ISL 2022-23, FINAL: বিশাল কাইথের ‘হাত’ ধরে ভারতসেরা মোহনবাগান!

ATK Mohun Bagan vs Bengaluru FC : সুযোগ তৈরি, নষ্ট--- এ সব তো থাকবেই। খেলার অঙ্গ। টাইব্রেকারে যদি বিশাল কাইথের মতো কেউ ম্যাজিক দেখান, তা হলে এ সব ঢাকা পড়ে যায়। সেমিফাইনালে হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে কাইথই জিতিয়েছিলেন টাইব্রেকারে। আইএসএল ফাইনালেও তাই হল।

ISL 2022-23, FINAL: বিশাল কাইথের 'হাত' ধরে ভারতসেরা মোহনবাগান!
Image Credit source: twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 18, 2023 | 11:34 PM

দীপঙ্কর ঘোষাল

চাপ বনাম পাল্টা চাপ। পেনাল্টি বনাম পাল্টা পেনাল্টি। অফুরান দৌড় আর স্কিলের ফুলঝুরি দেখাতে দেখাতে যে কোনও সময় ডাগআউট বদলায় খেলা! কখন যে কোথায় বসত করে, কে জানে! মারগাও দেখল উত্তেজক আর সর্বাঙ্গ সুন্দর আইএসএল ফাইনাল। এমন ম্যাচ আসলে স্নায়ুর। টাইব্রেকারে হলে তো কথাই নেই। এই মরসুমে আইএসএলের সেরা কিপার বিশাল কাইথ। ১২০ মিনিটের ম্যাচে বুঝিয়েছিলেন, তিনি কেন সেরা? কেন আলোচনা চলছে তাঁকে নিয়ে? প্রথম দুটো কিকে দর্শক ছিলেন। কিন্তু ব্রুনো ব়্যামিরেজের কিকটা বাঁচাতেই সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে আবির খেলা শুরু হয়ে গেল। পাবলো পেরেজ বাইরে মারতেই ভারতসেরা এটিকে মোহনবাগান। নির্ধারিত সময়ে স্কোরলাইন ২-২। টাইব্রেকারে ৪-৩ জিতল হুয়ান ফেরান্দোর টিম।

সকাল থেকেই কলকাতার বাতাসে হিমেল ছোঁয়া। মেঘলা আকাশ দিনভর। সঙ্গে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি। প্রচণ্ড দাবদাহে পা দেওয়ার আগে স্বস্তির বায়ুমণ্ডল ঘুরছে শহর জুড়ে। সবুজ মেরুনও (ATK Mohun Bagan) বোধহয় এমনই স্বস্তি খুঁজছিল। এটিকে এবং মোহনবাগানের সংসারে দ্বিতীয় আইএসএল ফাইনাল। গতবার ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। এ বারও কি কম ওঠা-পড়া দেখেছেন সবুজ মেরুন ফুটবলাররা? খেই হারানোয় আইএসএলের মাঝপথে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন সমর্থকরা। হোম ম্য়াচেও ভরছিল না গ্য়ালারি। শেষ চারে পা রাখতেই বদলে গিয়েছিল ছবি। রিমুভ এটিকে দাবি, কর্তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভবিক্ষোভের মধ্যেও তৈরি হয়ে গিয়েছিল ট্রফির প্রত্যাশা। প্রীতম কোটাল, হুগো বোমাস, শুভাশিস বসুরাও স্বপ্নপূরণের জন্য নেমেছিলেন মারগাওয়ের মাঠে। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।

দু-দলের প্রথম একাদশই যেন শুরুতে চমকে দিল। বেঙ্গালুরু এফসির প্রথম একাদশে নেই সুনীল ছেত্রী। অতিরিক্ত সময়ে ম্য়াচ গড়ালে, তাঁকে লাগবে। হয়তো সে কারণেই তাঁকে রাখেননি বিএফসি কোচ। কিন্তু ৩ মিনিটের মাথায় নাক ফেটে যায় শিবশক্তি নারায়ণের। তিনি মাঠ ছাড়তেই নামিয়ে দেওয়া হল সুনীলকে। বহু যুদ্ধের সৈনিক। চাপে রাখতে জানেন বিপক্ষের রক্ষণকে। আর জানেন, আচমকাই খেলা ঘুরিয়ে দিতে। সুনীল নিরাশ করলেন না। টিম যখন প্রবল চাপে কোণঠাসা, মাঠের দখল নিয়েছে হুয়ান ফেরান্দোর টিম, তখনই পেনাল্টি থেকে ১-১ সুনীলের।

এটিকে মোহনবাগান-২ : বেঙ্গালুরু এফসি-২

(পেত্রাতোস ১৪-পেনাল্টি ও ৮৫-পেনাল্টি) (সুনীল ৪৫-পেনাল্টি, কৃষ্ণা ৭৮)

টাইব্রেকারে ৪-৩ জয় মোহনবাগানের

আইএসএল ফাইনালের শুরু থেকেই যেন আগুনে-ফুটবল নিয়ে নেমেছিল মোহনবাগান। বেঙ্গালুরু এফসির প্রাথমিক ঝড় সামলেই পাল্টা আক্রমণে গিয়েছিল ফেরান্দোর টিম। গোল পেতে সময় লাগেনি। ১৪ মিনিটে কর্নার পায় এটিকে মোহনবাগান। পেত্রাতোসের কর্নারে বক্সের মধ্যে হ্য়ান্ডবল করেন এটিকে মোহনবাগানের প্রাক্তনী রয় কৃষ্ণা। বাগানের সেটপিস স্পেশালিস্ট দিমিত্রি পেত্রাতোস পেনাল্টি থেকে ১-০ করেন। যে কোনও টিমই ফাইনালের শুরুতেই গোল খেয়ে গেলে চাপে পড়ে যায়। সেটাই হল বিএফসির ক্ষেত্রে। বোমাসদের মাঝমাঠের ছড়িয়ে খেলা, বল দখলে রাখা, দুটো প্রান্তকে চমৎকার ব্যবহার করা, বারবার বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়া। এমন কিছু কার্যকর ভূমিকা থাকলে খেলা নিয়ন্ত্রণেই থাকে। মোহনবাগান এই পর্বে আরও গোল তুলে নিতে পারত। সন্দেশ ঝিঙ্গানদের ডিফেন্স চাপ সামলাল কোনও রকমে। কে জানত, ওখান থেকেই খেলা আবার দল বদলাবে!

১৪ মিনিটে বক্সে হ্যান্ডবল করে বাগানকে গোল উপহার দেওয়া রয় কৃষ্ণাই ম্যাচে ফেরালেন টিমকে। বিরতির ঠিক আগে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়া ফিজির স্ট্রাইকারকে রুখতে গিয়ে ফাউল করেন শুভাশিস। বলের দিকে নজরই ছিল না তাঁর। পেনাল্টি থেকে গোল করে বিএফসিকে খেলায় ফেরালেন সুনীল ছেত্রী। ৭৮ মিনিটে সেই কৃষ্ণাই আবার ২-১ করলেন। রোশনের কর্নার থেকে হেডে গোল তাঁর। কৃষ্ণার মতো সুযোগ সন্ধানী স্ট্রাইকারকে কেন যে লেফটব্যাক শুভাশিস ফ্রি রেখেছিলেন, সেটাই আশ্চর্যের। এক্সট্রা টাইমেও তিনি নাম লিখিয়ে ফেলতে পারতেন স্কোরলাইনে। পাবলো পেরেজের হেডটায় যদি টোকাটা ঠিক রাখতে পারতেন, তা হলে ৩-২ করে ফেলত বিএফসি।

মোহনবাগানের এ বারের টিমে ভারসাম্য অনেক বেশি। অভিজ্ঞ ফুটবলারদের পাশাপাশি তরুণ্যও রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাগানে বেশ কয়েক জন এমন ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা হঠাৎই বদলে দিতে পারেন খেলা। হলও তাই। ৮৫ মিনিটে বড় বক্সের ঠিক সামনে ফাউল করেন জোহানোভিচ। কিন্তু ওটা পেনাল্টি ছিল কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। বড় বক্সের লাইনে ফাউল করেন পাবলো পেরেজ। কিয়ান নাসিরি পড়েন বক্সের ভিতরে। রেফারি কিন্তু পেনাল্টিই দিলেন আবার। পেত্রাতোস ফের পেনাল্টি থেকে গোল করে ২-২ করেন। এক্সট্রা টাইমের দ্বিতীয়ার্ধেই খেলাটা শেষ করতে পারতেন মনবীর সিং। পেত্রাতোসের দুরন্ত সেন্টারটা প্লেসিংয়ে ৩-২ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ড্রপ হেডে গোল করতে গিয়ে মিস করলেন।

সুযোগ তৈরি, নষ্ট— এ সব তো থাকবেই। খেলার অঙ্গ। টাইব্রেকারে যদি বিশাল কাইথের মতো কেউ ম্যাজিক দেখান, তা হলে এ সব ঢাকা পড়ে যায়। সেমিফাইনালে হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে কাইথই জিতিয়েছিলেন টাইব্রেকারে। আইএসএল ফাইনালেও তাই হল।

টাইব্রেকারের ফল

অ্যালান কোস্টা- বিএফসি (গোল)

পেত্রাতোস-মোহনবাগান (গোল)

রয় কৃষ্ণা- বিএফসি (গোল)

লিস্টন কোলাসো-মোহনবাগান (গোল)

ব্রুনো ব়্যামিরেজ-বিএফসি (বিশাল-সেভ)

কিয়ান নাসিরি-মোহনবাগান (গোল)

সুনীল ছেত্রী-বিএফসি (গোল)

মনবীর সিং-মোহনবাগান (গোল)

পাবলো পেরেজ-বিএফসি (বাইরে মারলেন)