Handshake Gate: এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান হ্যান্ডশেক বিতর্ক শেষ কিন্তু ‘শেষ নয়’!
India vs Pakistan, Asia Cup 2025: হ্যান্ডশেক বিতর্কে পাকিস্তানও কম অসৌজন্য দেখায়নি। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বয়কট করেন পাক অধিনায়ক সলমন। সেই সঙ্গে এশিয়া কাপ থেকে নাম তুলে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আইসিসি পাকিস্তানের দাবি খারিজ করে দেওয়ার পর প্রশ্ন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্য়াচে কি ওয়াকওভার দেবে পাকিস্তান?

পহেলগাওয়ে সন্ত্রাস চালিয়ে মুখ পুড়েছিল পাকিস্তানের। অপারেশন সিঁদুরের মধ্যে দিয়ে মুহতোড় জবাব দিয়েছিল ভারত। এবার মাঠেও ভারতের কড়া জবাবে মুখ থুবড়ে পড়ল পাকিস্তান। এশিয়া কাপে ভারতের কাছে কচুকাটা হতেই দেখা দিয়েছে এক নতুন বিতর্ক। যা উত্তরোত্তর বাড়ছে। তোপ দেগেছে পাক ক্রিকেট বোর্ড। মুখ খুলেছেন প্রাক্তনরা। থেমে থাকেনি বিসিসিআইও।
দুবাইয়ে মহারণের শুরু হতেই বিতর্কের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছিল। টসের পর পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন সলমন আলি আঘার সঙ্গে সৌজন্য দেখিয়ে হাত মেলাননি ভারতের ক্যাপ্টেন সূর্যকুমার যাদব। ম্যাচের পর তারই পুরনরাবৃত্তি দেখা যায়। পুরো ভারতীয় দল হ্যান্ডশেক করেনি পাকিস্তানের সঙ্গে। আর তাতেই চরম আকার নিয়েছে হ্যান্ডশেক বিতর্ক। ওয়াঘার ওপার থেকে কেউ প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ভারতের অখেলোয়াড়সুলভ মনোভাব নিয়ে। পিসিবি তখন তিন দফা দাবি তুলে তোপ দেগেছে।
এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিতর্কের কেন্দ্রে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্ট। অভিযোগ, টসের আগে তিনিই নাকি সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে করমর্দন করতে বারন করেছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন আঘাকে। তাঁর বিরুদ্ধে আইসিসির আচরণবিধি এবং এমসিসির নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা। এশিয়া কাপের দায়িত্ব থেকে অবিলম্বে তাঁকে অপসারণের দাবি তোলা হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে আইসিসি। আর তাতে আরও কোণঠাসা হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান।
হ্যান্ডশেক বিতর্কে পাকিস্তানও কম অসৌজন্য দেখায়নি। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান বয়কট করেন পাক অধিনায়ক সলমন। সেই সঙ্গে এশিয়া কাপ থেকে নাম তুলে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আইসিসি পাকিস্তানের দাবি খারিজ করে দেওয়ার পর প্রশ্ন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্য়াচে কি ওয়াকওভার দেবে পাকিস্তান? ম্যাচ বয়কট করলে এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে যাবে পাকিস্তান। সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গে সেক্ষেত্রে পৌঁছে যাবে আমিরশাহি।
কেন হ্যান্ডশেক করেননি সূর্য? এটা কি অসৌজন্য নয়? সূর্য বলে দিয়েছেন, “কিছু বিষয় শুধু খেলোয়াড়ি মানসিকতা দিয়ে বিচার করা যায় না। সেটাকেও ছাপিয়ে যায়। আমরা পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছি। ভারতের সাহসী সেনাবাহিনীর পাশেও রয়েছি।” সূর্যের কথা থেকে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, ইচ্ছা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
হ্যান্ডশেক বিতর্কে অবশেষে মুখ খুলেছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্তা। জানিয়ে দিয়েছেন, সূর্যকুমার যাদবেরা যা করেছেন, তা একেবারে ঠিক। ভারতীয় বোর্ড ক্রিকেটারদের পাশে রয়েছে। ওই কর্তার যুক্তি, ক্রিকেটের নিয়মে খেলা শেষে প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক নিয়ে কিছু লেখা নেই। সাধারণত সম্মান জানাতে দু’দলের ক্রিকেটারেরা হাত মেলান। বিশ্ব জুড়ে সেটাই দেখা যায়। কিন্তু এর কোনও নিয়ম নেই। তা হলে পাকিস্তান কোন ভিত্তিতে অভিযোগ করছে।”
ওই কর্তা পহেলগাওয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জানিয়েছেন, দু’দেশের যা সম্পর্ক তাতে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলালে সেটাই অস্বাভাবিক হত। সূর্যেরা ঠিক করেছেন। তিনি বলেছেন, “যদি কোনও নিয়মই না থাকে তা হলে সূর্যেরা একদম ঠিক করেছে। যে দেশের সঙ্গে আমাদের এত খারাপ সম্পর্ক, যে দেশ সব সময় আমাদের খারাপ চেয়েছে, তাদের সঙ্গে হাত কেন মেলাব। কোনও রকম সম্পর্ক রাখব না। সূচি অনুযায়ী ভারত খেলেছে। তার বেশি কোনও সম্মান দেখানো হবে না।”
এই বিতর্কে মুখ খুলেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলে দিয়েছেন, “আপনার উচিত সূর্যকুমার যাদবকে জিজ্ঞাসা করা। ওর কাছেই উত্তর রয়েছে। ও সেই উত্তরও দিয়েছে। প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে। সন্ত্রাস সবার আগে বন্ধ হওয়া উচিত। ওটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভারত বা পাকিস্তান নয়, গোটা বিশ্বেই সন্ত্রাস বন্ধ করা দরকার। খেলাধুলো তো আর বন্ধ করা যায় না।”
শোয়েব আখতার আবার একটি ইউটিউব চ্যানেলে বলেন, “আমি স্তম্ভিত। আমি হতাশ। কী বলব বুঝতে পারছি না। ভারত ভাল খেলেছে। ওদের কুর্নিশ জানাচ্ছি। কিন্তু খেলায় রাজনীতি ঢোকানো ঠিক নয়। এটা ক্রিকেট ম্যাচ। লড়াই হতেই পারে। কিন্তু হাত না মিলিয়ে সেই বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তোলা ঠিক নয়। আমি থাকলে হাত মেলাতাম। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে না গিয়ে সলমন ঠিকই করেছে।”
পাকিস্তানের আর এক প্রাক্তন রশিদ লতিফ বলেছেন, “নিজেদের ভুল ঢাকতে ওরা রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে। যা হয়েছে সেটা ভাল হয়নি। আগেও তো যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আমরা মাঠে হাত মিলিয়েছি। সুনীল গাওস্করের সঙ্গে জাভেদ মিয়াঁদাদের কম লড়াই হয়নি। ওরা কি কোনও দিন হাত না মিলিয়ে মাঠ ছেড়েছে। আমরা নিজেদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করি। সেটা সকলের মাথায় রাখা উচিত।”
ভারতের প্রাক্তন কিপার সৈয়দ কিরমানি কিন্তু সূর্যদের হাত না মেলানো মেনে নিতে পারছেন না। “রাজনীতি গোটা বিশ্ব জুড়ে চলছে। রাজনীতি সব সময় থাকবে। কিন্তু খেলা সম্প্রীতি ও একতা আনে। আমার মতে রাজনীতি ও খেলাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। দুটো আলাদা বিষয়।”
হ্যান্ডশেক বিতর্ক ছাপিয়ে গিয়েছে এশিয়া কাপকেও। সুপার ফোর এবং ফাইনাল ধরলে ভারত-পাকিস্তান আরও দু’বার মুখোমুখি হতে পারে। ওই দুটো ম্যাচে ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বরং আলোচনা চলছে, দুই দেশের ক্রিকেটাররা মাঠে কী করবেন, তা নিয়ে। উত্তাপ ছড়াচ্ছে ক্রমশ। যাই হোক না কেন, এমন আচরণ জেন্টলম্যানস গেম ক্রিকেট কি মেনে নেবে?
