Faisal Ali: সুনীল ছেত্রীর পাশে খেলার স্বপ্নপূরণ পার্ক সার্কাসের ফয়জলের
আই লিগের মঞ্চে সফল হয়েছেন। এ বার আইএসএলের মঞ্চেও নিজেকে প্রমাণ করতে চান ফয়জল। তাঁর লক্ষ্য যে জাতীয় দল।
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
লক্ষ্য স্থির থাকলে স্বপ্নের উড়ানে পাড়ি দেওয়া সম্ভব। পার্ক সার্কাসের জাননগর বস্তি থেকেই সেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল। ভবানীপুর, সাদার্ন সমিতি থেকে মহামেডান স্পোর্টিংয়ে (Mohammedan Sporting) জায়গা করে নিয়েছিলেন। সাদা-কালোর ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাসের প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন। আই লিগে মহমেডানের জার্সিতে আলো ছড়িয়েছিলেন ফয়জল (Faisal Ali)। এ বার সেই ফয়জলের ঠিকানা সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি (Bengaluru FC)। আই লিগ থেকে আইএসএলের ক্লাবে উঠে এলেন তরুণ উইঙ্গার। ২২ বছরের ফয়জলের ছোট থেকেঈ ফুটবলের নেশা। অভাবের সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র রোজগেরে। গাড়ি চালিয়ে সংসার টানতেন। ৬ বছর আগে শরীর খারাপের জন্য কাজ ছাড়তে বাধ্য হন ফয়জলের বাবা। দাদা জুতোর এক কারখানায় কাজ করে সংসার টানত। কিন্তু কোভিডের সময় দাদার চাকরি চলে যায়। অভাবের সংসারকে বাঁচিয়ে রাখে ফয়জলের ফুটবল। ফয়জলের আরও দুই ভাই রয়েছে। তবু সংসারের মধ্যমণি যে তিনিই।
বেঙ্গালুরু এফসিতে তিন বছরের চুক্তিতে সই করলেন ফয়জল আলি। সুনীল ছেত্রীর পাশে খেলবেন টিভি নাইন বাংলাকে সাক্ষাৎকারে ফয়জল বললেন, ‘যার খেলা দেখে বড় হয়েছি তার পাশে খেলব। এটাই আমার একটা স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ হবে। সুনীল ভাইয়ের পাশে খেলতে পারব ভেবে খুব ভালো লাগছে। ওর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব। এই সুযোগ সব সময় আসে না।’ ছোট থেকে কষ্টই ছিল ফয়জলের নিত্যসঙ্গী। নিজেও একটা সময় মেডিক্যাল স্টোরে কাজ করতেন। জাননগরের বস্তির ঘুপচি ঘরে ঠাসাঠাসি করে বেড়ে ওঠা। এ বার বোধহয় সেই কষ্টটা ঘুচে যাবে। আবেগতাড়িত ফয়জল বললেন, ‘এ বার একটা ভালো ফ্ল্যাট কিনব। মা-বাবাকে ভালো মতো রাখতে পারব। অনেক কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছে। যে ফুটবলের জন্য এত বছর কষ্ট করেছি, কিছুটা হলেও তার প্রতিদান পেলাম।’
আই লিগের মঞ্চে সফল হয়েছেন। এ বার আইএসএলের মঞ্চেও নিজেকে প্রমাণ করতে চান ফয়জল। তাঁর লক্ষ্য যে জাতীয় দল। আইএসএলে ভালো খেললেই জাতীয় দলের দরজা খুলবে। বেঙ্গালুরুতে সুযোগ পেয়েও ফয়জলের মুখে মহামেডান স্পোর্টিং আর দীপু স্যারের (দীপেন্দু বিশ্বাস) কথা। তরুণ উইঙ্গার বলেন, ‘মহমেডান স্পোর্টিংয়ের জন্যই আজকে এই জায়গায় পৌঁছেছি। আর দীপু স্যারই আমাকে মাঠে নামার সুযোগটা করে দিয়েছিলেন।’
তাদের কৃতিত্ব কোনওদিন ভুলব না। মহামেডানের ফুটবল সচিব দীপেন্দু বিশ্বাস টিভি নাইন বাংলাকে বলেন, ‘বেঙ্গালুরু এফসির মতো আইএসএল দলে সুযোগ পাওয়ায় আমরা আর ওকে আটকাইনি। ওর ফুটবল ভবিষ্যৎ আরোও উন্নতির পথে এগোবে। ওখানে ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর পাশে খেলবে। ভালো খেলতে পারলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবে।’ একই সঙ্গে দীপেন্দু বলেন, ‘ফয়জলের গতি রয়েছে। সঙ্গে ভালো স্কিল আছে। বেঙ্গালুরুতে থাকলে শারীরিক ভাবেও আরেকটু শক্তিশালী হবে। শারীরিক সক্ষমতা বাড়লে ওকে আটকানোর ক্ষমতা কারও নেই। ভারতের অন্যতম সেরা উইঙ্গার হওয়ার ক্ষমতা রাখে ফয়জল।’ খেলা না থাকলেও মাঠের থেকে দূরে নেই ফয়জল। নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি ফিটনেস ট্রেনিংও করেন। নিজেকে ক্রমশ ধারাল করে তুলছেন। দেশের শীর্ষ লিগে নিজেকে প্রমাণ করাই এখন পাখির চোখ ফয়জলের।