Badru Banerjee: থেমে গেল ২৪ দিনের লড়াই, প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। গত কয়েক দিন ধরে আশঙ্কাজনক অবস্থাতেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত থেমে গেল তাঁর যাবতীয় লড়াই। ৯২ বছরে প্রয়াত ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়।

Badru Banerjee: থেমে গেল ২৪ দিনের লড়াই, প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 20, 2022 | 10:47 AM

কলকাতা: আর এক নক্ষত্র পতন ভারতীয় ফুটবলে (Indian Football)। মারা গেলেন কিংবদন্তি (Legend) ফুটবলার বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় (Badru Banarjee)। ৯২ বছর বয়স হয়েছিল তাঁর। বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৭ জুলাই ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। শুরুতে কিছুটা উন্নতি হলেও ধীরে ধীরে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। যে কারণে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল প্রাক্তন ফুটবলারকে। ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল বদ্রুকে। গত কয়েক দিন বেশ আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন বদ্রু। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। জীবনের শেষ ম্যাচে জিততে পারলেন না বদ্রু। শেষ হয়ে গেল তাঁর ২৪ দিনের লড়াই। শুক্রবার গভীর রাতে মারা গেলেন ভারতীয় ফুটবলের এক কিংবদন্তি। রেখে গেলেন তাঁর পুত্রবধূ ও নাতনিকে।

প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, সুভাষ ভৌমিক, সুরজিৎ সেনগুপ্তদের মতো কিংবদন্তি ফুটবলাররা প্রয়াত হয়েছেন কিছু দিন আগেই। বাংলার ফুটবল থেকে খসে গেল আরও এক তারকা। বদ্রুর ভালো নাম সমর বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে, ময়দান তাঁকে বরাবর চিনত বদ্রু নামেই। মিষ্টি ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন সব প্রজন্মে। কিছু দিন আগেও তাঁকে ময়দানে দেখা গিয়েছে। সেই বদ্রু নেই, বিশ্বাসই করতে পারছে না কলকাতা ময়দান।

১৯৩০ সালের ৩০ জানুয়ারি বদ্রুর জন্ম হাওড়ার বালিতে। বাবা অত্যন্ত কড়া ধাতের মানুষ ছিলেন। তাই ছেলেবেলায় পড়াশোনাতেই মন ছিল তাঁর। কিন্তু একটু বড় হতেই ময়দানের নানা গল্প ফুটবলের প্রতি আগ্রহী করে তোলে তাঁকে। স্কুল থেকে ফেরার সময় কখনও বালির হিন্দু স্পোর্টিং ক্লাব কিংবা ওয়েলিংটন ক্লাবে ফুটবল খেলতেন। সেই সময় বুট পরে খেলার চল ছিল না। কিন্তু কিশোর বদ্রু বুট পরেই খেলতেন। যে কারণে পরে যখন বুটের চল আসে, তাঁর খেলতে অসুবিধা হয়নি। ১৯৪৮ সালে, ১৮ বছর বয়সে পেশাদার ক্লাব বালি প্রতিভায় যোগ দেন। স্ট্রাইকার হিসেবে ততদিনে বেশ নামও করে ফেলেছেন বদ্রু। প্রথম মরসুমেই বড় ক্লাবগুলোর নজরে পড়ে যান। পরের মরসুমে বিএনআরে যোগ দেন। সেখানেও নিজেকে চেনাতে সময় লাগেনি তাঁর। ছিপছিপে চেহারা, তীব্র গতি, চমৎকার স্কিলের কারণে উঠতি প্লেয়ার হিসেবে জনপ্রিয়তাও পেতে শুরু করে দিয়েছিলেন। যে ক্লাবের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন বদ্রু, ৩ বছর বিএনআরে খেলে যোগ দেন সেই মোহনবাগানে। আট মরসুম খেলেছেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে।

খেলাধুলো করলেও পড়াশোনাতে কোনও দিন পিছিয়ে ছিলেন না বদ্রু। আরজি কর মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাস করেন। তা সত্ত্বেও বদ্রু ফুটবলকেই বেছে নিয়েছিলেন। আর তা নিয়ে কোনও দিন আফসোস ছিল না তাঁর। বরং বরাবর আড্ডা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ফুটবলই তো আমাকে সব দিয়েছে। না হলে বদ্রুকে কে চিনত!’

প্রথম বছর মোহনবাগানে পা দিয়েই সাফল্য পেয়ে যান। সে বার রাজস্থান ক্লাবের সঙ্গে যুগ্ম ভাবে শিল্ড জেতে মোহনবাগান। পরের বছর, ১৯৫৩ সালে প্রথম ডুরান্ড কাপ জয় সবুজ-মেরুনের। সেই মরসুমে টিমের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন বদ্রু। সেমিফাইনালে হায়দরাবাদ পুলিশের বিরুদ্ধে ২-১ জিতেছিল মোহনবাগান। জয়সূচক গোল এসেছিল বদ্রুর পা থেকে। ফাইনালে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির বিরুদ্ধে ৪-০ জয় পেয়েছিল টিম। ডুরান্ডের ফাইনালেও গোল ছিল বদ্রুর।

তাঁর ঝলমলে কেরিয়ারে ১৯৫৬ সালটা সোনা দিয়ে বাঁধানো ছিল। ওই বছর মেলবোর্ন অলিম্পিকে ভারতের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কোচ ছিলেন রহিম সাহেব। হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ওয়াকওভার পেয়েছিল ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-২ হারিয়েছিলেন বদ্রুরা। নেভিল ডি’সুজা হ্যাটট্রিক করেছিলেন ওই ম্যাচে। নেভিলের সঙ্গে বদ্রুর তালমেল ছিল অত্যন্ত ভালো। সেমিফাইনালে অবশ্য যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে হেরে যায় ভারত। অলিম্পিক ফুটবলে এখনও এটাই ভারতের সর্বোচ্চ সাফল্য।

কেরিয়া জুড়ে সাফল্য কিছু কম পাননি বদ্রু। মোহনবাগানের হয়ে কলকাতা ফুটবল লিগ জিতেছিলেন ১৯৫৪-৫৬ টানা তিন বছর। ১৯৫৯ সালেও এসেছিল জয়। শিল্ড জিতেছেন তিনবার। রোভার্স কাপ জয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৯ সালে মোহনবাগান থেকেই অবসর নিয়ে নেন। কিন্তু ফুটবল ছাড়ার পরও ফুটবল থেকে দূরে থাকেননি কোনও দিন। এক বর্ষণমুখর রাতে সেই বদ্রু চলে যাওয়ায় শোকের কালো মেঘ ময়দানে।