Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Satwiksairaj Rankireddy-Chirag Shetty: লি-হেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সা-চি, প্যারিস অলিম্পিককে পাখির চোখ

সাফল্য তো অনেকেই পান। আবার হারিয়েও যান। কিন্তু তাঁদেরই মনে রাখে খেলার দুনিয়া, যাঁরা ধারাবাহিক হতে পারেন। ইন্দোনেশিয়া ওপেনে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে চমকে দিয়েছেন সাত্বিক-চিরাগ। এই সাফল্য কি হঠাৎ? কেন লি-হেশ জুটিকে মনে করাচ্ছেন দু'জন? লিখলেন সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী।

Satwiksairaj Rankireddy-Chirag Shetty: লি-হেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সা-চি, প্যারিস অলিম্পিককে পাখির চোখ
লি-হেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সা-চি, প্যারিস অলিম্পিককে পাখির চোখImage Credit source: গ্রাফিক্স: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jun 20, 2023 | 9:00 AM

কিছু ছবি চিরকাল থেকে যায় মনে। সচিন তেন্ডুলকরের কভার ড্রাইভ। লিওনেল মেসির ফ্রি কিক। ফিনিশিং পয়েন্টের আগে উসেইন বোল্টের ফিরে দেখা। সেই তালিকায় কি জায়গা পাবে’সা-চি’র সেলিব্রেশন। এই ‘সা-চি’কারা? ‘সা’ হলেন সাত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি (Satwiksairaj Rankireddy)। ‘চি’ চিরাগ শেট্টি (Chirag Shetty)। দুই তরুণ ভারতীয় ব্যাডমিন্টন (Badminton) প্লেয়ার। সাত্বিক-চিরাগ জুটি দেশকে একের পর এক ইভেন্টে সাফল্য দিচ্ছেন। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে ভারতীয় খেলাধুলোয় উত্থান হয়েছিল এমনই এক জুটির। লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশ ভূপতি। লম্বা সময় ধরে টেনিস দুনিয়ায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। প্রায় দীর্ঘ ১৫ বছর টেনিস কোর্টে ফুল ফোটাত লি-হেশ জুটি। সেই সরণি বেয়েই যেন আর এক জুটির উত্থান হল।

ব্যাডমিন্টনের সিঙ্গলস থেকে সাফল্য এসেছে। টিম ইভেন্টেও ইতিহাস গড়েছে ভারত। কিন্তু ডাবলসে ধারাবাহিক সাফল্যের মুখে দেখা যায়নি। সাত্বিক-চিরাগ জুটি সেই অভাব পূরণ করছেন। বিশ্বমঞ্চে একের পর টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস লিখে চলেছেন সাত্বিক-চিরাগ। সদ্য ইন্দোনেশিয়া ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘সা-চি’ জুটি। ফাইনালে মালয়েশিয়ার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জুটি অ্যারন শিয়া-শোহ উই ইককে হারিয়ে চমকে দিয়েছেন দুই তরুণ। মালয়েশিয়ান জুটির বিরুদ্ধে অতীতে ৮ বার সাত্বিক-চিরাগরা। অবশেষে এল সাফল্য।

সিনেমার পর্দা হোক আর খেলার মাঠ, সফল জুটি সহজে মেলে না। লি-হেশ জুটি যে কারণে হৃদয়ে জায়গা পেয়েছিলেন। ‘সা-চি’ যেন সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প শোনাচ্ছে। টেনিস কোর্টে পয়েন্ট পেলে বুক ঠুকতেন লি-হেশ। ব্যাডমিন্টনেও তেমন আইকনিক ছবি ফুটিয়ে তুলছেন সাত্বিক আর চিরাগ। চ্যাম্পিয়ন হতেই পার্টনার সাত্বিকের কোলে উঠে পড়েন চিরাগ। কখনও দেখা যায় উল্টো ছবিটাও। গত এক দশকে ব্যাডমিন্টনে ভারত বেশ সাফল। সাইনা নেহওয়াল, পিভি সিন্ধু পদক এনেছেন অলিম্পিক থেকে। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বিদেশের নানা খেলায়। সেই খাতায় এ বার নাম তুলছেন সাত্বিক-চিরাগও। ধারাবাহিকতা যে কোনও খেলার প্রাথমিক শর্ত। তাই তুলে ধরছেন চিরাগ-সাত্বিক।

বরফ আর আগুনের কম্বিনেশন— এমনই বলা হচ্ছে সাত্বিক আর চিরাজ জুটিকে। এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা তাঁরাই বলেছেন। সাত্বিকের পছন্দের টেনিস প্লেয়ার রজার ফেডেরার। আর চিরাগের পছন্দ টেনিস প্লেয়ার রাফায়েল নাদাল। সাত্বিকের কথায়, তাঁরা যখন খেলেন তখন জুটিটাকে অনেকটা মনে হয় ফেডেরার ও নাদাল একসঙ্গে খেলছেন। ব্যাডমিন্টনে পুরুষদের ডাবলসে ভারতের অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করেছেন সাত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি।

মাত্র ৬ বছর বয়সে ব্যাডমিন্টনে হাতেখড়ি সাত্বিকের। তাঁর পার্টনার চিরাগ কোর্টে পা রাখেন ৭ বছর বয়সে। সাত্বিকের বাবা রাজ্য স্তরের ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার ছিলেন। বাবাই ছিলেন তাঁর প্রেরণা। চিরাগের কাছে প্রথম দিকে ব্যাডমিন্টন ছিল অবসর কাটানোর। ধীরে ধীরে খেলার প্রেমে পড়ে যান। ক্লাস টেনের পর চিরাগ ঠিক করেন, পেশাদার ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার হবেন। পড়াশুনাতেও ভালো ছিলেন। ভেবেছিলেন, সায়েন্স নিয়ে পড়বেন। খেলা, প্র্যাক্টিসের জন্য সায়েন্সের বদলে কমার্স নিয়ে পড়েন। স্কুল জীবনে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলতেন চিরাগ। পেশাদার অনুশীলন শুরু হয় কোচ মনীশ হোদকারের কাছে। পরে হায়দরাবাদে চলে যান। কোচ পুল্লেলা গোপীচাঁদের কাছে। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

সাত্বিক সব অর্থে ব্যাডমিন্টন পরিবারের ছেলে। বাবা ও দাদা দু’জনই ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার। বাবার কোচিংয়েই অনুশীলন করা শুরু সাত্বিকের। দ্রুত জাতীয় স্তরে সাফল্য পেতে শুরু করেন। ২০১৪ সালে সাত্বিকও যোগ দেন গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমিতে। কেরিয়ারের শুরুর দিকে সাত্বিক সিঙ্গলস ও ডাবলস, দুইই খেলতেন। পুলেল্লা গোপীচাঁদের অ্যাকাডেমিতে সাত্বিক আর চিরাগের পরিপূরক হয়ে ওঠা। ২০১৬ সালে জুটি বাঁধেন। তবে শুরুটা ভালো ছিল না। দু’জনই ছিলেন ব্যাক কোর্ট প্লেয়ার। অন্য পার্টনার নিয়ে খেলতে অভ্যস্ত ছিলেন। তাই জুটি হয়ে উঠতে পারছিলেন না। ধীরে ধীরে ছবিটা বদলে যায়। আজকের চিরাগ-সাত্বিক হতে সময় লেগেছিল আরও।

২০২২ সালের থমাস কাপ থেকে বিরাট আলোচনা শুরু হয় সাত্বিক-চিরাগ জুটিকে নিয়ে। গত বছর থেকে একের পর এক সাফল্য ধরা দিয়েছে এই জুটির হাতে। ইন্ডিয়ান ওপেন, থমাস কাপ, বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথ গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পর এ বার ইন্দোনেশিয়া ওপেনেও সফল সাত্বিক-চিরাগ জুটি। সাত্বিকের বয়স ২২। চিরাগের ২৫। এই বয়সেই ইতিহাসে তাঁরা।

এই ‘সা-চি’ জুটি ভবিষ্যতের লি-হেশ হতে চলেছেন! প্যারিস অলিম্পিকের ডাবলস থেকে যদি পদক আনতে পারেন, তা হলে এক নতুন জুটির আলোয় ভাসবে ভারতীয় খেলাধুলো! সে দিন বোধহয় খুব দূরে নয়।