ষের দিন অনুভব করি কমবেশি আমরা প্রত্যেকেই।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে স্নান করেই গৃহে বা কর্মক্ষেত্রে বেশকিছু আচারবিধ অনুসরণ করতে হয়। ব্যবসায়ীদের কাছে দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওঅ দিনটিকে হালখাতার দিনও বলা হয়। গণেশ-লক্ষ্মীর পুজোপাঠ সহযোগে দিনটির শুভারম্ভ হয়। গণেশ সিদ্ধিদাতা ও মাতা লক্ষ্মী ধনদাতা। তাই ব্য়বসায়ীদের কাছে ওইদিন গণেশ-লক্ষ্মীপুজো ধুমধাম করে হয়ে থাকে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের বর্ষপঞ্জি প্রচলন আছে। সাধারণত আমরা বাংলা ও ইংরেজি মতামতকেই গুরুত্ব দিই। কিন্তু বর্তমানে কর্ম ও বৈদেশিক যোগাযোগ হেতু ইংরেজি বর্ষপঞ্জিকে বেশি গুরুত্ব দিই। আবার ইসলাম হিজরি পঞ্জিকার প্রচলন রয়েছে। এখন এই নববর্ষ পালন করলেও এই বাংলার বর্ষপঞ্জির একটা ইতিহাস আছে, যেটি আমাদের জানা খুবই জরুরি।

বঙ্গাব্দ সূচনার নানান মতামত আছে। বলা হয় যে, প্রাচীন বঙ্গদেশের রাজা শশাঙ্ক আনুমানিক ৫৯০-৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন। ধরা হয়, গ্রেগরিয় বর্ষপঞ্জি শনিবার ২০ মার্চ, ৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দে সূচনা হয়েছিল। আবার ভারতবর্ষে মুঘল আমলে কর আদায় হত ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। যেটি ছিল মূলত চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। আবার চান্দ্র বছর সৌর বছরের তুলনায় ১১/১২ দিন কম হয়। ফসল উত্‍পাদনের সময় অনুযায়ী ইসলামী ক্যালেন্ডার মিল না থাকায় কৃষকরা কর প্রদানে গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই অনেকেই বলেন যে সম্রাট আকবরের সময় এই চান্দ্র ও ভারতীয় সৌর ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে একটি পরিশোধিত ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। যেটিতে ভারতের বৈচিত্র্যময় মরসুমের ইঙ্গিত ভালমত বিদ্য়মান। এও বলা হয় যে প্রাথমিকভাবে এই নতুন ক্যালেন্ডারের নামকরণ ফসলি সন অর্থাত ফসল কাটার সন ও পরে বাংলা সন বলা হয়। বাংলা ক্যালেন্ডারে ১২টি মাস ও ৬টি ঋতু বিদ্যমান। বিভিন্ন যান্ত্রিক ত্রুটি এড়ানোর জন্য প্রথম পাঁচ মাস বৈশাখ থেকে ভাদ্র, প্রতিটি ৩১ দিন নিয়ে গঠিত। বাকি সাত মাস আশ্বিন থেকে চৈত্র ৩০ দিন করে। অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। মোট ৩৬৫দিন।

আরও একটি তথ্য জেনে রাখা দরকার। (আকবর সিংহাসনে আরোহনের হিজরি সন) + (বর্তমান গ্রেগরিয়ান ইংরেজি সন) – (আকবরের সিংহাসনে আরোহনের গ্রেগরিয় সন) = বাংলা সন অর্থাত ৯৬৩+২০২২-১৫৫৬=১৪২৯, এবছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। এ তো গেল বঙ্গাব্দের ইতিহাস। এবার আমাদের জানতে খুব ইচ্ছা করে যে আমরা কেমন থাকব এ বছরে। খুব সত্য়ি কথা বলতে যে আমরা মানি আর নাই মানি, বছরের শুরুতেই পঞ্জিকা হাতেই আমরা কমবেশি সবাই রাশিফল দেখতে ভুলি না। তবে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ , তাই বারোটি রাশির রাশিফল একেবারেই মানানসই নয়। রাশিফল সব মিলবে না এমনটাই স্বাভাবিক। নিজস্ব কুন্ডলীফল দেখাই ভাল। তবে বৃহস্পতি, শনি ও রাহু-কেতুর গোচরের উপর ভিত্তি করে কিছু কথা বলে রাখি, দেখুন যদি কোনও উপকারে লাগে।

– মেষ, বৃষ, কর্কট, মকর রাশি বা লগ্নের ক্ষেত্রে কর্মে পরিবর্তন আসতে পারে। ব্যয় বাড়তে পারে। – মিথুন লগ্নের ক্ষেত্রে কর্মযোগ সূচিতে হবে। বাধা কেটে যাবে। – সিংহ লগ্নের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খারাপ যাবে। গুরুজনের স্বাস্থ্য়হানি হবে। – কন্য়া ও তুলার ক্ষেত্রে বিবাহের যোগাযোগ আসতে চলেছে। – বৃশ্চিক লগ্নের ক্ষেত্রে যে কোনও সম্মান অপেক্ষা করছে। – ধনু লগ্নের পক্ষে গৃহ-বাহনাদি বিষয়ক শুভ হবে। – কুম্ভ ও মীনের ক্ষেত্রে বড় স্বাস্থ্য়হানির যোগ রয়েছে। সাবধানে থাকুন।

আবারও বলছি ব্য়ক্তিগত কুন্ডলীতে থাকলে তবেই য়োগগুলি এ বছর জোরালো হবে। নচেত্‍ নয়।

ভাল-মন্দ মিশিয়েই জীবন। এ বছর যাদের খারাপ তাদের পরবর্তী কোনও বছরে শুভ হবেই। তাই সকলকেই বর্যারম্ভে কিছু টিপস দিচ্ছি।

”ওঁ শ্রী গনেশায় নমঃ” বা ”ওঁ গাং গণেশায় নমঃ”

– এই মন্ত্রটি কম করে ১০৮ বার নববর্ষের দিন স্নান করে শুদ্ধাচার পাঠ করা দরকার। – যদি সম্ভব হয় তবে সারা বছরই পাঠ করতে পারেন। – দেখুন গণপতির কৃপায় আপনার জীবনের কিছু না কিছু শুভ হবেই। – হালখাতার দিনে যারা সর্বাধিক তত্‍পর ও ব্যস্ত থাকেন, তারা হলেন ব্যবসায়ী। তাই ব্যবসায়ীদের জন্য় বলব যে উত্তর বা পূর্বমুখী জোকান খোলার চেষ্টা করুন। – দোকানে দেবদেবীর মূর্তি রাখুন উত্তর-পূর্ব কোণে। এই কোণে ভারী জিনিস কম রাখুন। – দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসে উত্তর-পূর্বমুখী গদিতে বসার পরিকল্পনা নিতে পারেন। কাঁটা গাছ সুন্দর হলেও ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানে রাখবেন না। – নতুন বছরে নতুন ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে জীবন কাটান। লুচি-মিষ্টি ও ইলিশ-ভাত সহযোগে উপভোগ করুন দিনটিকে। সবার সুস্থতা ও শুভ কামনা করছি। ভাল থাকুন।

লেখক গণিত ও জ্যোতিষ গবেষক

Disclaimer: এখানে উপলব্ধ তথ্য শুধুমাত্র বিশ্বাস এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে টিভিনাইন বাংলা কোনও বিশ্বাস বা তথ্য নিশ্চিত করে না। কোন তথ্য বা বিশ্বাস অনুশীলন করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।

আরও পড়ুন: Hindu Rituals: গ্রাম বাংলার প্রাচীন ব্রতের কদর এখনও! কেন পালন করা হয় অশোক ষষ্ঠী , জানুন